হাওর বার্তা ডেস্কঃ জালিয়াতি, প্রতারণা ও স্বার্থ হাসিলে গোল্ডেন মনিরের বড় অস্ত্র ছিল বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি রাজনীতিক, বড় প্রভাবশালী আমলা, রাজউকের কর্মকর্তা এবং তেজগাঁওয়ের ভূমি কর্মকর্তাদের দিয়ে বাগিয়ে নিতেন প্লট ও টেন্ডার। কাউকে ওই গাড়িগুলো মনির দিয়েছেন স্থায়ীভাবে, কাউকে চুক্তিভিত্তিক আবার কাউকে কাজ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করতে দিতেন। তার কব্জায় থাকা ১৬টি গাড়ি ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে কোনো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ব্যবহার করতেন। দামি গাড়িগুলোর মধ্যে প্রাডো, হ্যামার ও টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি রয়েছে। মনির গাড়ি কেনার পর কোনোটিরই রেজিস্ট্রেশন করতেন না। গাড়িগুলো দাপটের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চষে বেড়াতো। ওই গাড়ি ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা গোল্ডেন মনির গ্রেপ্তার হওয়ার পর গাড়িগুলো অন্য স্থানে রেখেছেন।
কেউ কেউ লুকানোর চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি গাড়িগুলোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে এও স্বীকার করেছেন যে, একজন বড় ছাত্রনেতাকে কাজ উদ্ধারের জন্য চুক্তিতে একটি গাড়ি দিয়েছেন। সেটিও রেজিস্টেশনবিহীন। পরে ওই ছাত্রনেতা তাকে গাড়িটি ফেরত দেননি বরং সেটি বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই ছাত্রনেতা এখন বিদেশে থাকেন।
মামলার তদন্তের মুখ্য সমন্বয়কারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি মো. মশিউর রহমান মানবজমিনকে জানান, ১৮ দিনের দীর্ঘ রিমান্ড। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্তের পর তার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ ব্যবসা, স্বর্ণ পাচার, রাজউকে জালিয়াতি, দলিল জাল করে জমি বিক্রয় ও অ্যালকোহলের ব্যবসা করে অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণের অর্থ আয় করেছেন মনির। এরপর থেকেই তিনি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করা শুরু করেন। আর এ গাড়িকে তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। মনির ঢাকা মেট্রো-ক (২১-১২১৩), ঢাকা মেট্রো-ড (২০-১২২১), ঢাকা মেট্রো-চ (২১-২৩২২), ঢাকা মেট্রো-ব (২৬-১৩-১২), ঢাকা মেট্রো-চ (২৬-১৩১৪), ঢাকা মেট্রো-ক (২৬-১২১১), ঢাকা মেট্রো-গ (২২-১৩৪৪), ঢাকা মেট্রো- ক (২৩-১৩৪৫), ঢাকা মেট্রো-ক (১১-১২১৩), ঢাকা মেট্রো-ক (০২-১২২২) এবং ঢাকা মেট্রো-ড (২৪-৪৫১২), ঢাকা মেট্রো-ক (০১-৩২৪৫), ঢাকা মেট্রো-ক (২২-০১০২), ঢাকা মেট্রো-ক (২২-৪৫০২), ঢাকা মেট্রো-ক (০১-২২০৯) ও ঢাকা মেট্রো-ক (২৪-০২-০৯)। এমন ভুয়া নম্বর দিয়ে গাড়িগুলো চালাতেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা পরীক্ষা করে দেখেছে এই সবক’টি নম্বরই ভুয়া। বিআরটিএতে এসব গাড়ির কোনো রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি।
তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, গত চার বছরে প্রায় ৬টি গাড়ি কিনেছেন তিনি। সেইগুলোও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কেনা। নিলামে ওই ৬টি গাড়ি কিনেছেন তিনি। নিলামে যাতে সস্তা পান সেজন্য মোটা অঙ্কের টাকা চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক কর্মকর্তাকে দিয়েছেন। সূত্র জানায়, মনির তার ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের ৩টি গাড়ি রাজউকের কর্মকর্তাকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যারা তাকে প্লট বাগিয়ে দেয়ার কাজে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়াও তার একটি গাড়ি ঢাকার এক কাউন্সিলর ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই গাড়ি উদ্ধারের জন্য অভিযান চালালেও এখনো পর্যন্ত সেই গাড়ি উদ্ধার করতে পারেনি। সূত্র জানায়, দলিল জালিয়াতির জন্য তেজগাঁও ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তাকে তিনি গাড়ি উপহার দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা ভূমি অফিসের কেরানি থেকে কোটিপতি বনে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার নাম জানতে পেরেছে। মনির গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন। তাকে ধরার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।