ঢাকা ১০:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না পশু খামারিদের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
  • ২১০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদ আমাদের কাছে কোরবানির ঈদ বলেই বেশি পরিচিত। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের পশু খামারিদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। কারণ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনও কমেনি, বাংলাদেশে বরং আরও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় খামারিরা পশু বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাবেন কিনা এসব বিষয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আতঙ্কে রয়েছেন দেশের পশু খামারিরা।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা নিয়ে তারা এখনো দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেননি। মূলত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সারাবছর গরু লালন-পালনে তারা বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই এখন পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন দেশের এসব খামারিরা।

 বর্তমানে দেশে লাখ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এমনকি কিছু উট এবং দুম্বার খামারও গড়ে উঠেছে। গ্রামের একজন বিধবা মহিলা বা সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে লাখ লাখ মানুষ গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করেন। এখন অনেক শিক্ষিত যুবক ডেইরি ফার্ম এবং গরু মোটা তাজাকরণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যে কারণে সারাদেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় বড় গরু/ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। সারাবছর কসাইেদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি কিছু কিছু স্পেশাল গরু তারা তৈরি করা হয় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে মোট পশুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। সবমিলিয়ে এবারও কোরবানির জন্য ১ কোটি ২০ লাখের ওপরে প্রস্তুত রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ পশু প্রস্তুত ছিল। আর গত বছর কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ। ১২ লাখ পশু অবিক্রিত ছিল। যা এবার আবার বাজারে উঠবে।

কথা হয় শেরপুর জেলার খামারি তৌহিদুর রহমান পাপ্পুর সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যারা খামারি সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। বড় এবং দেখতে সুন্দর গরুগুলো কোরবানিতে ৩/৪ লাখ টাকা বিক্রির আশায় ভালো ভালো খাবার দিয়ে পালন করে যদি সেগুলো বিক্রি না হয় তাহলে আমাদের প্রচুর লস হয়।

এই খামারি বলেন, এত টাকা বিনিয়োগ করে যদি কোরবানির ঈদে গরুর দাম ভালো না পাই তাহলে আমাদের খামারিদের দুঃখের সীমা থাকবে না। গরু পালন করতে গিয়ে অনেকে লোন হয়েছে। ধার-দেনা করে কোরবানির আাশায় গরু পালন করেছি। করোনার বর্তমান অবস্থায় এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খামারি আবদুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, এবার সারা বছর ৫৮টি গরু লালন-পালন করেছি কোরবানির আশায়। এখন করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, সারাবছর আমরা পরিশ্রম করে গরু পালন করি, কিন্তু আমরা বেশি লাভ করতে পারি না। কয়েক বছর ধরে ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ খেকে গরু কিনে অনলাইনে ছবি দিয়ে বিক্রি করে ফায়দা লোটে। তার মধ্যে এবার গো-খাদ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। এ কারণে গরু পালনে খরচও বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অনেকেই গরুর হাটে আসবে না। তখন বাজার ফ্লপ করবে। এ অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমার ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লস হবে।

দুঃখ করে তিনি বলেন, এইবার যদি লস হয় আর গরুর ব্যবসাই করব না।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গরু খামারি বেলায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে দুধে এক দফা মার খেয়েছি। এখন পর্যন্ত দুধে লাভ নেই। কারণ দুধের দামের চেয়ে ভুসির দাম বেশি। এ অবস্থায় কোনো খামারি ভালো নেই। মিল্ক ভিটাও পুরো দুধ নিচ্ছে না। তারা অর্ধেক দুধ নিচ্ছে। বাকি অর্ধেক দুধ আমাদের ফেরি করে বিক্রি করতে হয়।

তিনি বলেন, দুধ দিয়ে কখনও ফার্মের লাভ আশা করা যায় না। আমরা তাকিয়ে থাকি কোরবানির দিকে। কোরবানিকে কেন্দ্র করেই আমরা ২৫/৩০টি ষাঁড় লালন-পালন করে থাকি। সেই কোরবানিতে যদি গরুর ন্যায্য দাম না পাই তাহলে খামারিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, এ বছরও আমাদের দেশে যে পশু আছে তা কোরবানির জন্য যথেষ্ট। দেশের বাইরে থেকে গরু আনার কোনো প্রয়োজন নেই। গত বছর অমাদের কোরবানিযোগ্য পশু ছিল প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ। গত বছরের প্রস্ততকৃত প্রায় ১২ লাখ পশু সারপ্লাস ছিল। এবারও সারপ্লাস হবে ইনশাল্লাহ। কোনবানির পশুর কোনো অভাব হবে না।

তিনি বলেন, এবার সারাদেশে কোরবানিযোগ্য পশু কত এর একটা জরিপ চলছে। আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে জরিপের ফলাফল হাতে পাব। তখন নির্দিষ্ট করে বলা যাবে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা।

গত বছরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারও প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখের মতোই হবে। এবার বাড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে অনেকেই কোরবানির পশু তৈরি করতে পারেননি।

দেশের বাইরে থেকে কোরবানির পশু আনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, গত দুই বছর ধরে কোরবানির জন্য বাইরে থেকে কোনো পশু আমদানি করা হয় না। আমাদের দেশের কৃষক ও খামারিরা যে পশু লালন-পালন করেন সেটাই যথেষ্ট। বরং আরও কিছু সারপ্লাস থাকে। এবারও বাইরে থেকে পশু আনার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না পশু খামারিদের

আপডেট টাইম : ১০:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদ আমাদের কাছে কোরবানির ঈদ বলেই বেশি পরিচিত। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের পশু খামারিদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে। কারণ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনও কমেনি, বাংলাদেশে বরং আরও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় খামারিরা পশু বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাবেন কিনা এসব বিষয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আতঙ্কে রয়েছেন দেশের পশু খামারিরা।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা নিয়ে তারা এখনো দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেননি। মূলত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সারাবছর গরু লালন-পালনে তারা বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাই এখন পশু বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন দেশের এসব খামারিরা।

 বর্তমানে দেশে লাখ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এমনকি কিছু উট এবং দুম্বার খামারও গড়ে উঠেছে। গ্রামের একজন বিধবা মহিলা বা সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে লাখ লাখ মানুষ গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করেন। এখন অনেক শিক্ষিত যুবক ডেইরি ফার্ম এবং গরু মোটা তাজাকরণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যে কারণে সারাদেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় বড় গরু/ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। সারাবছর কসাইেদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি কিছু কিছু স্পেশাল গরু তারা তৈরি করা হয় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে মোট পশুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। সবমিলিয়ে এবারও কোরবানির জন্য ১ কোটি ২০ লাখের ওপরে প্রস্তুত রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ পশু প্রস্তুত ছিল। আর গত বছর কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ। ১২ লাখ পশু অবিক্রিত ছিল। যা এবার আবার বাজারে উঠবে।

কথা হয় শেরপুর জেলার খামারি তৌহিদুর রহমান পাপ্পুর সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যারা খামারি সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। বড় এবং দেখতে সুন্দর গরুগুলো কোরবানিতে ৩/৪ লাখ টাকা বিক্রির আশায় ভালো ভালো খাবার দিয়ে পালন করে যদি সেগুলো বিক্রি না হয় তাহলে আমাদের প্রচুর লস হয়।

এই খামারি বলেন, এত টাকা বিনিয়োগ করে যদি কোরবানির ঈদে গরুর দাম ভালো না পাই তাহলে আমাদের খামারিদের দুঃখের সীমা থাকবে না। গরু পালন করতে গিয়ে অনেকে লোন হয়েছে। ধার-দেনা করে কোরবানির আাশায় গরু পালন করেছি। করোনার বর্তমান অবস্থায় এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খামারি আবদুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, এবার সারা বছর ৫৮টি গরু লালন-পালন করেছি কোরবানির আশায়। এখন করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, সারাবছর আমরা পরিশ্রম করে গরু পালন করি, কিন্তু আমরা বেশি লাভ করতে পারি না। কয়েক বছর ধরে ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ খেকে গরু কিনে অনলাইনে ছবি দিয়ে বিক্রি করে ফায়দা লোটে। তার মধ্যে এবার গো-খাদ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। এ কারণে গরু পালনে খরচও বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অনেকেই গরুর হাটে আসবে না। তখন বাজার ফ্লপ করবে। এ অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমার ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লস হবে।

দুঃখ করে তিনি বলেন, এইবার যদি লস হয় আর গরুর ব্যবসাই করব না।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গরু খামারি বেলায়েত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে দুধে এক দফা মার খেয়েছি। এখন পর্যন্ত দুধে লাভ নেই। কারণ দুধের দামের চেয়ে ভুসির দাম বেশি। এ অবস্থায় কোনো খামারি ভালো নেই। মিল্ক ভিটাও পুরো দুধ নিচ্ছে না। তারা অর্ধেক দুধ নিচ্ছে। বাকি অর্ধেক দুধ আমাদের ফেরি করে বিক্রি করতে হয়।

তিনি বলেন, দুধ দিয়ে কখনও ফার্মের লাভ আশা করা যায় না। আমরা তাকিয়ে থাকি কোরবানির দিকে। কোরবানিকে কেন্দ্র করেই আমরা ২৫/৩০টি ষাঁড় লালন-পালন করে থাকি। সেই কোরবানিতে যদি গরুর ন্যায্য দাম না পাই তাহলে খামারিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, এ বছরও আমাদের দেশে যে পশু আছে তা কোরবানির জন্য যথেষ্ট। দেশের বাইরে থেকে গরু আনার কোনো প্রয়োজন নেই। গত বছর অমাদের কোরবানিযোগ্য পশু ছিল প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ। গত বছরের প্রস্ততকৃত প্রায় ১২ লাখ পশু সারপ্লাস ছিল। এবারও সারপ্লাস হবে ইনশাল্লাহ। কোনবানির পশুর কোনো অভাব হবে না।

তিনি বলেন, এবার সারাদেশে কোরবানিযোগ্য পশু কত এর একটা জরিপ চলছে। আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে জরিপের ফলাফল হাতে পাব। তখন নির্দিষ্ট করে বলা যাবে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা।

গত বছরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবারও প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখের মতোই হবে। এবার বাড়ার সম্ভাবনা কম। কারণ অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে অনেকেই কোরবানির পশু তৈরি করতে পারেননি।

দেশের বাইরে থেকে কোরবানির পশু আনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, গত দুই বছর ধরে কোরবানির জন্য বাইরে থেকে কোনো পশু আমদানি করা হয় না। আমাদের দেশের কৃষক ও খামারিরা যে পশু লালন-পালন করেন সেটাই যথেষ্ট। বরং আরও কিছু সারপ্লাস থাকে। এবারও বাইরে থেকে পশু আনার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।