হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এ ধারা ৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া বাড়ছে ঢাকার আশপাশের চার নদ-নদীর পানির সমতল।
এর মধ্যে ডেমরা পয়েন্টে বালু নদ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপদসীমা পার হতে পারে। তবে কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি। কিন্তু বাড়ছে ধরলা নদীতে। গঙ্গা-পদ্মায় স্থিতিশীল থাকলেও আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর মধ্যাঞ্চলে চাপ সৃষ্টি করতে পারে বানের পানি।
পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা বাদে আপার মেঘনায় পানি কমছে। এ ধারা ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এসব তথ্য জানিয়েছে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
চলতি মৌসুমে এটি তৃতীয় দফায় বন্যা হচ্ছে। এবারের এ বন্যা তুলনামূলকভাবে ভয়াবহ। কেননা উত্তরাঞ্চলের নদী তিস্তায় এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫৩ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে পানির সমতল সর্বোচ্চ উঠেছিল ৫৩ মিটার ১২ সেন্টিমিটার। গত একশ’ বছরের মধ্যে সেটাই ছিল এ নদীতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পানিপ্রবাহ। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবারে এ পানি প্রবাহই প্রমাণ করে যে এবারের বন্যা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আর এবারের বন্যা প্রায় ৪০ দিন স্থায়ী হতে পারে- এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, ভয়াবহ বন্যার একমাত্র কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব। কেননা আবহাওয়ার দুটি সিস্টেম সক্রিয় হলে পৃথিবীতে ঝড়-বৃষ্টি বৃদ্ধি পায়।
এর একটি হচ্ছে ‘এল-নিনো বা লা-নিনো’, আরেকটি হচ্ছে ‘ম্যাডেন জুলিয়ান অসিলেশন’ (এমজেও)। কিন্তু বর্তমানে এর দুটির কোনোটিই সক্রিয় নয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং এফএফডব্লিউসির তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে দেশের ২৫ জেলা বন্যা কবলিত। এর মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর ও ঢাকা অঞ্চলে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
কিন্তু কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং নওগাঁতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওইসব জেলার নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাগট, করতোয়া, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, গঙ্গা, আড়িয়ালখাঁ, পুরাতন সুরমা, শীতলক্ষ্যা, কালীগঙ্গা, সুরমা, তিতাস, সোমেশ্বরী অন্তত ৩০ স্থানে বিপদসীমার উপরে বইছে। যে কারণে সৃষ্টি হয়েছে এ বন্যা।
এফএফডব্লিউসি বলছে, ২৭ জুন দেশে বন্যা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, আপার মেঘনা, পদ্মা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অববাহিকায় এবার বন্যা হয়েছে। এগুলোর প্রথম তিনটিতে বন্যা মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি রূপ লাভ করছে। শেষেরটি স্বল্পমেয়াদি বন্যা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রে তৃতীয় দফায় চলা বন্যা ২৭ জুলাই সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, তিস্তায় এবার যে উচ্চতায় পানি উঠেছে তা এ নদীর ইতিহাসে কখনোই হয়নি।
পানির উচ্চতা আগের তুলনায় ৩ সেন্টিমিটার বেশি ওঠায় তিস্তার দুই তীরের মানুষকে ভাসিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, বন্যা এখনও চলছে। আরও ৩-৪ দিন বানের পানি উজান থেকে আসতে থাকবে। তাই সামনের দিনগুলোতে কী হয় তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ বন্যা চলতে পারে বলে আশঙ্কা করা যায়।
ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা বিধৌত জেলা কুড়িগ্রাম। ওই এলাকার সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের বক্তব্যেও ওই এলাকার বন্যার ভয়াবহতার চিত্র পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার আলাপকালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, এবারের বন্যা অনেক ভয়াবহ। যে তীব্রতা আর দ্রুততায় বানের পানি এসেছে, অতীতে আমরা কখনোই এমনটি দেখিনি।
ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন চরে বসবাসরত মানুষ তাদের সহায়-সম্বল সরানোর বেশি সময় পাননি। খুব অল্প সময়ে হু হু করে অনেক পানি এসে কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ত্রাণ নিয়ে গেলে মানুষ বলছেন, তারা ত্রাণ চান না, বাঁচতে চান। বন্যা থেকে বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছেন তারা।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল যুগান্তরকে বলেন, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পেরু-ইকুয়েডর উপকূল বরাবর পানি ৩০ বছরের গড় উষ্ণতার চেয়ে দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে এল-নিনো বা লা-নিনো অবস্থার সৃষ্টি হয়। সৌরজগতের স্বাভাবিক কার্যক্রমের কারণে পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে বয়ে থাকে। তখন ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ লাতিন আমেরিকায় বেশি হয়। কিন্তু এল-নিনো বা লা-নিনো অবস্থা সৃষ্টি হলে উল্টো দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। তখন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ এ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি বেশি হয়। টেলিকানেকশনে ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ তখন বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশেও বেশি হয়ে থাকে। গত বছর এল-নিনো অবস্থা ছিল। জুনের পর থেকে এখন পর্যন্ত লা-নিনো অবস্থা তৈরি হয়নি। তাই ঝড়-বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণ নেই। আবার অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব মেটেওরোলজি (বিওএম) বলছে যে, মেডেন জুলিয়ান অসিলেশন অবস্থাও এবার নেই। সুতরাং এখন আমরা যে বন্যায় ভাসছি তার কারণ আবহাওয়ার কোনো সিস্টেমের কারণেই নয়। এর একমাত্র কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু উষ্ণায়ন। উষ্ণতার কারণে ঝড়-বৃষ্টি ও খরা সবই হতে পারে। চলতি বছর এ উপমহাদেশ আম্পান ও নিসর্গ নামে বড় দুটি সুপার সাইক্লোন পেয়েছে। আর এখন চলছে বন্যার প্রকোপ। ভবিষ্যৎ বড় বন্যা থেকে বাঁচতে হলে অববাহিকাভিত্তিক বহুপক্ষীয় কমিশন গঠন করতে হবে।
এ অধ্যাপক আরও বলেন, ২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে তারা একটি গবেষণা করেছেন। তাতে বেরিয়ে এসেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২০ সাল নাগাদ ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানিপ্রবাহ ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে। চীন, ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল তৈরি হবে। সেই পানি প্রবাহিত হবে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ এ দীর্ঘ নদে। এর ফলে বন্যার প্রকোপ বাড়বে। তিস্তায় পানি প্রবাহে রেকর্ড ভঙ্গ এবং এক মাসে তিন দফা বন্যা আমাদের গবেষণার সঠিকতা প্রমাণ করেছে। তাছাড়া ২০১৭ সালের পর ৪ বছরে তিনটি বন্যা হয়ে গেল। ওই গবেষণায় ভবিষ্যতে গঙ্গা-পদ্মায় ১৪ শতাংশ এবং মেঘনা অববাহিকায় ২১ শতাংশ পানি বেশি আসবে বলে বেরিয়ে এসেছে। এবার মেঘনা অববাহিকাভুক্ত সিলেট অঞ্চলেও তিন দফা বন্যা হচ্ছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত একদিনে ৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে তা স্থানীয় বন্যায় পরিণত হয়। কিন্তু ৩০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হলে তা ১০ দিনব্যাপী বন্যার কারণ হতে পারে। সেই হিসাবে গত ৩-৪ বছর ধরে অল্পসময়ে উল্লিখিত পরিমাণের সমান বা কখনও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে তা শুধু স্বল্পমেয়াদিই নয়, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় পরিণত হয়েছে।
সারা দেশের চিত্র : গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল ও মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রংপুরে তিস্তা-ঘাঘটের ভাঙন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। ৩ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
পানিবন্দি মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর বাসস্থান ও খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে তাদের গবাদিপশু নিয়ে উঁচু রাস্তা ও ব্রিজে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু কিছু এলকায় দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সংকট। কোরবানির ঈদ অত্যাসন্ন হওয়ায় পশুর হাট বসানো নিয়ে ইজারাদাররা যেমন বিপাকে রয়েছেন তেমনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পশু বিক্রেতারা। যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা, করতোয়াসহ সব নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার বিকাল ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ১৬ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৭ সে.মি., ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে ১৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৬ সে.মি. এবং করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে ২৩ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ সময় তিস্তা নদীর পানি ৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমার নিচে রয়েছে। করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে গোবিন্দগঞ্জের ৬টি ইউনিয়নসহ পৌরসভার সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রংপুর : রংপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও ভাঙন থামেনি। তিস্তা ও ঘাঘটসহ জেলার অন্য নদ-নদীগুলোতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ এলাকার তিস্তার বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধটি। পানির তোড়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার ২ ইউনিয়নের ৩ শতাধিক ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে একটি মাদ্রাসা। কাউনিয়াতেও তিস্তা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শতাধিক স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ি ইউনিয়নের পিয়ারপাড়া ও কুটিরপাড়া গ্রাম ঘাঘট নদীর ভাঙনে পড়ে বিলীনের পথে।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে তিস্তার পানি কমলেও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকাল ৫টায় তা কিছুটা কমে ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশল মিজানুর রহমান।
শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৫০টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভা অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বুধবার পদ্মা নদীর পানি সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সে. মিটার ছিল। বৃহস্পতিবারও ৩৫ সে. মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিব হাসান। শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়ক তলিয়ে হাঁটু পানিতে ডুবে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় ক’দিনের বন্যায় অন্তত একশ’ মাছচাষ প্রকল্প গড়া পুকুর ভেসে গেছে। এ বছর বন্যায় উপজেলার মাছ চাষীরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার উপজেলায় পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বিপদসীমার এক মিটার (১০০ সে.মি.) উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুর : টাঙ্গাইলে যুমনা নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় যমুনা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে নতুন করে টাঙ্গাইল শহরতলিসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রায় সাত হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। নয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ৪১৩টি গ্রামের প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ভূঞাপুরে মধ্যঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার : সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্য পারিস্থিতির উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বুধবার বিকাল থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমায় পানি কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে নদীতে পানির উচ্চতা হ্রাস পেলেও হাওরের পানি কমছে ধীরগতিতে।
অপরদিকে ছাতক-দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধস, দীর্ঘ ভাঙন, ফাটল ও স্থানে স্থানে পানি থাকায় ২৫ দিন ধরে জেলা সদরের সঙ্গে দোয়ারাবাজারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর (জামালপুর) : দেওয়ানগঞ্জের বাহাদূরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ১৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ৮০ মিলিমিটার রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইসলামপুর উপজেলায় বন্যায় প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দিন যাপন করছে।
শেরপুর : ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে শেরপুর সদর, শ্রীবরদী ও নকলা উপজেলার চরাঞ্চলের ১২টি ইউনিয়নের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নালিতাবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পোড়ার দোকান ও শিমুলতলী ডাইভারশনের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার ভাগ্যকূল পয়েন্টে বৃহস্পতিবার পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার এবং মাওয়া পয়েন্টে ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা বিগত কয়েকদিনের মধ্যে রেকর্ড। পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা সংলগ্ন লৌহজং উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।