ঢাকা ০৬:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা কারো বন্ধু বা শত্রু নই: হাইকোর্ট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৯:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১
  • ২০২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টিভি টকশোতে অর্থ পাচার মামলার পলাতক আসামি পিকে হালদারকে অংশ নেওয়ার সুযোগের বিষয়ে বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের বক্তব্য জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ১৭ জানুয়ারি ওই টিভি কর্তৃপক্ষকে লিখিত বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়েছে।

দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার এই আদেশ দেন। আদালত বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে আমরা কাজ করছি। কেউ আমাদের শত্রু বা বন্ধু নয়। কারো প্রতি আমাদের কোনো পক্ষপাতিত্ব নাই। আমরা আইনের গতিতে চলবো। কার গায়ে বাতাস লাগবে সেটা দেখবো না।

আদালত আরো বলেন, বিচারপতিরা একা দুর্নীতি বন্ধ করতে পারবে না। গণমাধ্যমও তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে দুর্নীতির বিষয় প্রকাশ করছে। সকলকে দুর্নীতি বন্ধে সম্পৃক্ত হতে হবে।

গত ২৮ ডিসেম্বর একাত্তর টিভির ১০টার সংবাদে এবং সাড়ে ১১টায় ‘একাত্তর জার্নাল’নামের টকশোতে অতিথি হিসেবে সরাসরি অংশ নেন সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত পিকে হালদার। যিনি বর্তমানে পলাতক অবস্থায় কানাডায় অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। ওই টকশোতে দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু যখন জানতে পারেন পিকে হালদারকে অনুষ্ঠানে অতিথি করা হয়েছে তখন তিনি ভার্চুয়ালি টকশো থেকে বের হয়ে যান। পলাতক আসামি পিকে হালদারের বক্তব্য টিভি মিডিয়ায় প্রচারের সুযোগ নাই উল্লেখ করে হাইকোর্টে আবেদন দেয় দুদক। একইসঙ্গে একাত্তর টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পরোয়ানাভুক্ত পলাতক ও দণ্ডিত আসামিদের বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বেসরকারি চ্যানেল একাত্তর টিভিতে পিকে হালদারের বক্তব্য প্রচারের ভিডিও ক্লিপ তলব করে।

এই নির্দেশনা মোতাবেক পিকে হালদারকে নিয়ে প্রচারিত টক শো ‘একাত্তর জার্নাল’ও রাত ১০টার সংবাদের ভিডিও ক্লিপ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের নিকট দাখিল করে একাত্তর টিভি কর্তৃপক্ষ। এরপরই তা পর্যবেক্ষণ করে হাইকোর্ট। পরে এ বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানির এক পর্যায়ে দুদক কৌসুলির উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, টকশোতে পলাতক আসামির সঙ্গে কথোপকথন বিশ্বের কোথাও আছে কি? দুদক কৌসুলি বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিলো। জাহালমের বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো নাটক বা সিনেমা না বানানোর জন্য আদালতের আদেশ রয়েছে। আদালত বলেন, সেখানে কি পলাতক আসামিকে নিয়ে টকশো করা যাবে না এরকম কোন আদেশ ছিলো? নিশ্চয়ই নয়। দুদক কৌসুলি বলেন, পিকে হালদারকে নিয়ে একাত্তর টিভিতে যেসব সাংবাদিক বক্তব্য রেখেছেন তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে ? টকশোতে পিকে হালদারের বিষয়টিকে জাস্টিফাই করতে লাদেনের প্রসঙ্গ এনেছেন একজন সাংবাদিক। আমি মনে করি তাদের বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করার জন্য আবেদন করছি।

আইনজীবী মোশাররফ হোসেন বলেন, একাত্তর টিভির দুটি অনুষ্ঠান দেখে আমার মনে হয়নি তারা কোর্টকে খাটো করতে চেয়েছে। যা বলেছে সরল বিশ্বাসে বলেছে। এখানে আদালত অবমাননাকর কিছু হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, বিচার বিভাগ বিচার করে। একাত্তর টিভি লিখিত বক্তব্য দাখিল করুক। পূর্ণাঙ্গ শুনানির পরই এ বিষয়ে আদালতের একটা নির্দেশনা থাকা দরকার। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল ইস্যু না করে এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দাখিলের জন্য একাত্তর টিভি কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেয়। আদালত বলেন, আমাদের দ্বার উন্মুক্ত। আমরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শুনব। প্রয়োজনে বাইরের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শুনতে বাধা নাই। আমরা দেখব অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কতদূর যেতে পারবে। কারো কোনো সংক্ষুদ্ধ হওয়ার কারণ নাই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমরা কারো বন্ধু বা শত্রু নই: হাইকোর্ট

আপডেট টাইম : ০৬:৪৯:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টিভি টকশোতে অর্থ পাচার মামলার পলাতক আসামি পিকে হালদারকে অংশ নেওয়ার সুযোগের বিষয়ে বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের বক্তব্য জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ১৭ জানুয়ারি ওই টিভি কর্তৃপক্ষকে লিখিত বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়েছে।

দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার এই আদেশ দেন। আদালত বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে আমরা কাজ করছি। কেউ আমাদের শত্রু বা বন্ধু নয়। কারো প্রতি আমাদের কোনো পক্ষপাতিত্ব নাই। আমরা আইনের গতিতে চলবো। কার গায়ে বাতাস লাগবে সেটা দেখবো না।

আদালত আরো বলেন, বিচারপতিরা একা দুর্নীতি বন্ধ করতে পারবে না। গণমাধ্যমও তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে দুর্নীতির বিষয় প্রকাশ করছে। সকলকে দুর্নীতি বন্ধে সম্পৃক্ত হতে হবে।

গত ২৮ ডিসেম্বর একাত্তর টিভির ১০টার সংবাদে এবং সাড়ে ১১টায় ‘একাত্তর জার্নাল’নামের টকশোতে অতিথি হিসেবে সরাসরি অংশ নেন সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত পিকে হালদার। যিনি বর্তমানে পলাতক অবস্থায় কানাডায় অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। ওই টকশোতে দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু যখন জানতে পারেন পিকে হালদারকে অনুষ্ঠানে অতিথি করা হয়েছে তখন তিনি ভার্চুয়ালি টকশো থেকে বের হয়ে যান। পলাতক আসামি পিকে হালদারের বক্তব্য টিভি মিডিয়ায় প্রচারের সুযোগ নাই উল্লেখ করে হাইকোর্টে আবেদন দেয় দুদক। একইসঙ্গে একাত্তর টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পরোয়ানাভুক্ত পলাতক ও দণ্ডিত আসামিদের বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বেসরকারি চ্যানেল একাত্তর টিভিতে পিকে হালদারের বক্তব্য প্রচারের ভিডিও ক্লিপ তলব করে।

এই নির্দেশনা মোতাবেক পিকে হালদারকে নিয়ে প্রচারিত টক শো ‘একাত্তর জার্নাল’ও রাত ১০টার সংবাদের ভিডিও ক্লিপ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের নিকট দাখিল করে একাত্তর টিভি কর্তৃপক্ষ। এরপরই তা পর্যবেক্ষণ করে হাইকোর্ট। পরে এ বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানির এক পর্যায়ে দুদক কৌসুলির উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, টকশোতে পলাতক আসামির সঙ্গে কথোপকথন বিশ্বের কোথাও আছে কি? দুদক কৌসুলি বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিলো। জাহালমের বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো নাটক বা সিনেমা না বানানোর জন্য আদালতের আদেশ রয়েছে। আদালত বলেন, সেখানে কি পলাতক আসামিকে নিয়ে টকশো করা যাবে না এরকম কোন আদেশ ছিলো? নিশ্চয়ই নয়। দুদক কৌসুলি বলেন, পিকে হালদারকে নিয়ে একাত্তর টিভিতে যেসব সাংবাদিক বক্তব্য রেখেছেন তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে ? টকশোতে পিকে হালদারের বিষয়টিকে জাস্টিফাই করতে লাদেনের প্রসঙ্গ এনেছেন একজন সাংবাদিক। আমি মনে করি তাদের বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। তাদের বিরুদ্ধে রুল জারি করার জন্য আবেদন করছি।

আইনজীবী মোশাররফ হোসেন বলেন, একাত্তর টিভির দুটি অনুষ্ঠান দেখে আমার মনে হয়নি তারা কোর্টকে খাটো করতে চেয়েছে। যা বলেছে সরল বিশ্বাসে বলেছে। এখানে আদালত অবমাননাকর কিছু হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, বিচার বিভাগ বিচার করে। একাত্তর টিভি লিখিত বক্তব্য দাখিল করুক। পূর্ণাঙ্গ শুনানির পরই এ বিষয়ে আদালতের একটা নির্দেশনা থাকা দরকার। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল ইস্যু না করে এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দাখিলের জন্য একাত্তর টিভি কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেয়। আদালত বলেন, আমাদের দ্বার উন্মুক্ত। আমরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শুনব। প্রয়োজনে বাইরের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শুনতে বাধা নাই। আমরা দেখব অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কতদূর যেতে পারবে। কারো কোনো সংক্ষুদ্ধ হওয়ার কারণ নাই।