ঢাকা ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সূর্যমুখী ফুল চাষে কৃষকের স্বপ্ন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ ২০২০
  • ২৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ত্রিমোহন গ্রামের কৃষক মিলন মিয়া। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় (উপসী জাত) চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষক মিলন ছাড়াও আরো কয়েকজন চাষি। এরই মধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে।

চারিদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছে সে এক অপরুপ দৃশ্য। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসু মানুষ সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত দেখতে আসছে। অনেকেই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। এ ফুল চাষে ব্যাপক সম্প্রসারণ সম্ভব বলে দাবি কৃষি অফিসের।

সরজমিন ঘুরে চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, এ বছর এই উপজেলাতে তারাই সর্বপ্রথম এই ফুল চাষ করেছেন। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী ফুল চাষে সাফল্য আসবে এমনটিও আশা তাদের। পাশাপাশি ফুল থেকে উৎপাদিত তেল ও বীজ বিক্রি করে অধিক লাভবান হবেন এমনটিও মনে করছেন খেটে-খাওয়া চাষিরা।

মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউপির ত্রিমোহন এলাকায় কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় বাণিজ্যিকভাবে পাঁচ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেন প্রধান উদ্যোক্তা চাষি মিলন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই পুরো বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এতেই সবার নজর পড়ে সূর্যমুখী বাগানে।

যতোদূর চোখ যায় দেখে মনে হয় বিশাল আয়তনের হলুদ এক গালিচা। চোখে পড়ে শুধু সূর্যমুখী ফুল। আর এই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মনোরম দৃশ্য স্মৃতির পাতায় বন্দি করছেন অনেকেই। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফুটে থাকা এই ফুল দর্শনার্থীদের টানছে এক আমোঘ আকর্ষণে। ফুল ফোটার শুরু থেকেই প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এ সূর্যমুখী বাগানে আসতে শুরু করেছে। হলদে ফুলের সমারোহে হারিয়ে যেতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন সূর্যমুখী বাগানে।

এদিকে সূর্যমুখী ফুল চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মশিউর রহমান।

কৃষি অফিস তথ্যমতে চলতি বছর টাঙ্গাইল জেলাসহ  ১২টি উপজেলায় এ ফুল চাষ করা হয়েছে। এ মৌসুমে মির্জাপুর উপজেলায় ২.৫ টন বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নে পাঁচ জন কৃষককে সরকারিভাবে প্রতি বিঘা জমিতে চাষের জন্য ১.৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওটি সার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।

লতিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, এই ফসলটি মির্জাপুর উপজেলার চাষিদের জন্য সুখবর বয়ে আনতে যাচ্ছে। খুব অল্প টাকায় বেশি মুনাফা সম্ভব এই চাষের মাধ্যমে। এই ফুলের বীজ থেকে আমরা যে তেল পাবো সেটায় ক্ষতিকর কলেস্টেরল নেই।

পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী ফুল চাষের জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। বাজারে সরিষা ভাঙ্গানোর মেশিনের মাধ্যমেই এই বীজ ভাঙ্গিয়ে আমরা খাবার তেল পেতে পারি। পরীক্ষামূলক পাঁচ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষে আমরা ১৫০০-১৬০০ কেজি বীজ আশা করছি। যেখান থেকে আমরা তেল উৎপাদন করতে পারবো।

এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, এ উপজেলায় সর্বপ্রথম সরকারি প্রণোদনায় সূর্যমুখী বীজ ও সার সহায়ক হিসেবে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে এ ফুলের চাষ করা হয়েছে।

এ সূর্যমুখী ফুল থেকে উৎপাদিত তেলে ৪০ ভাগ লিনোলিক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অত্যন্ত ভালো। এ ফুল থেকে তেল উৎপাদন করতে পারলে দেশের মানুষের ভোজ্য তেলের যে চাহিদা তা এই ফুলের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারলে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল খেতে পারবে। এ ফুল চাষে চাষি লাভবান হবেন বলেও আশা করেন তিনি।

চাষি মিলনের মাধ্যমে পরবর্তী বছরে সারা মির্জাপুর উপজেলায় এ ফুল চাষের খবর ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে দাবি করেন এবং এরই মধ্যেই অনেক কৃষক এ সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সূর্যমুখী ফুল চাষে কৃষকের স্বপ্ন

আপডেট টাইম : ০৯:৪৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ত্রিমোহন গ্রামের কৃষক মিলন মিয়া। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় (উপসী জাত) চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষক মিলন ছাড়াও আরো কয়েকজন চাষি। এরই মধ্যেই গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে।

চারিদিকে হলুদ ফুল আর সবুজ গাছে সে এক অপরুপ দৃশ্য। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসু মানুষ সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেত দেখতে আসছে। অনেকেই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। এ ফুল চাষে ব্যাপক সম্প্রসারণ সম্ভব বলে দাবি কৃষি অফিসের।

সরজমিন ঘুরে চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, এ বছর এই উপজেলাতে তারাই সর্বপ্রথম এই ফুল চাষ করেছেন। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী ফুল চাষে সাফল্য আসবে এমনটিও আশা তাদের। পাশাপাশি ফুল থেকে উৎপাদিত তেল ও বীজ বিক্রি করে অধিক লাভবান হবেন এমনটিও মনে করছেন খেটে-খাওয়া চাষিরা।

মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউপির ত্রিমোহন এলাকায় কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় বাণিজ্যিকভাবে পাঁচ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেন প্রধান উদ্যোক্তা চাষি মিলন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই পুরো বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এতেই সবার নজর পড়ে সূর্যমুখী বাগানে।

যতোদূর চোখ যায় দেখে মনে হয় বিশাল আয়তনের হলুদ এক গালিচা। চোখে পড়ে শুধু সূর্যমুখী ফুল। আর এই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মনোরম দৃশ্য স্মৃতির পাতায় বন্দি করছেন অনেকেই। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফুটে থাকা এই ফুল দর্শনার্থীদের টানছে এক আমোঘ আকর্ষণে। ফুল ফোটার শুরু থেকেই প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এ সূর্যমুখী বাগানে আসতে শুরু করেছে। হলদে ফুলের সমারোহে হারিয়ে যেতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন সূর্যমুখী বাগানে।

এদিকে সূর্যমুখী ফুল চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মশিউর রহমান।

কৃষি অফিস তথ্যমতে চলতি বছর টাঙ্গাইল জেলাসহ  ১২টি উপজেলায় এ ফুল চাষ করা হয়েছে। এ মৌসুমে মির্জাপুর উপজেলায় ২.৫ টন বীজ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নে পাঁচ জন কৃষককে সরকারিভাবে প্রতি বিঘা জমিতে চাষের জন্য ১.৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওটি সার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।

লতিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, এই ফসলটি মির্জাপুর উপজেলার চাষিদের জন্য সুখবর বয়ে আনতে যাচ্ছে। খুব অল্প টাকায় বেশি মুনাফা সম্ভব এই চাষের মাধ্যমে। এই ফুলের বীজ থেকে আমরা যে তেল পাবো সেটায় ক্ষতিকর কলেস্টেরল নেই।

পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী ফুল চাষের জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। বাজারে সরিষা ভাঙ্গানোর মেশিনের মাধ্যমেই এই বীজ ভাঙ্গিয়ে আমরা খাবার তেল পেতে পারি। পরীক্ষামূলক পাঁচ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষে আমরা ১৫০০-১৬০০ কেজি বীজ আশা করছি। যেখান থেকে আমরা তেল উৎপাদন করতে পারবো।

এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, এ উপজেলায় সর্বপ্রথম সরকারি প্রণোদনায় সূর্যমুখী বীজ ও সার সহায়ক হিসেবে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে এ ফুলের চাষ করা হয়েছে।

এ সূর্যমুখী ফুল থেকে উৎপাদিত তেলে ৪০ ভাগ লিনোলিক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অত্যন্ত ভালো। এ ফুল থেকে তেল উৎপাদন করতে পারলে দেশের মানুষের ভোজ্য তেলের যে চাহিদা তা এই ফুলের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারলে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল খেতে পারবে। এ ফুল চাষে চাষি লাভবান হবেন বলেও আশা করেন তিনি।

চাষি মিলনের মাধ্যমে পরবর্তী বছরে সারা মির্জাপুর উপজেলায় এ ফুল চাষের খবর ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে দাবি করেন এবং এরই মধ্যেই অনেক কৃষক এ সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।