জামালপুরে চরাঞ্চলে আশার আলো জাগিয়েছে ভুট্টা চাষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  ভুট্টা এখন অধিক লাভজনক একটি ফসল। জামালপুর জেলার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে শুধুই ভুট্টা চাষ করেছেন কৃষকরা। কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জনের ফলে দিন দিন এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় ১১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করার কথা জানালেও উৎপাদনের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

কৃষিবিদদের দাবি জেলার সরিষাবাড়ী, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ ও সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ব্যাপক আকারে ভুট্টার চাষ করা হয়। অল্প দিনে কম খরচে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় ভুট্টা চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। কম পুঁজি, ঝুঁকিহীন, সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা থাকায় কৃষকদের মাঝে ভুট্টা চাষের প্রতিযোগিতা চলছে।

সরেজমিনে সরিষাবাড়ির আওনা, কুলপাল ও ঘুইঞ্চার চরের বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায়, কৃষকরা ভুট্টা ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভুট্টার বীজ রোপণ করছেন। অনেকে রোপা আমন ধান কেটে জমি প্রস্তুত করছেন ভুট্টা চাষের জন্য। গত বছর আষাঢ়ে ভুট্টা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ওইসব জমিতে আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন তারা।

আওনা ইউপির ঘুইঞ্চার চরের রফিকুল, রবিউল, লেবু, কালাম, ছালাম, ছাইফুল, সেজাব, দুদু, সুলতান, দুলাল, ঠান্ডু, ফজলু, মকবুলসহ সবাই কম বেশি আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন। তারা জানান, যেসব জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ করা হয়েছিল, সেসব জমির ধান কেটে ভুট্টা চাষ করা হচ্ছে। মাটি একটু শুকালেই ভুট্টার বীজ রোপণ করা হবে।

ভুট্টা চাষি হানিফ উদ্দিন জানান, ভুট্টা চাষ চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। গত বছর যমুনার চরাঞ্চলে ব্যাপক হারে ভুট্টা চাষ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে। এ বছর অধিক পরিমাণ আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন।

আওনা চরের আজিজুল হক জানান, পানিতে পাট তলিয়ে নষ্ট হয়েছিলো। ওই জমিতে ধান রোপণ করা সম্ভব হয়নি। তাই আগাম ভুট্টা চাষ করছি। কিছুদিন পরই থোড় বের হবে। দুইবার কীটনাশক দিয়েছি। এখন আর ঝুঁকি নেই।

রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর প্রতি বিঘাতে তার ৫০ মণ হারে ভুট্টা হয়। প্রতি বিঘাতে খরচ হয়েছিল সাড়ে ৯ হাজার টাকা। আগাম জাতের ভুট্টা তুলে ৮৩০ টাকা মণ বিক্রি করেছিলেন। তবে দেশ লকডাউনের কবলে পড়লে অনেক কৃষক ৭০০ থেকে ৭৬০ টাকা মণ দরে ভুট্টা বিক্রি করেন।

ঘুইঞ্চার চরের চাষি বিটল জানান, ভুট্টার ক্ষেতে সেচ দেয়া খুবই জরুরি। কখনো মাটি শুকাতে দেয়া যাবে না। সার ও পানি ঠিক মতো দিতে পারলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। ভুট্টা চাষে কোনো ক্ষতি নেই, পুরোটাই লাভ।

একই গ্রামের আবুল কালাম জানান, পোকা সাধারণত ভুট্টা গাছের মূল ও কাণ্ড কেটে নষ্ট করে দেয়। কখনো কখনো ছোট থাকা অবস্থায় মূল গাছ কেটে দেয়। এতে পুরো গাছটি মরে যায়। এ বছর পোকার আক্রমণ বেশি।

সরিষাবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভুট্টা চাষে কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষক অন্য ফসলের চেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করেছেন। এ বছর আগাম জাতের ভুট্টা পোকার আক্রমণ ছিল। কৃষকরা সময় মতো কীটনাশক স্প্রে করে সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন। তাছাড়া ভুট্টার পাতা গো-খাদ্যের সংকট দূর করে ডাটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় কৃষক ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে আবাদ করছেন।

জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, গত বছর জেলায় আশানুরূপ ভুট্টার চাষ করা হয়েছিল। এ বছর আগাম জাতের ভুট্টায় পোকার আক্রমণ হয়েছে। তবে তা সময় মতো প্রতিরোধ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর