দ্বীনের চেতনায় উদ্ভাসিত হোক মুমিনের অন্তর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বিদায়ী বর্ষের শেষ দিন নানা আয়োজন হয়ে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশেও বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নামের এমন উদযাপন আমাদের দেশীয় বা ধর্মীয়- কোনো সংস্কৃতিতেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন অনেকে।

পশ্চিমা দেশগুলোর অনুসরণে বাংলাদেশে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ ছাড়াও ইদানীং বিভিন্ন কালচারের প্রসার ঘটছে।

এসব দিবস আসলেই ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ফতোয়া বা মাসয়ালা প্রচার হতে দেখা যায়।

উম্মতকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে এভাবে আহ্বান অবশ্যই প্রশংসার বিষয়। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্মীয় বোধ-উপলব্ধি বিনির্মাণের সুচিন্তিত কোনো কাজ না করে এভাবে শুধু ফতোয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে কতটুকু দ্বীনের পথে আনা যাবে, বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

করোনা সংক্রমণের এবার নববর্ষকে ঘিরে যে কোনো আয়োজনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল।

কিন্তু বিবিসি জানিয়েছে, ‘ঢাকায় থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঘরের বাইরে উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজনে কারও অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণেই, কিন্তু তাতে থামিয়ে রাখা যায়নি মানুষের অতি উৎসাহকে।

রাত ঠিক বারোটায় আতশবাজির ঝলকে রঙিন হয়ে উঠেছিল ঢাকার আকাশ, পাশাপাশি পটকার শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা।

এবার নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছিল মানুষের বাসা-বাড়ির ছাদকেও। কিন্তু অনেকেই ছাদে বারবিকিউ পার্টিসহ পারিবারিক নানা আয়োজন করেছেন। আবার সাধারণ মানুষের আয়োজন নিষিদ্ধ থাকলেও তারকা হোটেলগুলোতে পার্টি, ডিসকোসহ নানা আয়োজনে অংশ নিয়েছে উচ্চবিত্তের অসংখ্য মানুষ।’

পশ্চিমা ধারায় বর্ষবরণের উন্মাতাল উদযাপন নিয়ে সাধারণ মানুষের এমন আগ্রহ আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।

সাধারণ মানুষের দ্বীনি চেতনা যেভাবে বিগড়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে আলেমদের এখনই ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন। আইন বা ভয় দেখিয়ে যে মানুষকে কোনো কাজ থেকে বিরত রাখা যায় না, বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আমরা তা সরাসরি দেখতে পাচ্ছি।

এমন পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে দ্বীনি চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

কারণ স্বভাবগতভাবেই মানুষ অনুকরণপ্রিয়, আমরা যদি উম্মতের সর্বস্তরে দ্বীনি আবহ সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলে বিজাতীয় সংস্কৃতি শেকড় গেড়ে বসবেই।

ওয়াজ-মাহফিলসহ দ্বীন প্রচারের যত ধারা প্রচলিত রয়েছে, সবখানেই এক ধরনের শূন্যতা ও সুচিন্তিত কর্ম-কৌশলের অভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষত গত কয়েকবছরে মাহফিলের ধরন অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে বলে মনে করছেন আলেমরা।

বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়াও অদ্ভুত সব বিষয় দেখা যাচ্ছে মাহফিলের মঞ্চগুলোতে। বিষয়বস্তুহীন উত্তেজক বয়ানের মাধ্যমেও ক্ষুণ্ন হচ্ছে ওয়াজের চিরায়ত ধারা।

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এসব বিষয় এখন সবাই দেখতে পায়, ফলে ইউটিউবে ওয়াজ সার্চ দিলেই চলে আসছে নিজেদের মধ্যকার বিরোধ ও পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা।

সামগ্রিকভাবে উম্মতের দ্বীনি মেজাজ গঠন ছাড়া শুধু হালাল-হারামের ফতোয়া দিয়ে মানুষকে যে দ্বীনের পথে আনা যাবে না, সচেতনতার সঙ্গে বিষয়টি এখনই আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

সম্প্রতি ভাস্কর্য ইস্যু বিষয়টি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আলেমদের পারস্পরিক কাদা ছোড়াছোড়ি ও সমন্বয়হীনতা সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটুকু প্রভাব ফেলছে, সেটিও চিন্তার বিষয়।

আজকের সময়ে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলামের পথে আগমনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের আমল-আখলাকই বড়ো প্রতিবন্ধক বলে অনেকে দাবি করেন।

মুসলমানরা নিজেদের অবস্থান ঠিক করলে অবশ্যই আল্লাহর দেওয়া অঙ্গীকারগুলো প্রতিফলিত হবে।

এ জন্য ইমান-আমলসহ মৌলিক বিষয়গুলোতে এখনই বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া সময়ের অপরিহার্য দাবি।

যেমন, কুরআন-সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, তাকওয়া ও আল্লাহর ভয়-ভীতিকে অবলম্বন করা, খারাপ কাজগুলো ছেড়ে দেওয়া, কল্যাণ ও সত্য কাজে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া, কুরআনকে দৃঢ়তার সঙ্গে ধারণ করা। এসব কাজ যদি করা যায়, তাহলে হাদিসের ভাষ্যমতে মুসলমান কখনই ব্যর্থ হবে না।

ইসলাম একটি দাওয়াতমুখী ধর্ম। এ উম্মতের প্রতিটি সদস্যই এক একজন দাঈ বা দূত।

নবীর দেখানো পদ্ধতীতে দাওয়াতের মানসিকতায় উম্মাহর মাঝে ইমানি চেতনাবোধ জাগ্রত করাই এখন আলেমদের বড় কর্তব্য।

কারণ বিধর্মীদের লোভনীয় দাওয়াত ও অব্যাহত প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষের দ্বীনি চেতনা বিনষ্ট হওয়ার পথে। উম্মাহর দ্বীনি মেজাজ গঠনে তাদের উদ্বুব্ধ করাই এখনকার সবচেয়ে বড় কর্তব্য ও সময়ের দাবি।

লেখক: তরুণ আলেম ও চিন্তক

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর