ঈদের পর মসলার বাজারে মিশ্র প্রভাব

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের আগে জিরা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, পেঁয়াজের দামও বেড়ে গিয়েছিল। তবে ঈদের পর কিছুটা কমেছে এসব মসলার দাম। অবশ্য বেড়ে গেছে আদা ও রসুনের দাম।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরু থেকেই দেশের বাজারে মসলার দামে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। চাহিদা বাড়লেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার চাহিদা কমলে দাম কমে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে মার্চের শেষদিকে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় ক্রেতাদের মধ্যে বাড়তি কেনার প্রবণতা দেখা দিলে জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, আদা, রসুন, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মে মাসের প্রথমার্ধে গরম মসলার পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠকে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর কথা দেয়।

ব্যাবসায়ীরা কথা দিলেও রোজার ঈদের আগ পর্যন্ত রাজধানীর বাজারগুলোতে বাড়তি দামে বিক্রি হয় মসলা। তবে ঈদের পর চাহিদা কমায় সব ধরনের মসলার দাম কমে। মাসখানেক সেই দাম স্থিতিশীল হলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আবার মসলার দাম বাড়তে থাকে।

অবশ্য ঈদের পর চাহিদা কমায় এখন আবার বেশিরভাগ মসলার দাম কমতে শুরু করেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে সব ধরনের মসলার চাহিদা বাড়ে। এ কারণে দামও বেড়ে যায়। আর ঈদের পর চাহিদা কমায় এখন কিছু মসলার দাম কমছে। অবশ্য আমদানি করা আদার সরবরাহ কম থাকায় আদার দাম ঈদের পর আরও বেড়েছে।

আজ শনিবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, যা ঈদের আগে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ছিল।

ঈদের আগে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দারুচিনির দাম কমে এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে দাম বেড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লবঙ্গের দাম কমে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে চলে এসেছে।

কেজিতে ৩০০ টাকার মতো দাম কমে এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে, যা ঈদের আগে ছিল ৩১০০ থেকে ৩৩০০ টাকা। দীর্ঘদিন ধরেই ভোগাতে থাকা দেশি পেঁয়াজের কেজি ঈদের আগে ছিল ৪৫-৫০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০-৩৫ টাকা। উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম কমে এখন দেশি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব মসলার দাম কমার বিষয়ে মালিবাগের হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, যে কোনো সময়ের তুলনায় কোরবানির ঈদের আগে মসলার চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণে দামও কিছুটা বাড়ে। এবারও ঈদের আগে মসলার দাম বেড়েছে, তবে এ দাম বাড়ার প্রবণতা ছিল অন্যবারের তুলনায় কম।

তিনি বলেন, ঈদের পর চাহিদা কমায় বেশিরভাগ মসলার দাম কমে গেছে। বিশেষ করে জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গের দাম বেশি কমেছে। এর মধ্যে করোনার আগে জিরার যে দাম ছিল, এখন তার থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বেশিরভাগ মসলার দাম কমলেও ঈদের পর আদা ও রসুনের দাম আরও বেড়েছে। ঈদের আগে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি আদার দাম বেড়ে এখন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা আদা।

আর ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি রসুনের দাম বেড়ে ৯০ থেকে ১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি করা রসুন আগের মতই ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

আদার দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মিলন বলেন, এখন বাজারে আমদানি করা আদার সরবরাহ কম। তবে চাহিদা আগের মতই রয়েছে। এ কারণেই হয়তো দাম বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে আমাদের ধারণা আদার দাম সামনে আরও বাড়বে।

বিভিন্ন মসলার দাম বাড়া-কমার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে জিরার দাম ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এলাচের ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, লবঙ্গের ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং দেশি পেঁয়াজের ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ দাম কমেছে। বিপরীতে দেশি রসুনের ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং দেশি আদার ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর