ঢাকা ১০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ইটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষেবা স্থানান্তর ও কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ইটনায় এ প্লাস ক্যাম্পেইন অবহিত করন সভা অনুষ্ঠিত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে যেসব শর্ত দিলেন পুতিন রান্না শেখাচ্ছেন পড়শী, ঈদে দেখা যাবে অভিনয় আর গানে শিমের রাজ্য সীতাকুণ্ড ২১০ কোটি টাকার শিম উৎপাদন, কৃষকের হাসি জাতিসংঘ, মহাসচিব, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি অবশেষে মায়ের কোলে ফিরল সায়ান হরেদরে সবাইকে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে: মাহফুজ আলম পেঁয়াজের দাম না পেয়ে লোকসানের শঙ্কায় পাবনার চাষিরা পাচারকালে নারী শিশুসহ ১৮ রোহিঙ্গা উদ্ধার, দালাল আটক

কোরবানি গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক-খামারিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪০:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০
  • ২১০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যাদুর্গত ৩১টি জেলায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকায় ওই এলাকায় গবাদি পশুর (গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি) খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বন্যা সারাদেশে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬০৭টি গরু, মহিষ ১০ হাজার ৮৫০টি, ছাগল ৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৮০টি, ভেড়া ১ লাখ ৪ হাজার ২৪১টি, মুরগির ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৮টি, হাঁস ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯০টি। মারা যাওয়া হাঁস-মুরগি ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। বন্যা চারণ তলিয়েছে ২৪ হাজার ৮২০ একর। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় গরুর খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কোরবানির পশুর জন্য ন্যূনতম খাবার জোগাড় করতে পারছেন না কৃষক ও খামারিরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পশুর খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছে খামারি ও কৃষকরা।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ২০টি দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতির ৫০ হাজার গবাদিপশু দেড়মাস ধরে পানিতে আটকে আছে। বন্যায় খড়ের গাদা পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে, মাঠের আবাদি ঘাসও ডুবে গেছে। উঁচু জমিতে যে ঘাস ছিল অতি বৃষ্টির কারণে সেগুলোর গোড়া পচে গেছে। ফলে গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কটে স্বাস্থ্যহানি ঘটছে কোরবানির পশুর। গরুর দাম কমে গেছে ২০-২৫ শতাংশ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার ইনকিলাবকে বলেন, চলতি সব চেয়ে গরু-ছাগল-মহিষ, ভেড়া, হাঁস-মুরগির ক্ষতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত দুই বছর থেকে বন্যাদুর্গত এলাকার কৃষক ও খামারিদের পশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তা ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হচ্ছে। আমার কর্মকর্তারা সঙ্গে থেকে বিতরণ করছে। তিনি বলেন, একটি বেসরকার সংস্থা থেকে গতকাল কুড়িগ্রাম, জামালপুর এবং গাইবান্ধায় গরুর খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা বেশি দিন অবস্থান করলে আরো ক্ষতি হতে পারে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, যারা কোরবানির জন্য সারা বছর গরু মোটাতাজা করেছেন, এখন ওই গরু তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরুকে ঠিক মতো খেতে দিতে পারছেন না, আবার দাম কমে যাওয়ায় বিক্রিও করতে পারছেন না।

কোরবানি সামনে রেখে কুড়িগ্রাম, চিলমারী, উলিপুরের তিস্তার চড়ে, গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জের চরাঞ্চলের মানুষ পশুপালন করেন। এ ছাড়া চরের মানুষের প্রধান সম্পদ গবাদিপশু। কোরবানির সময় অনেকেই গরু-ছাগল বিক্রি করে সংসারের চাকা সচল রাখেন। কেউ বা শোধ করেন ঋণ। কিন্তু এবারের দৃশ্যটা একেবারেই ভিন্ন। করোনার কারণে কোরবানি পশুর দাম অনেক কমে গেছে। তার ওপর বন্যা। এর ফলে গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে আছেন অনেক কৃষক। পশুকে খাদ্য দিতে পারছেন না তারা। এবার বোরো মৌসুমে প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে ধান গাছের অর্ধেক কাটতে হয়েছে। সেটাও অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বলা চলে বোরো ধানের খড় প্রায় সব নষ্ট হয়েছে। এখন বন্যার কারণে অনেকের ঘাসের জমি পানির নিচে। অনেক গৃহস্থ উঁচু জমিতে ঘাস করেছিল, সেখানে এখনো পানি ওঠেনি। কিন্তু প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে ঘাসের গোড়া পচে গেছে। কুড়িগ্রামের হলোখানা গ্রামের এক বাসিন্দা বাড়িতে বন্যার পানি ওঠার পর বাঁধের ওপর গরু রেখেছেন। ঘাস খাওয়াতে পারছেন না। ভ‚ষির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাও কিনতে পারছেন না। তিস্তার জুয়ান সতরা চড়ে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য যে গরু পালন করেছেন তার দাম অনেক কমে গেছে। তিনটা গরু নিয়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন গাইবান্ধার ভাষার পাড়া গ্রামের বাতেন মিয়া। তিনি বলেন, কোনোমতে চালা তুলি আছি। গরুর খড় শেষ হয়া গেছে। নিজের খাবারই জোটে না, গরুক কি খাওয়ামো।
নাটোরে বানভাসিরা রাস্তা, উঁচু স্থান ও বাঁধে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। চলনবিলের কৃষক আল আমিন জানান, বাড়ির মধ্যে পানি শুকায়নি। গরুকে তো খাবার দিতে পারি না। এজন্যই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। বন্যার কারণে গরু শুকিয়ে গেছে।

বন্যায় পশু খাদ্যের সঙ্কটে পড়েছেন কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বানভাসি মানুষ ও খামারিরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উঁচু বাঁধ ও রাস্তার ধারে নিরাপদ স্থানে গবাদিপশু সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু গবাদিপশুর একমাত্র খাদ্য খড় বন্যার পানিতে পচন ধরেছে, আবার কোথাও ভেসে গেছে।
শাহজাদপুরের কয়েকশ’ খামারের সাত লাখ গবাদি পশু থেকে প্রায় দু’লাখ লিটার দুধ উৎপন্ন হয়। দেড় মাস স্থায়ী বন্যার কারণে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। কাঁচা ঘাস সমৃদ্ধ পশুর চারণভ‚মি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় একদিকে বেড়ে গেছে পশু-খাদ্যের দাম। অন্যদিকে গরু শুকনো খাবার খাওয়ার কারণে কমেছে দুগ্ধ উৎপাদন। দীর্ঘদিন মাঠে বিচরণ না করে খামারে আটকে থাকায় গরুর শরীরে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি মেডিকেল টিম গঠনের পাশাপাশি খামারিদের পরামর্শ দেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।

কলমাকান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, উপজেলায় এখন পর্যস্ত গবাদিপশুর খাদ্য সরকারিভাবে বরাদ্দ নেই। আমরা এরই মধ্যে মেডিকেল টিম করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গবাদিপশুর চিকিৎসা দিয়ে আসছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান ভূইয়া ইনকিলাবকে বলেন, গরুকে উঁচু জায়গায় রাখতে হবে, দানাদার খাদ্য দিতে হবে এবং বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। বন্যার সময় মেডিক্যাল টিম গঠন করে দিয়েছি। তিনি বলেন, শাহ্জাদপুর উপজেলার ২০টি দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতির ৫০ হাজার গবাদিপশু দেড় মাস ধরে পানিতে আটকে আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষেবা স্থানান্তর ও কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

কোরবানি গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক-খামারিরা

আপডেট টাইম : ০৯:৪০:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যাদুর্গত ৩১টি জেলায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকায় ওই এলাকায় গবাদি পশুর (গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি) খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বন্যা সারাদেশে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬০৭টি গরু, মহিষ ১০ হাজার ৮৫০টি, ছাগল ৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৮০টি, ভেড়া ১ লাখ ৪ হাজার ২৪১টি, মুরগির ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৮টি, হাঁস ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯০টি। মারা যাওয়া হাঁস-মুরগি ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। বন্যা চারণ তলিয়েছে ২৪ হাজার ৮২০ একর। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় গরুর খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কোরবানির পশুর জন্য ন্যূনতম খাবার জোগাড় করতে পারছেন না কৃষক ও খামারিরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পশুর খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছে খামারি ও কৃষকরা।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ২০টি দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতির ৫০ হাজার গবাদিপশু দেড়মাস ধরে পানিতে আটকে আছে। বন্যায় খড়ের গাদা পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে, মাঠের আবাদি ঘাসও ডুবে গেছে। উঁচু জমিতে যে ঘাস ছিল অতি বৃষ্টির কারণে সেগুলোর গোড়া পচে গেছে। ফলে গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কটে স্বাস্থ্যহানি ঘটছে কোরবানির পশুর। গরুর দাম কমে গেছে ২০-২৫ শতাংশ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার ইনকিলাবকে বলেন, চলতি সব চেয়ে গরু-ছাগল-মহিষ, ভেড়া, হাঁস-মুরগির ক্ষতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত দুই বছর থেকে বন্যাদুর্গত এলাকার কৃষক ও খামারিদের পশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তা ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হচ্ছে। আমার কর্মকর্তারা সঙ্গে থেকে বিতরণ করছে। তিনি বলেন, একটি বেসরকার সংস্থা থেকে গতকাল কুড়িগ্রাম, জামালপুর এবং গাইবান্ধায় গরুর খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা বেশি দিন অবস্থান করলে আরো ক্ষতি হতে পারে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, যারা কোরবানির জন্য সারা বছর গরু মোটাতাজা করেছেন, এখন ওই গরু তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরুকে ঠিক মতো খেতে দিতে পারছেন না, আবার দাম কমে যাওয়ায় বিক্রিও করতে পারছেন না।

কোরবানি সামনে রেখে কুড়িগ্রাম, চিলমারী, উলিপুরের তিস্তার চড়ে, গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জের চরাঞ্চলের মানুষ পশুপালন করেন। এ ছাড়া চরের মানুষের প্রধান সম্পদ গবাদিপশু। কোরবানির সময় অনেকেই গরু-ছাগল বিক্রি করে সংসারের চাকা সচল রাখেন। কেউ বা শোধ করেন ঋণ। কিন্তু এবারের দৃশ্যটা একেবারেই ভিন্ন। করোনার কারণে কোরবানি পশুর দাম অনেক কমে গেছে। তার ওপর বন্যা। এর ফলে গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে আছেন অনেক কৃষক। পশুকে খাদ্য দিতে পারছেন না তারা। এবার বোরো মৌসুমে প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে ধান গাছের অর্ধেক কাটতে হয়েছে। সেটাও অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বলা চলে বোরো ধানের খড় প্রায় সব নষ্ট হয়েছে। এখন বন্যার কারণে অনেকের ঘাসের জমি পানির নিচে। অনেক গৃহস্থ উঁচু জমিতে ঘাস করেছিল, সেখানে এখনো পানি ওঠেনি। কিন্তু প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে ঘাসের গোড়া পচে গেছে। কুড়িগ্রামের হলোখানা গ্রামের এক বাসিন্দা বাড়িতে বন্যার পানি ওঠার পর বাঁধের ওপর গরু রেখেছেন। ঘাস খাওয়াতে পারছেন না। ভ‚ষির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাও কিনতে পারছেন না। তিস্তার জুয়ান সতরা চড়ে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য যে গরু পালন করেছেন তার দাম অনেক কমে গেছে। তিনটা গরু নিয়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন গাইবান্ধার ভাষার পাড়া গ্রামের বাতেন মিয়া। তিনি বলেন, কোনোমতে চালা তুলি আছি। গরুর খড় শেষ হয়া গেছে। নিজের খাবারই জোটে না, গরুক কি খাওয়ামো।
নাটোরে বানভাসিরা রাস্তা, উঁচু স্থান ও বাঁধে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। চলনবিলের কৃষক আল আমিন জানান, বাড়ির মধ্যে পানি শুকায়নি। গরুকে তো খাবার দিতে পারি না। এজন্যই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। বন্যার কারণে গরু শুকিয়ে গেছে।

বন্যায় পশু খাদ্যের সঙ্কটে পড়েছেন কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বানভাসি মানুষ ও খামারিরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উঁচু বাঁধ ও রাস্তার ধারে নিরাপদ স্থানে গবাদিপশু সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু গবাদিপশুর একমাত্র খাদ্য খড় বন্যার পানিতে পচন ধরেছে, আবার কোথাও ভেসে গেছে।
শাহজাদপুরের কয়েকশ’ খামারের সাত লাখ গবাদি পশু থেকে প্রায় দু’লাখ লিটার দুধ উৎপন্ন হয়। দেড় মাস স্থায়ী বন্যার কারণে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। কাঁচা ঘাস সমৃদ্ধ পশুর চারণভ‚মি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় একদিকে বেড়ে গেছে পশু-খাদ্যের দাম। অন্যদিকে গরু শুকনো খাবার খাওয়ার কারণে কমেছে দুগ্ধ উৎপাদন। দীর্ঘদিন মাঠে বিচরণ না করে খামারে আটকে থাকায় গরুর শরীরে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি মেডিকেল টিম গঠনের পাশাপাশি খামারিদের পরামর্শ দেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।

কলমাকান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, উপজেলায় এখন পর্যস্ত গবাদিপশুর খাদ্য সরকারিভাবে বরাদ্দ নেই। আমরা এরই মধ্যে মেডিকেল টিম করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গবাদিপশুর চিকিৎসা দিয়ে আসছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান ভূইয়া ইনকিলাবকে বলেন, গরুকে উঁচু জায়গায় রাখতে হবে, দানাদার খাদ্য দিতে হবে এবং বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। বন্যার সময় মেডিক্যাল টিম গঠন করে দিয়েছি। তিনি বলেন, শাহ্জাদপুর উপজেলার ২০টি দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতির ৫০ হাজার গবাদিপশু দেড় মাস ধরে পানিতে আটকে আছে।