ঢাকা ০৭:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মীয়তার বন্ধনে রাজনীতি-৯

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১৯:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মে ২০১৫
  • ৬৬৬ বার

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্রজাতিসত্তার তিনটি রাজপরিবার হচ্ছে বান্দরবানের বোমাং, রাঙ্গামাটির চাকমা ও খাগড়াছড়ির মং রাজপরিবার। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতিতে এখনও রয়েছে তাদের প্রভাব। পাকিস্তান আমল ও স্বাধীন বাংলাদেশের বেশির ভাগ সরকারে ছিল এসব রাজপরিবারের প্রতিনিধিত্ব। এক্ষেত্রে এগিয়ে চাকমা ও বোমাং রাজপরিবার। বান্দরবানের বোমাং রাজপরিবারের ১৫তম রাজা হলেন অংশু প্রু চৌধুরী। তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের খাদ্য ও সাত্তার সরকারের সময় দুই দফায় একাধিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। রাজপরিবারের ১৪তম রাজা মং শৈ প্রু চৌধুরী ছিলেন এরশাদ সরকারের এমপি। রাজপরিবারের ১৩তম রাজা ক্য জ সাইন বোমাগ্রীর পুত্রবধূ (রাজবধূ) হলেন বিএনপি সরকারের সাবেক এমপি ম্যামাচিং। আবার অংশু প্রু চৌধুরীর ছেলে বিএনপি সরকারের সাবেক এমপি সাচিং প্রু জেরি হলেন বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি। সাচিং প্রু ও মামাচিং দুইজন সম্পর্কে মামি-ভাগনে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির মংরাজার জামাতা হলেন বান্দরবানের প্রয়াত বোমাং রাজা অংশু প্রু চৌধুরীর তৃতীয় ছেলে। রাঙ্গামাটির চাকমা রাজা ও ফখরুদ্দীন সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের বাবা রাজা মেজর ত্রিদিব রায় ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। পরে তিনি পাকিস্তানে চলে গেলে ১৯৭৭ সালে ১৮ বছর বয়সে ৫১তম চাকমা রাজা হিসেবে অভিশেষ ঘটে তার ছেলে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের। তার দাদি রাজমাতা বিনিতা রায় জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। দেবাশীষ রায়ের সৎ মায়ের সঙ্গে পরে বিয়ে হয় ফরিদপুরের বিখ্যাত কবির পরিবারের সন্তান ফিরোজ কবিরের। চাকমা রাজপরিবারের আরেক সন্তান দেবাশীষের চাচা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কেকে রায় প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। রাঙ্গামাটির সুবিমল দেওয়ান ছিলেন জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা। তার ছেলে অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি। দীপেন দেওয়ানের চাচি হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ানের ফুফু। দীপেন দেওয়ানের বোন জামাই হলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। আবার বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খাগড়াছড়ির সমীরন দেওয়ানের ফুফাতো বোনের জামাই হলেন রাঙ্গামাটি বিএনপির সভাপতি দীপেন দেওয়ান। রাঙ্গামাটির কামিনী মোহন দেওয়ান ছিলেন পাকিস্তান আমলের এমএলএ। তার ছেলে বিনয় কুমার দেওয়ান ছিলেন এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী। এরশাদ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন বিনয় কুমারের ভাতিজা গৌতম দেওয়ান। আবার বিনয় কুমার দেওয়ান ও দীপেন দেওয়ান হলেন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু সরকারে (জেএসএস) দলীয় এমপি ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা)। তিনি পরবর্তী সময়ে শান্তিবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার ছোট ভাই হলেন চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। সন্তু লারমার শ্যালক হলেন আদিবাসী যান্ত্রিক সমিতির সভাপতি বিভাষ দেওয়ান।
রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ভূঁইয়া পরিবারের সদস্য মুসলিম কটন মিলের মালিক গুলবক্স ভূঁইয়ার ছেলে সুলতান উদ্দিন ভূঁইয়া ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি। তার বড় ভাই মজিবুর রহমান ভূঁইয়া রূপগঞ্জ উপজেলার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। মজিবুর ভূঁইয়ার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বর্তমানে যুবদলের কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। দিপুর খালু হলেন চাঁদপুরের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি এসএ সুলতান টিটু। আর গুলবক্স ভূঁইয়ার ভাতিজি জামাই হলেন ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। রংপুরের ভরসা পরিবারের সন্তান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জিয়া সরকারের এমপি রহিমউদ্দিন ভরসার ছোট ভাই হলেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক এমপি করিমউদ্দিন ভরসা। দুই ভাই আবার সম্পর্কে বেয়াইও বটে। রহিম ভরসার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন করিম ভরসা। আবার রহিম ভরসার বেয়াই হলেন ফরিদপুর জেলা বিএনপি সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া। রহিম ভরসার ছেলে এমদাদুল হক ভরসা জেলা বিএনপি সভাপতি ও স্ত্রী শিরিন ভরসা জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। করিম ভরসার ছেলে শামসুল ইসলাম জাতীয় পার্টির নেতা। রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন হলেন এরশাদ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক চৌধুরীর বেয়াই। আনিসুলের ভাতিজার কাছে ভাতিজি বিয়ে দিয়েছেন মোজাফফর।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মামা হলেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাফর)  মহাসচিব ও এরশাদ সরকারের সাবেক পূর্তমন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাগনে হলেন ভোলা সদর পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান। তার আরেক ভাগনে হলেন লালমোহনের পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম। আবার তোফায়েলের ভাতিজা আলী আজম মুকুল হলেন দৌলতখান আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। সিলেটের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ইমরান আহমেদের শাশুড়ি হলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বদরুন্নেসা আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা হলেন ইমরান আহমেদের মামা শ্বশুর। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত খালেদ মোশাররফের মেয়ে হলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সংরক্ষিত মহিলা এমপি মাহজাবীন খালেদ। খালেদ মোশাররফের ছোট ভাই রাশেদ মোশাররফ ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী। তাদের নিকটাত্মীয় হলেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপি। তার ছেলে রাশেক রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। ঝালকাঠি জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের বেয়াই হলেন চট্টগ্রামের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি সরোয়ার জামাল নিজাম। নিজামের ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন শাহজাহান ওমর। আর নিজামের ভাই হলেন সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল সরোয়ার জাহান নিজাম।
পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের এমএলএ বগুড়ার গোলাম রব্বানীর ছেলে বগুড়া-৫ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। তার চাচা ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন সাংবাদিক আসাফুদ্দৌলা। জিএম সিরাজের চাচাতো বোন আসাফা মওলা গোপালগঞ্জের শেখ পরিবারের পুত্রবধূ। জিয়া সরকারের এমপি বগুড়ার সিরাজুল হক তালুকদারের ছেলে হলেন বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। লালুর শ্বশুর হলেন বগুড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আকবর চৌধুরী। তার ভায়রা শহিদুল ইসলাম দুদু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে কাহালু-নন্দীগ্রাম আসনে প্রার্থী ছিলেন। বগুড়ার বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার ছোট ভাই মঞ্জুরুল আলম মোহন জেলা যুবলীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকও। আরেক ভাই মাহবুব উল আলম টোকন জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম-১ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও একই আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম রানা সম্পর্কে দূর সম্পর্কীয় মামা-ভাগনে। খুলনার জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি গাফফার বিশ্বাসের ভাগনি জামাই হলেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত এএসএম রব। রবের ছেলে আলাউদ্দিন মিঠু বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। কক্সবাজারের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর তালুই হলেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কবি আদিল চৌধুরী। চৌধুরী পরিবারের ছোট ছেলে সরওয়ার জাহান চৌধুরীর চাচা শ্বশুর হলেন আদিল চৌধুরী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ড. এসএ মালেকের বেয়াই হলেন জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আত্মীয়তার বন্ধনে রাজনীতি-৯

আপডেট টাইম : ০৭:১৯:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মে ২০১৫

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্রজাতিসত্তার তিনটি রাজপরিবার হচ্ছে বান্দরবানের বোমাং, রাঙ্গামাটির চাকমা ও খাগড়াছড়ির মং রাজপরিবার। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতিতে এখনও রয়েছে তাদের প্রভাব। পাকিস্তান আমল ও স্বাধীন বাংলাদেশের বেশির ভাগ সরকারে ছিল এসব রাজপরিবারের প্রতিনিধিত্ব। এক্ষেত্রে এগিয়ে চাকমা ও বোমাং রাজপরিবার। বান্দরবানের বোমাং রাজপরিবারের ১৫তম রাজা হলেন অংশু প্রু চৌধুরী। তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের খাদ্য ও সাত্তার সরকারের সময় দুই দফায় একাধিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। রাজপরিবারের ১৪তম রাজা মং শৈ প্রু চৌধুরী ছিলেন এরশাদ সরকারের এমপি। রাজপরিবারের ১৩তম রাজা ক্য জ সাইন বোমাগ্রীর পুত্রবধূ (রাজবধূ) হলেন বিএনপি সরকারের সাবেক এমপি ম্যামাচিং। আবার অংশু প্রু চৌধুরীর ছেলে বিএনপি সরকারের সাবেক এমপি সাচিং প্রু জেরি হলেন বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি। সাচিং প্রু ও মামাচিং দুইজন সম্পর্কে মামি-ভাগনে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির মংরাজার জামাতা হলেন বান্দরবানের প্রয়াত বোমাং রাজা অংশু প্রু চৌধুরীর তৃতীয় ছেলে। রাঙ্গামাটির চাকমা রাজা ও ফখরুদ্দীন সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের বাবা রাজা মেজর ত্রিদিব রায় ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। পরে তিনি পাকিস্তানে চলে গেলে ১৯৭৭ সালে ১৮ বছর বয়সে ৫১তম চাকমা রাজা হিসেবে অভিশেষ ঘটে তার ছেলে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের। তার দাদি রাজমাতা বিনিতা রায় জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। দেবাশীষ রায়ের সৎ মায়ের সঙ্গে পরে বিয়ে হয় ফরিদপুরের বিখ্যাত কবির পরিবারের সন্তান ফিরোজ কবিরের। চাকমা রাজপরিবারের আরেক সন্তান দেবাশীষের চাচা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কেকে রায় প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। রাঙ্গামাটির সুবিমল দেওয়ান ছিলেন জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টা। তার ছেলে অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি। দীপেন দেওয়ানের চাচি হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ানের ফুফু। দীপেন দেওয়ানের বোন জামাই হলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। আবার বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খাগড়াছড়ির সমীরন দেওয়ানের ফুফাতো বোনের জামাই হলেন রাঙ্গামাটি বিএনপির সভাপতি দীপেন দেওয়ান। রাঙ্গামাটির কামিনী মোহন দেওয়ান ছিলেন পাকিস্তান আমলের এমএলএ। তার ছেলে বিনয় কুমার দেওয়ান ছিলেন এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী। এরশাদ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন বিনয় কুমারের ভাতিজা গৌতম দেওয়ান। আবার বিনয় কুমার দেওয়ান ও দীপেন দেওয়ান হলেন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু সরকারে (জেএসএস) দলীয় এমপি ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা)। তিনি পরবর্তী সময়ে শান্তিবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার ছোট ভাই হলেন চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। সন্তু লারমার শ্যালক হলেন আদিবাসী যান্ত্রিক সমিতির সভাপতি বিভাষ দেওয়ান।
রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ভূঁইয়া পরিবারের সদস্য মুসলিম কটন মিলের মালিক গুলবক্স ভূঁইয়ার ছেলে সুলতান উদ্দিন ভূঁইয়া ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি। তার বড় ভাই মজিবুর রহমান ভূঁইয়া রূপগঞ্জ উপজেলার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। মজিবুর ভূঁইয়ার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বর্তমানে যুবদলের কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। দিপুর খালু হলেন চাঁদপুরের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি এসএ সুলতান টিটু। আর গুলবক্স ভূঁইয়ার ভাতিজি জামাই হলেন ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। রংপুরের ভরসা পরিবারের সন্তান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জিয়া সরকারের এমপি রহিমউদ্দিন ভরসার ছোট ভাই হলেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক এমপি করিমউদ্দিন ভরসা। দুই ভাই আবার সম্পর্কে বেয়াইও বটে। রহিম ভরসার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন করিম ভরসা। আবার রহিম ভরসার বেয়াই হলেন ফরিদপুর জেলা বিএনপি সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া। রহিম ভরসার ছেলে এমদাদুল হক ভরসা জেলা বিএনপি সভাপতি ও স্ত্রী শিরিন ভরসা জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। করিম ভরসার ছেলে শামসুল ইসলাম জাতীয় পার্টির নেতা। রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন হলেন এরশাদ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক চৌধুরীর বেয়াই। আনিসুলের ভাতিজার কাছে ভাতিজি বিয়ে দিয়েছেন মোজাফফর।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মামা হলেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাফর)  মহাসচিব ও এরশাদ সরকারের সাবেক পূর্তমন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাগনে হলেন ভোলা সদর পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান। তার আরেক ভাগনে হলেন লালমোহনের পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম। আবার তোফায়েলের ভাতিজা আলী আজম মুকুল হলেন দৌলতখান আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। সিলেটের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ইমরান আহমেদের শাশুড়ি হলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বদরুন্নেসা আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা হলেন ইমরান আহমেদের মামা শ্বশুর। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার প্রয়াত খালেদ মোশাররফের মেয়ে হলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সংরক্ষিত মহিলা এমপি মাহজাবীন খালেদ। খালেদ মোশাররফের ছোট ভাই রাশেদ মোশাররফ ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী। তাদের নিকটাত্মীয় হলেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপি। তার ছেলে রাশেক রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। ঝালকাঠি জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের বেয়াই হলেন চট্টগ্রামের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি সরোয়ার জামাল নিজাম। নিজামের ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন শাহজাহান ওমর। আর নিজামের ভাই হলেন সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল সরোয়ার জাহান নিজাম।
পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের এমএলএ বগুড়ার গোলাম রব্বানীর ছেলে বগুড়া-৫ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। তার চাচা ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন সাংবাদিক আসাফুদ্দৌলা। জিএম সিরাজের চাচাতো বোন আসাফা মওলা গোপালগঞ্জের শেখ পরিবারের পুত্রবধূ। জিয়া সরকারের এমপি বগুড়ার সিরাজুল হক তালুকদারের ছেলে হলেন বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। লালুর শ্বশুর হলেন বগুড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আকবর চৌধুরী। তার ভায়রা শহিদুল ইসলাম দুদু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে কাহালু-নন্দীগ্রাম আসনে প্রার্থী ছিলেন। বগুড়ার বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার ছোট ভাই মঞ্জুরুল আলম মোহন জেলা যুবলীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকও। আরেক ভাই মাহবুব উল আলম টোকন জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম-১ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ও একই আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম রানা সম্পর্কে দূর সম্পর্কীয় মামা-ভাগনে। খুলনার জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি গাফফার বিশ্বাসের ভাগনি জামাই হলেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত এএসএম রব। রবের ছেলে আলাউদ্দিন মিঠু বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। কক্সবাজারের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর তালুই হলেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কবি আদিল চৌধুরী। চৌধুরী পরিবারের ছোট ছেলে সরওয়ার জাহান চৌধুরীর চাচা শ্বশুর হলেন আদিল চৌধুরী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ড. এসএ মালেকের বেয়াই হলেন জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামান।