ঢাকা ০৪:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে দাঁড়ানো অপছন্দ করতেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২৩৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কাব বিন মালিক (রা.) নিজের সম্পর্কে বর্ণনা করেন, তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার পর আল্লাহ যখন তাঁকে ক্ষমা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজের সময় আমাদের ক্ষমা লাভের ঘোষণা দেন। তখন দলে দলে মানুষ আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং তওবার জন্য অভিনন্দন জানায়। তারা বলে, ‘আল্লাহর ক্ষমা লাভের জন্য তোমাদের  অভিনন্দন।’ অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। রাসুল (সা.) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর চতুষ্পার্শ্বে মানুষ ছিল। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) আনন্দের সঙ্গে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার সঙ্গে মুসাফা করলেন এবং অভিনন্দন জানালেন। এ ছাড়া মুহাজির বা অন্য কেউ এগিয়ে এলো না। বিষয়টি তালহা পছন্দ করল না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪১৮)

আলোচ্য হাদিস দ্বারা নবী যুুগের মুসলিম সমাজের দুটি অভ্যাস সম্পর্কে জানা যায়। এক. কেউ ভালো কাজ করলে বা দ্বিনি বিষয়ে সাফল্য লাভ করলে তাকে অভিনন্দন জানানো। দুই. কোনো ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সাধারণ রীতি ছিল না।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) লাঠির ওপর ভর করে আমাদের কাছে এলেন। আমরা তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি বললেন, তোমরা দাঁড়িয়ো না, যেমন অনারবরা পরস্পরের প্রতি দাঁড়ায়।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫২৩০)

আল্লামা ইবনে কুতাইবা (রহ.) বলেন, ‘এই হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, অনারব রাজা-বাদশার দরবারে সাধারণ মানুষ যেভাবে মাথানত করে দাঁড়িয়ে থাকে।’ (বাজলুল মাজহুদ ফি শরহি আবি দাউদ : ২০/১৬৯) অর্থাৎ কোনো মানুষের প্রতি এমনভাবে সম্মান প্রদর্শন করা যাবে না যার সঙ্গে ইবাদতের সাদৃশ্য তৈরি, যাতে মানুষের সাধারণ সম্মান ক্ষুণ্ন হয় এবং ব্যক্তির জন্য অহংকার ও অহমিকা তৈরি হয়।

কার আগমনে দাঁড়াব, কার আগমনে দাঁড়াব না
আবুল ওয়ালিদ বিন রুশদ কারো জন্য দাঁড়ানোর চারটি প্রকার নিরূপণ করেছেন। তা হলো, ১. মাহজুর বা নিষিদ্ধ : যখন কোনো ব্যক্তি প্রত্যাশা করে মানুষ তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকুক। এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো নিষিদ্ধ। কেননা তা ব্যক্তির অহংকার ও অহমিকা বাড়িয়ে দেয়।

২. মাকরুহ বা অপছন্দনীয় : যে ব্যক্তির মনে অহংকার থাকে না এবং সে প্রত্যাশাও করে না মানুষ তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে থাকুক, তবে এই ভয় থাকে যে এতে হয়তো ব্যক্তির মনে অহমিকা তৈরি হবে, এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা অপছন্দনীয়।

৩. জায়েজ বা বৈধ : আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো নিরহংকার মানুষের উদ্দেশে দাঁড়ানো।

৪. মানদুব বা প্রশংসনীয় : সফর থেকে ফিরছে এমন ব্যক্তিকে সালাম ও অভিনন্দন জানাতে, দ্বিনের পথে সাফল্য লাভ করেছে এমন ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানাতে অথবা কেউ বিপদগ্রস্ত হলে তাকে সাহায্য ও সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য দাঁড়ানো ইসলামী শরিয়তে মুস্তাহাব বা প্রশংসনীয়। (ফাতহুল বারি : ১১/৫৪)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে দাঁড়ানো অপছন্দ করতেন

আপডেট টাইম : ১১:৪৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কাব বিন মালিক (রা.) নিজের সম্পর্কে বর্ণনা করেন, তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার পর আল্লাহ যখন তাঁকে ক্ষমা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজের সময় আমাদের ক্ষমা লাভের ঘোষণা দেন। তখন দলে দলে মানুষ আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং তওবার জন্য অভিনন্দন জানায়। তারা বলে, ‘আল্লাহর ক্ষমা লাভের জন্য তোমাদের  অভিনন্দন।’ অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। রাসুল (সা.) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর চতুষ্পার্শ্বে মানুষ ছিল। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) আনন্দের সঙ্গে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমার সঙ্গে মুসাফা করলেন এবং অভিনন্দন জানালেন। এ ছাড়া মুহাজির বা অন্য কেউ এগিয়ে এলো না। বিষয়টি তালহা পছন্দ করল না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪১৮)

আলোচ্য হাদিস দ্বারা নবী যুুগের মুসলিম সমাজের দুটি অভ্যাস সম্পর্কে জানা যায়। এক. কেউ ভালো কাজ করলে বা দ্বিনি বিষয়ে সাফল্য লাভ করলে তাকে অভিনন্দন জানানো। দুই. কোনো ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সাধারণ রীতি ছিল না।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) লাঠির ওপর ভর করে আমাদের কাছে এলেন। আমরা তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি বললেন, তোমরা দাঁড়িয়ো না, যেমন অনারবরা পরস্পরের প্রতি দাঁড়ায়।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫২৩০)

আল্লামা ইবনে কুতাইবা (রহ.) বলেন, ‘এই হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, অনারব রাজা-বাদশার দরবারে সাধারণ মানুষ যেভাবে মাথানত করে দাঁড়িয়ে থাকে।’ (বাজলুল মাজহুদ ফি শরহি আবি দাউদ : ২০/১৬৯) অর্থাৎ কোনো মানুষের প্রতি এমনভাবে সম্মান প্রদর্শন করা যাবে না যার সঙ্গে ইবাদতের সাদৃশ্য তৈরি, যাতে মানুষের সাধারণ সম্মান ক্ষুণ্ন হয় এবং ব্যক্তির জন্য অহংকার ও অহমিকা তৈরি হয়।

কার আগমনে দাঁড়াব, কার আগমনে দাঁড়াব না
আবুল ওয়ালিদ বিন রুশদ কারো জন্য দাঁড়ানোর চারটি প্রকার নিরূপণ করেছেন। তা হলো, ১. মাহজুর বা নিষিদ্ধ : যখন কোনো ব্যক্তি প্রত্যাশা করে মানুষ তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকুক। এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো নিষিদ্ধ। কেননা তা ব্যক্তির অহংকার ও অহমিকা বাড়িয়ে দেয়।

২. মাকরুহ বা অপছন্দনীয় : যে ব্যক্তির মনে অহংকার থাকে না এবং সে প্রত্যাশাও করে না মানুষ তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে থাকুক, তবে এই ভয় থাকে যে এতে হয়তো ব্যক্তির মনে অহমিকা তৈরি হবে, এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা অপছন্দনীয়।

৩. জায়েজ বা বৈধ : আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো নিরহংকার মানুষের উদ্দেশে দাঁড়ানো।

৪. মানদুব বা প্রশংসনীয় : সফর থেকে ফিরছে এমন ব্যক্তিকে সালাম ও অভিনন্দন জানাতে, দ্বিনের পথে সাফল্য লাভ করেছে এমন ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানাতে অথবা কেউ বিপদগ্রস্ত হলে তাকে সাহায্য ও সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য দাঁড়ানো ইসলামী শরিয়তে মুস্তাহাব বা প্রশংসনীয়। (ফাতহুল বারি : ১১/৫৪)