ঢাকা ০১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওমেগা-৩-৬-এর উৎস তিসি উদ্ভিদের ঔষধি গুণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৩৯:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ২৫০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভেষজ তিসি উদ্ভিদ আয়ুর্বেদে মহৌষধি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। প্রাকৃতিক তিসি উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম হলো লিনাম ইউটিটাটিসিমাম। তিসি তেল ও আঁশ উৎপাদনকারী গুল্ম। পশ্চিমা বিশ্বে সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত তিসির বীজ।

তিসি উদ্ভিদের ফুল নীল, সাদা বা হালকা গোলাপী হয়। প্রতিটা ফুলে পাঁচটি করে পাপড়ি থাকে। ভোর বেলা ফুল ফোটে এবং বিকালে ঝড়ে যায়। তিসির গাছ খুব সুন্দর তাই এটা কখনো কখনো বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য রোপণ করা হয়।

কান্ডের বাকল বা ছাল থেকে আঁশ তৈরি হয়। আঁশ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের কান্ড পানির নিচে ৭-২১ দিন রেখে আঁশ সংগ্রহ করা হয়। জাগ দেওয়া ও আঁশ সংগ্রহ, পাট হতে আঁশ সংগ্রহের মতো। এর আঁশ দিয়ে লিনেন কাপড় বানানো হয়।

তিসির বীজ গুঁড়া করে খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। তিসি উদ্ভিদের খয়েরি সোনালী রঙের বীজ থেকে তেল হয়।

প্রাচীনকাল থেকেই শরীরকে সুস্থ এবং রোগমুক্ত রাখতে তিসি বীজের ব্যবহার হয়ে আসছে। তিসি বীজের উপকারিতা প্রচুর। একাধিক গবেষণা অনুসারে জানা যায় মাত্র এক চামচ তিসি বীজ খেলেই শরীরে প্রবেশ করে প্রায় ১.৩ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৯ গ্রাম ফাইবার, ১.৫৯৭ এমজি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, দৈনিক চাহিদার ৮ শতাংশ ভিটামিন বি১, ২ শতাংশ ভিটামিন বি৬, ২ শতাংশ ফলেট, ২ শতাংশ আয়রন, ৭ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ২ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৪ শতাংশ ফসফরাস এবং ২ শতাংশ পটাশিয়াম। এই উপাদানগুলো শরীরে প্রবেশ করলে ছোট-বড় একাধিক রোগব্যাধি ধারে কাছে ঘেঁষার সাহসই পায় না।

তিসি বীজ ও কাঁচা তেল মস্তিষ্কের খাদ্য ওমেগা ৩ ও ৬ এর উৎস। ওমেগা ফ্যাটি এসিড মূলত প্রাণীজ উৎস থেকে আসে কিন্তু তিসি উদ্ভিজ উৎস; যেটা সাধারণত পাওয়া যায় না। এতে আছে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড, যেটা হজমের মাধ্যমে শরীর ইকোসাপেনটায়েনিক অ্যাসিড ও ডকোসাডেক্সায়োনিক অ্যাসিড তৈরি করে।

তিসি থেকে যে ওমেগা পাওয়া যায় সেটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। বিশেষ করে ওমেগা ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরে তৈরি হয়না, এটা খাদ্যের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি। মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের প্রধান উপাদেয় খাদ্য এই ফ্যাটি এসিড। দেহের লুকায়িত ইনফেকশন ও ইনফ্লামেশন কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তিসি বীজ। ওমেগার ঘাটতি আজকের ব্যাপক হারে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মের জন্য দায়ী। দুর্বল স্বাস্থ্যের অন্যতম দিক হলো চুল এবং ত্বক। ক্যানসার রোগীদের এজন্য চুল পড়ে যায়। চামড়ার উপরের অংশ শুকিয়ে খসে পড়ে। এসব মূলত শরীরের অন্যান্য ঘাটতি পূরণ ও ভালো চর্বির অভাবে হয়। সেসব অভাব পূরণ করে তিসি বীজ।

তিসির বীজে থাকা ওমেগা ৩ ও ৬ চামড়ার নতুন কোষ জন্ম গ্রহণে সহায়তা করে। সাধারণত ত্বকের উপরের ৭টি কোষের লেয়ার মৃত। তাই তেল শোষণ করে চকচকে হয় এবং মৃত কোষ ফেলে দিয়ে তেল থেকে পুষ্টি নিয়ে নতুন কোষ জন্ম দিতে থাকে। তাই তিসি বীজের মধ্যে থাকা ওমেগার গুরুত্ব অপরিসীম।

তিসি বীজের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতা

ডায়াবেটিস রোগীদের তাদের ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন নেই, যদি এই তিসি সেবন করে থাকেন দৈনিক অন্তত ১৫ থেকে ২০ গ্রাম। আর যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা যদি এটি গ্রহণ করেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।

শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে তিসি। খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং অতিরিক্ত মেদও দূর করে।

তিসি আমাদের হৃৎপিণ্ডকে সবল রাখতে কাজ করে। হার্টের ব্লক এবং হার্টবিট স্বাভাবিক রাখতেও অনেক সাহায্য করে।

তিসির বীজের আমিষ খুব উঁচু মানের, এতে আছে প্রচুর আরজিনিন নামক এমিনো এসিড, এস্পার্টিক এসিড এবং গ্লুটামিক এসিড। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে তিসির বীজের আমিষ ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতার উন্নয়ন, কোলেস্টেরল কমাতে এবং টিউমার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা খাদ্য তালিকায় তিসি বীজ রাখতে পারেন। প্রতিদিন দুই চামচ তিসির পাউডার এর জন্য যথেষ্ট। এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও এমাইনো এসিড বিপি কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এই বীজ দিয়ে চা করে খেলেও রক্তের প্রেসার স্বাভাবিক থাকবে।

তিসি বীজ মহিলাদের স্তন, প্রোস্টেট, ওভারিয়ান এবং কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে। তিসি বীজে থাকা ৩ ধরনের লিগ্নান্স, দেহে থাকা হরমোনের প্রাকৃতিক ভারসাম্যতা বজায় রাখে যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। গ্যাস্ট্রিক ও আলসার দূর করে এবং অ্যাজমা থেকে রক্ষা করে।

যারা তামাক বা অন্য নেশায় আক্রান্ত তাদের জন্য তিসি খুবই উপকারী। এটি নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিন খাওয়ার পর অল্প পরিমাণ তিসি চাবালে দ্রুত নেশা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

গবেষণায় জানা গেছে, তিসি আমাদের শরীরের এইচডিএল (ভালো কোলেস্টোরাল) বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টোরালকে কমায়। অর্থাৎ এটি আমাদের কোলেস্টোরালকে নিয়ন্ত্রণ করে।

তিসি আমাদের হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করে। মেজাজ ফুরফুরে রাখতেও সাহায্য করে।

এটি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম লেভেল বাড়ায়। হাড় ও শরীরের জয়েন্টগুলো সুস্থ রাখে। যার ফলে বৃদ্ধ বয়সে হাড্ডিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

তিসির বীজ মেয়েদের মেনোপোজের সময় ব্যথা দূর করতেও অনেক উপকারী।

প্রতিদিন ২ গ্লাস পানিতে ৩ চা চামচ তিসি গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।

তিসির বীজ কাটাবে চর্বি। ওজন নিয়ন্ত্রণে সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় তিসির বীজ রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ওজন কমাতেও এটি ভূমিকা রাখে।

তিসির বীজ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সালাদে তিসির বীজের তেল মিশিয়ে খাওয়া যায়। গুঁড়া তিসির বীজ দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। রান্নার সময় ব্যবহার করা যায়। গবেষকদের মতে প্রতিদিন ৫ টেবিল চামচ (৫০ গ্রাম) এর কম তিসির বীজ খাওয়া উচিৎ।

তিসি আমাদের চুল ও ত্বকের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি মুখের বলিরেখা প্রতিরোধ করে, চুল পড়া রোধ করে, ত্বককে মসৃণ রাখে, ত্বক উজ্জ্বল রাখে, যৌবন ধরে রাখে। এটি ব্রণ ও যেকোন চামড়া জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে। এটি মাথায় খুশকি হতে দেয় না এবং মাথার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ঠিক রাখে।

এছাড়া রং করা ছাড়াই ঝকঝকে কালো চুল পেতে পারেন তিসি বীজের তেলে তৈরি মিরাকেল ড্রিঙ্ক বানাতে পারেন ঘরে বসেই। এই ‘মিরাকেল ড্রিঙ্ক’ দিনে তিন থেকে চার বার এক চা চামচ করে খাওয়ার আগে খেতে হবে, মাস তিনেকের জন্য। তা হলেই এর ফল পাবেন। কীভাবে তৈরি করতে হবে চুল কালো রাখার সেই ‘মিরাকেল ড্রিঙ্ক’—

উপকরণ

পাতিলেবু: ৫টি

রসুন কোয়া: ৫টি

মধু: ১ কাপ

তিসি বীজের তেল: ১ কাপ

পদ্ধতি

সব কিছু এক সঙ্গে ব্লেন্ডারে দিয়ে দিন। লেবুর ছাল না ছাড়ালেও অসুবিধা নেই। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে তা একটি কাঁচের জারে ঢেলে রাখুন। যারা এই মিশ্রণ ব্যবহার করেছেন, তারা উপকার পেয়েছেন। তাদের মতে, শুধু কালো চুলই নয়, মিশ্রণ খাওয়ার ফলে তাদের দৃষ্টিশক্তিও ভাল হয়েছে।

তবে গর্ভাবস্থায় তিসি খাওয়া উচিত নয়। এতে মা এবং বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গর্ভবতী নারীদের এই প্রাকৃতিক উপাদানটি খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা।

তিসির উপকারী গুণ বলে শেষ কেরা যাবে না। প্রতিদিনের ডায়েটে খাদ্য তালিকায় তিসি বীজ নিয়মিত রাখতে পারেন।

বাংলাদেশে পাটের পর তিসি অর্থকরী ফসল। অর্থনীতিতে তিসির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তিসি বাংলাদেশে শণ নামেও পরিচিত। আমাদের এই দেশে রবিশস্য হিসেবে খুলনা, যশোর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলায় তিসি উদ্ভিদ বেশি চাষ হয়। অপরিচিত অজানা মহৌষধি তিসি উদ্ভিদ বাংলাদেশ থেকে যেন বিলুপ্ত না হয়ে যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ওমেগা-৩-৬-এর উৎস তিসি উদ্ভিদের ঔষধি গুণ

আপডেট টাইম : ০২:৩৯:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভেষজ তিসি উদ্ভিদ আয়ুর্বেদে মহৌষধি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। প্রাকৃতিক তিসি উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম হলো লিনাম ইউটিটাটিসিমাম। তিসি তেল ও আঁশ উৎপাদনকারী গুল্ম। পশ্চিমা বিশ্বে সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত তিসির বীজ।

তিসি উদ্ভিদের ফুল নীল, সাদা বা হালকা গোলাপী হয়। প্রতিটা ফুলে পাঁচটি করে পাপড়ি থাকে। ভোর বেলা ফুল ফোটে এবং বিকালে ঝড়ে যায়। তিসির গাছ খুব সুন্দর তাই এটা কখনো কখনো বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য রোপণ করা হয়।

কান্ডের বাকল বা ছাল থেকে আঁশ তৈরি হয়। আঁশ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের কান্ড পানির নিচে ৭-২১ দিন রেখে আঁশ সংগ্রহ করা হয়। জাগ দেওয়া ও আঁশ সংগ্রহ, পাট হতে আঁশ সংগ্রহের মতো। এর আঁশ দিয়ে লিনেন কাপড় বানানো হয়।

তিসির বীজ গুঁড়া করে খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। তিসি উদ্ভিদের খয়েরি সোনালী রঙের বীজ থেকে তেল হয়।

প্রাচীনকাল থেকেই শরীরকে সুস্থ এবং রোগমুক্ত রাখতে তিসি বীজের ব্যবহার হয়ে আসছে। তিসি বীজের উপকারিতা প্রচুর। একাধিক গবেষণা অনুসারে জানা যায় মাত্র এক চামচ তিসি বীজ খেলেই শরীরে প্রবেশ করে প্রায় ১.৩ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৯ গ্রাম ফাইবার, ১.৫৯৭ এমজি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, দৈনিক চাহিদার ৮ শতাংশ ভিটামিন বি১, ২ শতাংশ ভিটামিন বি৬, ২ শতাংশ ফলেট, ২ শতাংশ আয়রন, ৭ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ২ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৪ শতাংশ ফসফরাস এবং ২ শতাংশ পটাশিয়াম। এই উপাদানগুলো শরীরে প্রবেশ করলে ছোট-বড় একাধিক রোগব্যাধি ধারে কাছে ঘেঁষার সাহসই পায় না।

তিসি বীজ ও কাঁচা তেল মস্তিষ্কের খাদ্য ওমেগা ৩ ও ৬ এর উৎস। ওমেগা ফ্যাটি এসিড মূলত প্রাণীজ উৎস থেকে আসে কিন্তু তিসি উদ্ভিজ উৎস; যেটা সাধারণত পাওয়া যায় না। এতে আছে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড, যেটা হজমের মাধ্যমে শরীর ইকোসাপেনটায়েনিক অ্যাসিড ও ডকোসাডেক্সায়োনিক অ্যাসিড তৈরি করে।

তিসি থেকে যে ওমেগা পাওয়া যায় সেটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। বিশেষ করে ওমেগা ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরে তৈরি হয়না, এটা খাদ্যের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি। মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের প্রধান উপাদেয় খাদ্য এই ফ্যাটি এসিড। দেহের লুকায়িত ইনফেকশন ও ইনফ্লামেশন কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তিসি বীজ। ওমেগার ঘাটতি আজকের ব্যাপক হারে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মের জন্য দায়ী। দুর্বল স্বাস্থ্যের অন্যতম দিক হলো চুল এবং ত্বক। ক্যানসার রোগীদের এজন্য চুল পড়ে যায়। চামড়ার উপরের অংশ শুকিয়ে খসে পড়ে। এসব মূলত শরীরের অন্যান্য ঘাটতি পূরণ ও ভালো চর্বির অভাবে হয়। সেসব অভাব পূরণ করে তিসি বীজ।

তিসির বীজে থাকা ওমেগা ৩ ও ৬ চামড়ার নতুন কোষ জন্ম গ্রহণে সহায়তা করে। সাধারণত ত্বকের উপরের ৭টি কোষের লেয়ার মৃত। তাই তেল শোষণ করে চকচকে হয় এবং মৃত কোষ ফেলে দিয়ে তেল থেকে পুষ্টি নিয়ে নতুন কোষ জন্ম দিতে থাকে। তাই তিসি বীজের মধ্যে থাকা ওমেগার গুরুত্ব অপরিসীম।

তিসি বীজের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতা

ডায়াবেটিস রোগীদের তাদের ইনসুলিন নেয়ার প্রয়োজন নেই, যদি এই তিসি সেবন করে থাকেন দৈনিক অন্তত ১৫ থেকে ২০ গ্রাম। আর যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা যদি এটি গ্রহণ করেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।

শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে তিসি। খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং অতিরিক্ত মেদও দূর করে।

তিসি আমাদের হৃৎপিণ্ডকে সবল রাখতে কাজ করে। হার্টের ব্লক এবং হার্টবিট স্বাভাবিক রাখতেও অনেক সাহায্য করে।

তিসির বীজের আমিষ খুব উঁচু মানের, এতে আছে প্রচুর আরজিনিন নামক এমিনো এসিড, এস্পার্টিক এসিড এবং গ্লুটামিক এসিড। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে তিসির বীজের আমিষ ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতার উন্নয়ন, কোলেস্টেরল কমাতে এবং টিউমার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা খাদ্য তালিকায় তিসি বীজ রাখতে পারেন। প্রতিদিন দুই চামচ তিসির পাউডার এর জন্য যথেষ্ট। এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও এমাইনো এসিড বিপি কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এই বীজ দিয়ে চা করে খেলেও রক্তের প্রেসার স্বাভাবিক থাকবে।

তিসি বীজ মহিলাদের স্তন, প্রোস্টেট, ওভারিয়ান এবং কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে। তিসি বীজে থাকা ৩ ধরনের লিগ্নান্স, দেহে থাকা হরমোনের প্রাকৃতিক ভারসাম্যতা বজায় রাখে যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। গ্যাস্ট্রিক ও আলসার দূর করে এবং অ্যাজমা থেকে রক্ষা করে।

যারা তামাক বা অন্য নেশায় আক্রান্ত তাদের জন্য তিসি খুবই উপকারী। এটি নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিন খাওয়ার পর অল্প পরিমাণ তিসি চাবালে দ্রুত নেশা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

গবেষণায় জানা গেছে, তিসি আমাদের শরীরের এইচডিএল (ভালো কোলেস্টোরাল) বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টোরালকে কমায়। অর্থাৎ এটি আমাদের কোলেস্টোরালকে নিয়ন্ত্রণ করে।

তিসি আমাদের হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করে। মেজাজ ফুরফুরে রাখতেও সাহায্য করে।

এটি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম লেভেল বাড়ায়। হাড় ও শরীরের জয়েন্টগুলো সুস্থ রাখে। যার ফলে বৃদ্ধ বয়সে হাড্ডিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

তিসির বীজ মেয়েদের মেনোপোজের সময় ব্যথা দূর করতেও অনেক উপকারী।

প্রতিদিন ২ গ্লাস পানিতে ৩ চা চামচ তিসি গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।

তিসির বীজ কাটাবে চর্বি। ওজন নিয়ন্ত্রণে সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় তিসির বীজ রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ওজন কমাতেও এটি ভূমিকা রাখে।

তিসির বীজ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সালাদে তিসির বীজের তেল মিশিয়ে খাওয়া যায়। গুঁড়া তিসির বীজ দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। রান্নার সময় ব্যবহার করা যায়। গবেষকদের মতে প্রতিদিন ৫ টেবিল চামচ (৫০ গ্রাম) এর কম তিসির বীজ খাওয়া উচিৎ।

তিসি আমাদের চুল ও ত্বকের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি মুখের বলিরেখা প্রতিরোধ করে, চুল পড়া রোধ করে, ত্বককে মসৃণ রাখে, ত্বক উজ্জ্বল রাখে, যৌবন ধরে রাখে। এটি ব্রণ ও যেকোন চামড়া জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে। এটি মাথায় খুশকি হতে দেয় না এবং মাথার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ঠিক রাখে।

এছাড়া রং করা ছাড়াই ঝকঝকে কালো চুল পেতে পারেন তিসি বীজের তেলে তৈরি মিরাকেল ড্রিঙ্ক বানাতে পারেন ঘরে বসেই। এই ‘মিরাকেল ড্রিঙ্ক’ দিনে তিন থেকে চার বার এক চা চামচ করে খাওয়ার আগে খেতে হবে, মাস তিনেকের জন্য। তা হলেই এর ফল পাবেন। কীভাবে তৈরি করতে হবে চুল কালো রাখার সেই ‘মিরাকেল ড্রিঙ্ক’—

উপকরণ

পাতিলেবু: ৫টি

রসুন কোয়া: ৫টি

মধু: ১ কাপ

তিসি বীজের তেল: ১ কাপ

পদ্ধতি

সব কিছু এক সঙ্গে ব্লেন্ডারে দিয়ে দিন। লেবুর ছাল না ছাড়ালেও অসুবিধা নেই। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে তা একটি কাঁচের জারে ঢেলে রাখুন। যারা এই মিশ্রণ ব্যবহার করেছেন, তারা উপকার পেয়েছেন। তাদের মতে, শুধু কালো চুলই নয়, মিশ্রণ খাওয়ার ফলে তাদের দৃষ্টিশক্তিও ভাল হয়েছে।

তবে গর্ভাবস্থায় তিসি খাওয়া উচিত নয়। এতে মা এবং বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গর্ভবতী নারীদের এই প্রাকৃতিক উপাদানটি খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা।

তিসির উপকারী গুণ বলে শেষ কেরা যাবে না। প্রতিদিনের ডায়েটে খাদ্য তালিকায় তিসি বীজ নিয়মিত রাখতে পারেন।

বাংলাদেশে পাটের পর তিসি অর্থকরী ফসল। অর্থনীতিতে তিসির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তিসি বাংলাদেশে শণ নামেও পরিচিত। আমাদের এই দেশে রবিশস্য হিসেবে খুলনা, যশোর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলায় তিসি উদ্ভিদ বেশি চাষ হয়। অপরিচিত অজানা মহৌষধি তিসি উদ্ভিদ বাংলাদেশ থেকে যেন বিলুপ্ত না হয়ে যায়।