হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর মানেই জল আর আকাশের মিতালি। জলরাশি আর জোছনার মাখামাখি। ঢেউয়ে ঢেউয়ে সূর্যের ঝিলিক। এক সময় হাওরের সৌন্দর্য মানে ছিল জল-জোছনার খেলা। সম্প্রতি প্রকৃতির এ রূপ-সাগরে যুক্ত হয়েছে ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম অল ওয়েদার সড়ক। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পর্যটনের নতুন জায়গা হিসেবে স্থান পেয়েছে এ সড়ক। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন এখানে।
৮ অক্টোবর সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাওরবাসীর এ স্বপ্নের সড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করা হয়।
হাওরবাসীর কষ্ট লাঘবে সড়কটি নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের লক্ষ্যে এ অল ওয়েদার সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কিশোরগঞ্জের পূর্ব প্রান্তে বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা নিয়ে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার অবস্থান। হাওর অধ্যুষিত এ তিন উপজেলা বছরের অর্ধেকের বেশি সময় জলমগ্ন থাকায় অনগ্রসর ও দুর্গম হিসেবে পরিচিত ছিল। এসব উপজেলায় সড়ক যোগাযোগের কোনো উপায় ছিল না বললেই চলে। এ কারনে বর্ষাকাল ও শুষ্ক মৌসুমে তিনটি উপজেলার জনগণ অবর্ণনীয় কষ্টের সম্মুখীন হতো।
৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অল ওয়েদার সড়কটি ইটনা উপজেলা সদর থেকে শুরু হয়ে ধনু ও বাউলাই নদীর সমান্তরালে বিস্তীর্ণ হাওরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে মিঠামইন উপজেলা সদর হয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা সদরে গিয়ে শেষ হয়েছে। বর্ষায় হাওরের স্রোত যেন সড়ক ও বাঁধের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সড়কের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যে দুই পাশের স্লোপে সিসি ব্লক দিয়ে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক-বাঁধের স্থায়িত্বের জন্য টো-ওয়াল বরাবর সিসি ব্লক দিয়ে ফলিং অ্যাপ্রোনের কাজ করা হয়েছে।
বর্ষায় দুই পাশের গ্রামে নৌপথে যাতায়াতের লক্ষ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমিতে যেন সেচ কাজ বাধাগ্রস্ত না হয় এবং হাওরের উৎপাদিত ফসল যেন সড়কের নিচ দিয়ে অনায়াসে পরিবহন করা যায়, সেজন্য সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
সদ্য নির্মিত ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি এরইমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে হাওরের বিস্ময় হিসেবে। সড়কটি নির্মিত হওয়ায় অনুন্নত হাওর এলাকায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সড়কটিতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। এতে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানও বেড়েছে।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম জানান, সড়কটি আরো দৃষ্টিনন্দন করতে দুইপাশে গাছপালা লাগানোর পৃথক আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
কিশোরগঞ্জের এসপি মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হাওরে ট্যুরিস্ট পুলিশের দুটি ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ডিসি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বললেন, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণের পর এ এলাকায় পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা বেড়েছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছেন। পর্যটনের সুবিধা বাড়াতে আরো পরিকল্পনা করছে প্রশাসন।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, সারা বছর চলাচলের উপযোগী ‘অল ওয়েদার’ সড়কটি নির্মিত হওয়ায় স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত হয়েছে পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে এই হাওর।