ঢাকা ০৫:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে আমল পাপ মোচন করে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০
  • ২৫৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তা‘আলা শরী‘আতে এমন কতিপয় আমল বাতলে দিয়েছেন যা সম্পাদন করলে গোনাহ সমূহ মাফ হয়। গোনাহ এমন একটি বিষয়, যা একের পর এক করতে থাকলে মুমিন নারী-পুরুষের ঈমানী নূর নিভে যেতে থাকে। যা এক সময় তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে। আর শয়তান সেটাই চায়। সে চায় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাকে দ্বীনের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে তার পথে পরিচালিত করতে। এজন্য সে সদা একাজে নিয়োজিত থাকে। এর সঙ্গে আছে তার দোসর ও অসংখ্য মানবরূপী শয়তান, যারা আল্লাহর দেয়া শরী‘আত ও তাঁর আদেশ-নিষেধকে সর্বাবস্থায় অমান্য করতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তারা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত স¤প্রদায় ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউই নিরাপদ হ’তে পারে না’ (আ‘রাফ ৭/৯৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, ‘তোমরা তুচ্ছ-নগণ্য পাপ থেকেও বেঁচে থাক। কেননা তা যার মধ্যে একত্রিত হ’তে থাকবে তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে’।[১]

পাপের অশুভ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিক : ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ) পাপের অশুভ পরিণতি ও তার বহুবিধ ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করেছেন, যা প্রত্যেক মুসলমানের জানা দরকার। যা পাপকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে সহায়ক হবে। নিম্নে ক্ষতিকর দিকগুলি তুলে ধরা হ’ল।- (১) ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া। অর্থাৎ পাপ করতে থাকলে, আল্লাহর দ্বীনের ইলম পাপীর হৃদয়ে প্রবেশ করে না। যদিও দুনিয়াতে আধুনিক জ্ঞানীর স্বল্পতা নেই। আর বস্তুবাদীরা তাদেরকেই বুদ্ধিজীবি হিসাবে আখ্যায়িত করে। (২) আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া। অর্থাৎ পাপে জড়িত থাকলে আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব হয় না। (৩) শক্তির স্বল্পতা। অর্থাৎ পাপ কাজে জড়িত থাকলে আল্লাহর অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তার প্রতি থাকে না।
(৪) পাপীর লাঞ্ছনা। অর্থাৎ এর ফলে অনেক পাপী দুনিয়াতেই লাঞ্ছনার স্বীকার হয়। এছাড়া আখেরাতে অবমাননাকর শাস্তি তো আছেই। (৫) লজ্জা-শরম দূর হওয়া। লজ্জা-শরম এমন এক মানবীয় গুণ, যার ফলে অনেক অন্যায় ও পাপের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আর এর অভাবে নানা ধরনের পাপাচার ও গর্হিত কর্মে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রথম যুগের আম্বিয়ায়ে কেরামের বাণী সমূহ হ’তে যা মানবজাতি লাভ করেছে, তন্মধ্যে একটি হ’ল, যদি তোমার লজ্জা না থাকে, তাহ’লে তুমি যা ইচ্ছা তাই কর’। (৬) মন্দ পরিণতি। অর্থাৎ গোনাহের পরিণতি জাহান্নাম। (৭) হৃদয়ে হিংগ্রতা। অর্থাৎ পাপের কারণে মানুষ হিংগ্র ও পশু স্বভাবের হয়ে ওঠে। ফলে পাপী বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। সমাজে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস সহ নানাবিধ অপরাধের সাথে পাপী ব্যক্তিরাই সংশ্লিষ্ট। (৮) বরকত মুছে যাওয়া। অর্থাৎ এর কারণে বরকত চলে যায়। (৯) হৃদয়ের সংকীর্ণতা। অর্থাৎ পাপের কারণে হৃদয় সংকীর্ণ হয়। (১০) হৃদয়ে মোহর। অর্থাৎ পাপীর হৃদয়ে মোহর বসে যায়। ফলে সে হক অনুযায়ী চলতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল-প্রমাণ না থাকলেও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতন্ডায় লিপ্ত হয় তাদের একর্ম আল্লাহ ও মুমিনদের দৃষ্টিতে অতিশয় ঘৃণার। এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক উদ্ধত ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়কে মোহর করে দেন’ (মুমিন ৪০/৩৫)। (১১) ঘৃণা বা ক্রোধের অবতরণ। অর্থাৎ পাপে নিমজ্জিত ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ ও মুমিন বান্দার ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আর পুণ্যবান লোক সর্বাবস্থায় পাপী থেকে দূরে থাকেন। (১২) পরকালে শাস্তি। পাপের কারণে পরকালে শাস্তি হবে।
গোনাহ মোচনকারী আমল সমূহ : মানব জীবনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঈমান আনয়ন করা। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করা। অর্থাৎ আমলে ছারেহ সম্পাদন করা। ইসলামী শরী‘আতে এমন অনেক আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আলোচ্য নিবন্ধে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে এরকম কিছু আমল তুলে ধরা হ’ল।-
১. পরিপূর্ণভাবে ওযূ করা ও মসজিদে গমন করা : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করা, নামাজের জন্য অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি এভাবে (উত্তমরূপে) ওযূ করে, তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ফলে তার ছালাত ও মসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত আমল বলে গণ্য হয়’। তিনি আরো বলেন, কোন মুসলিম বা মুমিন বান্দা ওযূর সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার মুখমন্ডলের গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে অর্জিত সব গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা দু’খানা ধৌত করে তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়। এভাবে সে যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়’।
২. ওযূর পর ছালাত আদায় করা : ওছমান বিন আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করার পর বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করার পর একাগ্রচিত্তে দু’রাকা‘আত নামাজ আদায় করবে এবং এ সময় অন্য কোন ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না। তাহ’লে তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোন মুসলিম উত্তম রূপে ওযূ করে নামাজ আদায় করলে পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজ পর্যন্ত তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’। তিনি আরো বলেন, ‘যখন কোন মুসলিমের নিকটে ফরয নামাজের সময় উপস্থিত হয়, তখন যদি উত্তমরূপে ওযূ করে এবং একান্ত বিনীতভাবে ছালাতের রুকূ, সিজদাহ ইত্যাদি আদায় করে তাহ’লে সে পুনরায় কবীরা গোনাহে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই হ’তে থাকে’।
৩. খুশূ-খুযূ বা বিনয় ও একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করা : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করবে, সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করবে এবং নামাজের রুকূ-সিজদাহ ও খুশূ-খুযূকে পরিপূর্ণ করবে, তার জন্য আল্লাহর উপর প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। আর যে এরূপ করবে না, তার জন্য কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছে করলে ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দিবেন’।
৪. জামা‘আতের সাথে নামাজ আদায় করা : ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করে ফরয নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সাথে নামাজ আদায় করে তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়’।
৫. বেশী বেশী সিজদা করা : মাদান ইবনু আবু ত্বালহা আল-ইয়ামাবী হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ছাওবানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা আমি তাকে প্রিয় ও পসন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তখনও চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশী বেশী সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন’।
৬. জুম‘আর দিন মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করা ও নামাজ আদায় করা : সালমান ফারিসী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হ’তে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে। অতঃপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁকা করে না। অতঃপর তার নির্ধারিত ছালাত (ইমাম খুৎবায় দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত যথাসাধ্য) আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তাহ’লে তার সে জুম‘আহ হ’তে অপর জুম‘আর মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়’।
৭. তওবা করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গোনাহ সমূহ পরিবর্তন করে দিবেন নেকী দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)।
এ সমস্ত আমলসমূহ ছাড়াও আরও অনেক আমল আছে, যা পাপ মোচন করে। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় এই আলোচনায় কয়েকটি আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। আসুন! উপরোক্ত আমল সমূহ যথাযথভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা পাপ মোচনের জন্য চেষ্টা করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন। অধিক হারে নেকী অর্জনের তাওফীক দিন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসের পথ সহজ করে দিন-আমীন!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যে আমল পাপ মোচন করে

আপডেট টাইম : ০৭:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তা‘আলা শরী‘আতে এমন কতিপয় আমল বাতলে দিয়েছেন যা সম্পাদন করলে গোনাহ সমূহ মাফ হয়। গোনাহ এমন একটি বিষয়, যা একের পর এক করতে থাকলে মুমিন নারী-পুরুষের ঈমানী নূর নিভে যেতে থাকে। যা এক সময় তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে। আর শয়তান সেটাই চায়। সে চায় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাকে দ্বীনের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে তার পথে পরিচালিত করতে। এজন্য সে সদা একাজে নিয়োজিত থাকে। এর সঙ্গে আছে তার দোসর ও অসংখ্য মানবরূপী শয়তান, যারা আল্লাহর দেয়া শরী‘আত ও তাঁর আদেশ-নিষেধকে সর্বাবস্থায় অমান্য করতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তারা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত স¤প্রদায় ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউই নিরাপদ হ’তে পারে না’ (আ‘রাফ ৭/৯৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, ‘তোমরা তুচ্ছ-নগণ্য পাপ থেকেও বেঁচে থাক। কেননা তা যার মধ্যে একত্রিত হ’তে থাকবে তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে’।[১]

পাপের অশুভ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিক : ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ) পাপের অশুভ পরিণতি ও তার বহুবিধ ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করেছেন, যা প্রত্যেক মুসলমানের জানা দরকার। যা পাপকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে সহায়ক হবে। নিম্নে ক্ষতিকর দিকগুলি তুলে ধরা হ’ল।- (১) ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া। অর্থাৎ পাপ করতে থাকলে, আল্লাহর দ্বীনের ইলম পাপীর হৃদয়ে প্রবেশ করে না। যদিও দুনিয়াতে আধুনিক জ্ঞানীর স্বল্পতা নেই। আর বস্তুবাদীরা তাদেরকেই বুদ্ধিজীবি হিসাবে আখ্যায়িত করে। (২) আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া। অর্থাৎ পাপে জড়িত থাকলে আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব হয় না। (৩) শক্তির স্বল্পতা। অর্থাৎ পাপ কাজে জড়িত থাকলে আল্লাহর অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তার প্রতি থাকে না।
(৪) পাপীর লাঞ্ছনা। অর্থাৎ এর ফলে অনেক পাপী দুনিয়াতেই লাঞ্ছনার স্বীকার হয়। এছাড়া আখেরাতে অবমাননাকর শাস্তি তো আছেই। (৫) লজ্জা-শরম দূর হওয়া। লজ্জা-শরম এমন এক মানবীয় গুণ, যার ফলে অনেক অন্যায় ও পাপের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আর এর অভাবে নানা ধরনের পাপাচার ও গর্হিত কর্মে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রথম যুগের আম্বিয়ায়ে কেরামের বাণী সমূহ হ’তে যা মানবজাতি লাভ করেছে, তন্মধ্যে একটি হ’ল, যদি তোমার লজ্জা না থাকে, তাহ’লে তুমি যা ইচ্ছা তাই কর’। (৬) মন্দ পরিণতি। অর্থাৎ গোনাহের পরিণতি জাহান্নাম। (৭) হৃদয়ে হিংগ্রতা। অর্থাৎ পাপের কারণে মানুষ হিংগ্র ও পশু স্বভাবের হয়ে ওঠে। ফলে পাপী বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। সমাজে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস সহ নানাবিধ অপরাধের সাথে পাপী ব্যক্তিরাই সংশ্লিষ্ট। (৮) বরকত মুছে যাওয়া। অর্থাৎ এর কারণে বরকত চলে যায়। (৯) হৃদয়ের সংকীর্ণতা। অর্থাৎ পাপের কারণে হৃদয় সংকীর্ণ হয়। (১০) হৃদয়ে মোহর। অর্থাৎ পাপীর হৃদয়ে মোহর বসে যায়। ফলে সে হক অনুযায়ী চলতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল-প্রমাণ না থাকলেও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতন্ডায় লিপ্ত হয় তাদের একর্ম আল্লাহ ও মুমিনদের দৃষ্টিতে অতিশয় ঘৃণার। এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক উদ্ধত ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়কে মোহর করে দেন’ (মুমিন ৪০/৩৫)। (১১) ঘৃণা বা ক্রোধের অবতরণ। অর্থাৎ পাপে নিমজ্জিত ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ ও মুমিন বান্দার ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আর পুণ্যবান লোক সর্বাবস্থায় পাপী থেকে দূরে থাকেন। (১২) পরকালে শাস্তি। পাপের কারণে পরকালে শাস্তি হবে।
গোনাহ মোচনকারী আমল সমূহ : মানব জীবনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঈমান আনয়ন করা। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করা। অর্থাৎ আমলে ছারেহ সম্পাদন করা। ইসলামী শরী‘আতে এমন অনেক আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আলোচ্য নিবন্ধে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে এরকম কিছু আমল তুলে ধরা হ’ল।-
১. পরিপূর্ণভাবে ওযূ করা ও মসজিদে গমন করা : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করা, নামাজের জন্য অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি এভাবে (উত্তমরূপে) ওযূ করে, তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ফলে তার ছালাত ও মসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত আমল বলে গণ্য হয়’। তিনি আরো বলেন, কোন মুসলিম বা মুমিন বান্দা ওযূর সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার মুখমন্ডলের গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে অর্জিত সব গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা দু’খানা ধৌত করে তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়। এভাবে সে যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়’।
২. ওযূর পর ছালাত আদায় করা : ওছমান বিন আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করার পর বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করার পর একাগ্রচিত্তে দু’রাকা‘আত নামাজ আদায় করবে এবং এ সময় অন্য কোন ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না। তাহ’লে তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোন মুসলিম উত্তম রূপে ওযূ করে নামাজ আদায় করলে পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজ পর্যন্ত তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’। তিনি আরো বলেন, ‘যখন কোন মুসলিমের নিকটে ফরয নামাজের সময় উপস্থিত হয়, তখন যদি উত্তমরূপে ওযূ করে এবং একান্ত বিনীতভাবে ছালাতের রুকূ, সিজদাহ ইত্যাদি আদায় করে তাহ’লে সে পুনরায় কবীরা গোনাহে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই হ’তে থাকে’।
৩. খুশূ-খুযূ বা বিনয় ও একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করা : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করবে, সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করবে এবং নামাজের রুকূ-সিজদাহ ও খুশূ-খুযূকে পরিপূর্ণ করবে, তার জন্য আল্লাহর উপর প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। আর যে এরূপ করবে না, তার জন্য কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছে করলে ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দিবেন’।
৪. জামা‘আতের সাথে নামাজ আদায় করা : ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করে ফরয নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সাথে নামাজ আদায় করে তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়’।
৫. বেশী বেশী সিজদা করা : মাদান ইবনু আবু ত্বালহা আল-ইয়ামাবী হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ছাওবানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা আমি তাকে প্রিয় ও পসন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তখনও চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশী বেশী সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন’।
৬. জুম‘আর দিন মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করা ও নামাজ আদায় করা : সালমান ফারিসী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হ’তে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে। অতঃপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁকা করে না। অতঃপর তার নির্ধারিত ছালাত (ইমাম খুৎবায় দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত যথাসাধ্য) আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তাহ’লে তার সে জুম‘আহ হ’তে অপর জুম‘আর মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়’।
৭. তওবা করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গোনাহ সমূহ পরিবর্তন করে দিবেন নেকী দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)।
এ সমস্ত আমলসমূহ ছাড়াও আরও অনেক আমল আছে, যা পাপ মোচন করে। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় এই আলোচনায় কয়েকটি আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। আসুন! উপরোক্ত আমল সমূহ যথাযথভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা পাপ মোচনের জন্য চেষ্টা করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন। অধিক হারে নেকী অর্জনের তাওফীক দিন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসের পথ সহজ করে দিন-আমীন!