থামছে না তিস্তার ভাঙন, হুমকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও ভাঙন থামেনি। তিস্তা ও ঘাঘটসহ জেলার অন্যান্য নদনদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের হাজারও মানুষ। মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে তিস্তার বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধটি।

শ্রাবণের বর্ষণ আর উজানের ঢলে গেল ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তা ও ঘাঘটবেষ্টিত নিম্নাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অশান্ত তিস্তার স্রোতে নদীপাড়ে ভাঙন থামছেই না। বিভিন্ন জায়গাতে বাড়িঘর, গাছপালা আর বসতভিটা আবাদি জমি ক্ষেতের ফসল নদীর পেটে চলে যাচ্ছে।

জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, হারাগাছ, পীরগাছা, তারাগঞ্জ উপজেলাসহ রংপুর মহানগরেরও বেশ কিছু এলাকাতে ছোট ছোট ব্রিজ, কালভার্ট ও যান চলাচলের সড়ক মারাত্মক ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। কোথাও কোথাও বাঁধের পাশাপাশি ব্রিজ ও কালভার্টের সংযোগ সড়ক ধসে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে যোগাযোগব্যবস্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গঙ্গাচড়ায় তিস্তার বন্যা নিরপত্তা বাঁধের তিনটি অংশে প্রায় ১৩০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে। সেখানকার আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান আকবরিয়া ইউসুফিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসার সামনে তিস্তার স্রোতে ধসে পড়েছে ৬০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

এতে ওই মাদ্রাসাসহ পাশের পাইকান জুম্মাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাউদপাড়া আলিম মাদ্রাসা ও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও হাজারখানেক পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে।

এদিকে ভাঙন ঠেকাতে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) জিওব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে।

তবে চাহিদার তুলনায় জিওব্যাগের সংখ্যা অনেক কম বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ ছাড়া ওই ইউনিয়নের গাটুপাড়ায় ৪০ ও বেরাতিপাড়ায় ৩০ মিটার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সিসি ব্লক ধসে গেছে।

অন্যদিকে নোহালী ইউনিয়নের ফোটামারি ‘টি হেড গ্রোয়েন’ ও আলসিয়াপাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ ভাঙনের মুখে পড়ায় সেখানেও জিওব্যাগে বালু ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সড়ক ভেঙে যাওয়ায় গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক থেকে গাউছিয়া বাজার এবং পূর্ব রমাকান্ত থেকে গাউছিয়া বাজার যাওয়ার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এখন পর্যন্ত গঙ্গাচড়ায় তিনটি ব্রিজের সংযোগ সড়ক ধসে গেছে।

এতে করে দুটি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। রুদ্রেশ্বরের একটি ব্রিজের সংযোগ সড়কের ৪০ ফুট ধসে যাওয়ায় গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের বিনবিনার চর, পূর্ব ইচলী, পশ্চিম ইচলীসহ পাঁচ গ্রামের হাজারও মানুষ যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

মর্ণেয়ার শেখপাড়ায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজটির সংযোগ সড়কের মাটি পানির তোড়ে ধসে গেছে। এতে হাজিপাড়া, মর্ণেয়া, আনন্দবাজারসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের ব্রিজ দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে।

এ ছাড়া মর্ণেয়া ইউনিয়নে জমচওড়ার ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজের সংযোগ সড়ক ভেঙে জমচওড়া, আলালেরহাট, ছালাপাকসহ আশপাশ এলাকার ২ হাজারের বেশি মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চকতাহিরা-দর্জিপাড়া রাস্তায় অবস্থিত ব্রিজ দেবে গিয়ে প্রায় ২০ ফুট রাস্তাটি ভেঙে গেছে। এতে করে ১০ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

প্রায় ৩২ বছর পূর্বে নির্মিত ব্রিজটির ডান দিকের দুটিই গাইড ওয়াল ভেঙে গেছে। এতে ব্রিজটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন থেকে মেরামতের কোনো উদ্যোগ না নেয়াতে ব্রিজটি এখন হুমকির মুখে।

এদিকে কাউনিয়াতেও তিস্তা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শতাধিক স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। এতে বাঁধটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। সেখানকার হারাগাছ, বাংলাবাজার, ঠাকুরদাস, নাজিরদহ, বকুলতলা, মেনাজবাজারসহ আশপাশের ১৫ গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, ঠাকুরদাস, বকুলতলা এলাকার পশ্চিম দিকে তিস্তা ডানতীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ধসে ৫ থেকে ৭ ফিট করে বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরদারির অভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাগঞ্জ, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক বাড়িঘর ও শতশত একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানেও হুমকির মুখে আছে যোগযোগব্যবস্থা।

এদিকে গত ৪৮ ঘণ্টায় থেমে থেমে হওয়া আষাঢ়ের বৃষ্টিতে রংপুর মহানগরীর দমদমা লক্ষণপাড়া ও শরেয়ারতল মোল্লাপাড়ায় সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির তোড়ে ওই গ্রাম দুটির মূল সড়কে সৃষ্ট ভাঙনে কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। এ ছাড়া নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি পাকা সড়কেরও ক্ষতি হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, ভাঙন রোধে তিস্তাসহ অন্যান্য নদী এলাকা খোঁজ নিয়ে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া বাঁধরক্ষায় বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। অনেক জায়গাতে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনসহ স্থানীয়রা মিলে ধস মোকাবেলায় কাজ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বন্যার কারণে হুমকির মুখে থাকা যোগাযোগব্যবস্থার প্রতি খেয়াল রয়েছে। ভাঙন রোধে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ব্রিজগুলো রক্ষা ও সংযোগ সড়ক তৈরিতে ব্রিজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, এলজিইডি বা জেলা পরিষদ পরিকল্পনা ছাড়াই তাদের সুবিধামতো সংস্কারকাজ করছেন বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর