হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোরবানির ঈদ ঘিরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভোক্তা প্রতারণা রোধে রাজধানীসহ দেশজুড়ে কোরবানি পশুহাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা, জাল টাকার ব্যবহার রোধ, সড়কে পশুবাহী পরিবহন ও হাটে চাঁদাবাজি রোধে বিশেষভাবে নজরদারি করা হবে। এছাড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনলাইনে কোরবানি পশুর কেনাকাটায়ও বিশেষ নজর দেয়া হবে।
ভোক্তা অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়সহ দেশের সব বিভাগীয় কার্যালয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অধিদফতর সূত্র জানায়, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে অধিদফতরের কর্মকর্তারা হাটগুলোতে পরিচয় গোপন করে ক্রেতা সেজে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করবে। তাদের সহায়তা দেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পশুহাট, অনলাইনে কোরবানি পশুর বেচাকেনা ও সড়কে অনিয়ম পেলে ভোক্তা আইনের আওতায় দোষীদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব বাজার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সহযোগিতা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের ভোক্তা স্বার্থবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া ভোক্তাসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে। এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।
অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, প্রতি বছর কোরবানির ঈদ ঘিরে সড়কে পশুবাহী পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। অনেক সময় তা জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রচারিত হয়। চাঁদাবাজি রোধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তদারকি সেল সড়কে কাজ করবে। কার্যালয়ের সদস্যরা কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে মাঠপর্যায়ে তদারকি শুরু করবেন। সঙ্গে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তিনি আরও জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পশুহাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হবে। সঙ্গে জাল টাকার ব্যবহার রোধেও কাজ করা হবে। যাতে ক্রেতা বা বিক্রেতা কেউ প্রতারিত না হয়।
এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে ও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনলাইনে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে যাতে কেউ প্রতারণার শিকার না হয় সেজন্য অনলাইন কেনাকাটায় নজরদারি করা হবে। কেউ প্রতারিত হয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ভোক্তা হটলাইন- ১৬১২১ নম্বরে ফোন করেও অভিযোগ করা যাবে। তিনি বলেন, অনিয়ম পেলে ভোক্তা অধিকার আইনের আওতায় দোষীদের সর্বোচ্চ ও কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। কাউকেই কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, মহাপরিচালকের নির্দেশে ইতোমধ্যে বিশেষ টিম কোরবানির ঈদ ঘিরে বাজার তদারকি করছে। এ টিমের সদস্যরা বাজার তদারকির সঙ্গে পশুর হাটেও তদারকি করবে। এছাড়া কর্মকর্তারা কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পশুহাট তদারকি করবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গাবতলী পশুহাটের ব্যাপারী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ঈদ ছাড়াও এ হাটে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু ও ছাগল এনে বিক্রি করি। গত বছর ঈদের আগে মহাসড়কে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিয়ে কোরবানির পশু হাট পর্যন্ত আনতে হয়েছে। পরিবহন মালিক সমিতির নাম করে বিভিন্ন গ্রুপ টাকা নিয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা নজর দিলে আমরা নির্বিঘ্নে কোরবানির পশু নিয়ে ঢাকার হাটে তুলতে পারব। কম দামেও পশু বিক্রি করতে পারব।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তার সব ধরনের প্রতারণা রোধ করা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কাজ। দোষীদের শাস্তির আওতায় আনাও তাদের দায়িত্ব। বিক্রেতাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া এবং ক্রেতাদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করা তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।