চলতি অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে দাতাদের অর্থছাড় বেড়েছে। আর এই ধারা চলে আসছে গত দশ মাস (জুলাই-এপ্রিল) ধরে। এ সময়ে অর্থছাড় হয়েছে মোট ২৩৮ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।
পরিকল্পনা কমিশনের ফরেন এইড বাজেট ও অ্যাকাউন্টস (ফাবা) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থছাড়ের পরিমাণ চলতি অর্থবছরে আরো বাড়বে। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সাম্প্রতিক সময়ে দাতাদের অর্থছাড় বেড়েছে এবং চলতি অর্থবছরে আরো বাড়তে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকলেও তা দাতাদের অর্থছাড়ে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের দশ মাসে দাতাদের অর্থছাড় হয়েছে মোট ২৩৮ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১৯১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার, অনুদান ৪৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে দাতারা অর্থছাড় করেছিল ২৩৬ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১৭৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৬২ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছর থেকেও অর্থছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে চলতি অর্থবছরে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) দাতারা ছাড় করেছিল ২১৮ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ১৭৯ কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৩৮ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। এ হিসেবে গত এক মাসের ব্যবধানে অর্থছাড় বেড়েছে ২০ কোটি ডলারের বেশি, যা ইতিবাচক।
ইআরডির হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দাতাদের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমেছে। চলতি অর্থবছরে ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৬ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল ৮০ কোটি ৩৭ লাখ এবং সুদ ১৬ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
এরমধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশ সরকার দাতাদের মোট ঋণ পরিশোধ করেছে ৮৬ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল হচ্ছে ৭১ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ১৪ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। পরে অর্থাৎ এপ্রিল মাসে ঋণ পরিশোধ হয়েছে ১০ কোটি ডলারের বেশি ।
এর আগে অর্থাৎ গত অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ১০৮ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল ৯১ কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রতিশ্রুতি এসেছে ২৫৫ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৪৫ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার।
আলোচ্য সময়ে প্রাপ্ত প্রতিশ্রুতির মধ্যে ঋণের পরিমাণ ২১৮ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। আর অনুদান ৩৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।
গত অর্থবছরের একই সময়ে যে প্রতিশ্রুতি এসেছিল এর মধ্যে ঋণ ছিল ২৯৭ কোটি ৯৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার।
এছাড়া গত মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৪২ কোটি ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ২৩১ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৩৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এ হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে প্রতিশ্রুতির পরিমাণও বেড়েছে।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অর্থবছরের শেষের দিকে প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে বলে আশা করছি। দাতারা বিভিন্ন নতুন নতুন ক্ষেত্রে অর্থায়ন করতে আগ্রহও প্রকাশ করছে। এরমধ্যে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সংস্থাটির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। একই সঙ্গে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও সহায়তা করবে সংস্থাটি। তাই বলা যায়, চলমান প্রক্রিয়ায় দাতাদের কোনো নেতিবাচক মনোভাব নেই।’
দাতাদের প্রতিশ্রুতি কমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থছাড়ের মতো প্রতিশ্রুতিও বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।’