হাওর বার্তা ডেস্কঃ মরক্কোর ঐতিহাসিক নগরী সাবতা। জগৎ বরেণ্য মুহাদ্দিস কাযী ইয়াজ (রহ.) [৪৭৬-৫৪৪ হি.], পরিব্রাজক ইবনু রুশাইদ [৬৫৭-৭২১হি.] এবং প্রখ্যাত ভূগোলবিদ নিখুঁত ‘বিশ্ব মানচিত্র’র সফল অঙ্কনকারী শারিফ আল-ইদ্রিসির [৪৯৩-৫৫৯] জন্মভূমি সাবতা। সাবতাই আন্দালুস (মুসলিম স্পেন) বিজেতা মুসা বিন নুসাইর, তারিক বিন জিয়াদ আর তারিফ বিন মালিকদের প্রবেশপথ।
ছয় শতাব্দীকাল ধরে সাবতা স্পেনের উপনিবেশ। স্পেনীয়রা এর নাম বদলে রেখেছে সিউটা (ঈবঁঃধ)। পশ্চিমা মিডিয়ার অনুকরণে মরক্কোর দেশীয় মিডিয়াগুলোও এই উপনিবেশকে স্পেনীয় ছিটমহল বলে প্রচার করে।
সাবতার ভৌগোলিক অবস্থান
তিনদিকে ভূমধ্যসাগর বেষ্টিত সাবতা শহর। শহরটির পশ্চিম দিকে রয়েছে ইতিহাসের মহাপরিব্রাজক ইবনে বতুতার শহর তনজা। ঠিক উল্টো দিকে আছে ‘জাবালু তারিক’ বা জিব্রাল্টার। ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ এ শহরটির মোট আয়তন ১৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৯০ হাজারের কাছাকাছি।
মুসলমান ও খ্রিস্টান এখানকার উল্লেখযোগ্য দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়। অল্পসংখ্যক ইহুদি ও হিন্দু রয়েছে। মুসলমান ২৮.৩%, খিস্টান ৬৮%। তবে স্পেনভিত্তিক মুসলিম সংস্থা ওংষধস ঊংঢ়ধধ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩%। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুসলিম জন্মহার বেড়েছে ৪০%।
সাবতার ইতিহাস-ঐতিহ্য
মরক্কোর অবিচ্ছেদ্য অংশ সাবতার ইতিহাস কোনোক্রমেই মুসলিম আন্দালুস ও মরক্কোর ইতিহাস থেকে ভিন্ন নয়। মুরাবিত, মুওয়াহহিদ ও আলমারিনিরা এটি শাসন করেছে শত শত বছর। আন্দালুসে মুসলিম শাসন দুর্বল হয়ে পড়লে ১৪১৫ সালে পর্তুগিজরা শহরটি দখলে নিয়ে নেয়। ১৫৮০ সালে রোমান ক্যাথলিক চার্চের নির্দেশে শহরটির দখল করে নেয় স্পেন। মরক্কোবাসী সাবতায় বিদেশি দখলদার শক্তির অস্তিত্ব মেনে নেয়নি।
দিকে দিকে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। সাবতা পুনরুদ্ধারে ১১৬ বার অবরোধ আরোপ করেছিল মুসলমানরা। সুলতান ইসমাঈল লাগাতার ৩৩ বছর অবরোধ করেও ব্যর্থ হন। বিংশ শতকের শুরুর ভাগে মরক্কোর উপনিবেশবিরোধী পল্লী আন্দোলনের অগ্রণী সেনানী আবদুল কারিম খাত্তাবি (রহ.) বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও সফল হতে পারেননি।
বর্তমান পরিস্থিতি
স্পেন অধিকৃত সাবতায় দখলদারী মজবুত করতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে দখলের পর থেকেই স্পেন অধিকৃত সাবতার ইসলামি পরিচয় মুছে ফেলতে সচেষ্ট রয়েছে। ড. রাগিব সারজানি বলেন, মুসলিম শাসনামলে সাবতা কাইরাওয়ানের চেয়েও সমৃদ্ধিশালী ছিল। এতে ছিল সহস্রাধিক মসজিদ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগদ্বিখ্যাত অনেকগুলো মহাবিদ্যালয়। আর সমৃদ্ধ বহু সংখ্যক পাঠাগার। মসজিদগুলোকে গির্জায় পরিণত করা হয়েছে। পাঠাগারের গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো পাচার করা হয়েছে ওপারের ক্যাথিড্রাল গ্রন্থালয়গুলোতে। পুরো শহরটিতে মাত্র পাঁচটি মসজিদ রয়েছে। ইসলামি স্থাপত্য বলতে আট দশক আগের মাওলা আল-মাহদি মসজিদ, রাজকীয় নগরপ্রাচীর আর কিছু জীর্ণ দুর্গ ও গোসলখানা অবশিষ্ট রয়েছে। এগুলোও বর্তমানে অযত্নে-অনাদরে ধ্বংসপ্রায়।
নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে স্পেনের কর্মকর্তাদের আনাগোনা বেড়েছে বহুগুণে। সামরিক মহড়াও বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। ২০০৭ সালের নভেম্বরে স্পেনীয় রাজা ঔধঁহ ঈধৎষড়ং এর সাবতা সফর তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল মরক্কো ও আলজেরিয়া জুড়ে।
স্পেনের মিডিয়া মুসলমানদের সবসময় নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। উপরন্তু রক্ষণশীল ডানপন্থিরা ইসলামোফোবিয়া উসকে দিয়ে ভোটব্যাংক বাড়াতে বেশ তৎপর। সরকার প্রশাসনে মোটেই মুসলিম নিয়োগ দেয় না। মুসলমানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অনুৎসাহিত করা হয়। চল্লিশ শতাংশের বেশি মুসলিম যুবক বেকার জীবনযাপন করছে।
তথ্যঋণ : মুস্তফা বারজাভি, আলুকা নেট, ২১/৮/২০০৮; হামিদ বিন খাবিস, ইসলামস্টোরি : ১১/০৪/২০১১; বানাসা নেট : ৫/২/২০২০.