ঢাকা ০৪:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নবীজির আদর্শ সমাজসেবা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০
  • ২৪০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সকালের রোদ কেবল আলো ছড়াচ্ছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। নবীজি (সা.) বেরিয়েছেন মক্কার গলিতে। দেখলেন একজন বৃদ্ধাকে। মাথায় ভারী বোঝা নিয়ে হাঁটছেন। নবীজি এগিয়ে এলেন বুড়ির দিকে। তার মাথার ভারী বোঝাটা নিজের মাথায় তুলে নিলেন। এরপর চলছেন বুড়িকে পৌঁছে দেয়ার জন্য।

ভারী বোঝা মাথা থেকে সরলে বুড়ির মন হালকা হল। নবীজির পাশে হেঁটে হেঁটে বলে যাচ্ছেন মনের যত ব্যথা। একপর্যায়ে বলছেন, ‘আমরা খুব ভালো ছিলাম। সংসারে কোনো ঝামেলা ছিল না। মুহাম্মদের ওপর কোন ভূত সওয়ার হল, সে আমাদের সংসারে ফাটল ধরাল। ভাইবোন, বাপ-ছেলে এবং মা-মেয়ের মাঝে সংঘাত লাগিয়ে দিল। তার যন্ত্রণায় মক্কায় থাকা যাচ্ছে না। ভাবছি অন্যত্র চলে যাব।’

রাগ ঝাড়লেন বুড়ি। ধৈর্যের পাহাড় নবীজি (সা.) চুপচাপ সব শুনলেন। গন্তব্যে গিয়ে বোঝা নামাতেই বুড়ি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে বাবা? আমার এত বড় উপকার করলে। তোমার নাম কী?’

নবীজি বললেন, ‘এতক্ষণ আপনি যাকে গালমন্দ করলেন আমিই সে মুহাম্মদ।’ শুনেই বৃদ্ধা নবীজির পায়ে পড়ে বললেন, ‘তুমি তো মানুষ নও, দেবতা- ফেরেশতা! মানুষ তোমার সম্পর্কে কেন এত কুৎসা রটাচ্ছে? এক্ষুনি তোমার কালেমা আমাকে পড়াও। আমি মুসলমান হয়ে যাব!’

এই ছিল মহানবীর মানবসেবা। মানবসেবায় তিনি ছিলেন জীবন্ত উপমা। নবুয়তি লাভের আগেই মানবসেবায় গড়ে তুলেছিলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ সেবামূলক সংগঠন। তার কাছে সাহায্য চেয়ে পায়নি- এমন মানুষের সংখ্যা মেলানো ভার। নবীজির ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম এবং আওলিয়ায়ে কেরামের মাঝে মানবসেবার ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়েছিল।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, প্রিয়নবীর উত্তরসূরি মুসলিম উম্মাহ বা নায়েবে নবীদের মাঝে এখন সেবার প্রবণতা দেখা যায় কম। নবীজির গুণাবলি তাঁর উম্মতের মাঝে না থাকলে ইসলাম টিকে থাকবে কীভাবে?

শিক্ষা দেয়ার কাজ অনেকে করলেও সেবার কাজ বেছে নিয়েছে বিধর্মীরা। বাংলাদেশেই হাজার হাজার মুসলমানকে বিধর্মী করছে সেবা দিয়েই। মুমিন হিসেবে আমাদের কী কিছুই করার নেই?

সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘ইত্তেহাদুল উলামা ঢাকা’। ঢাকার হাজারীবাগে এর কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন জেলায় এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে। ওলামায়ে কেরামের একতা পুঁজি করে এ সংগঠনের সৃষ্টি। বিধবা নারীর আর্থিক সহযোগিতা, আগুনে দগ্ধ ইমামের চিকিৎসা দেয়া, এতিম-অসহায় শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করা, কর্মহীন যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মানুষের মৌলিক দ্বীনি শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং মানুষের আচরণ ও চরিত্র সংশোধনের কর্মসূচি।

ইত্তেহাদের অন্যতম সংগঠক মুফতি আহসান শরিফ বলেন, ইতিপূর্বে আমরা একজন বিধবাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। একজন ইমাম আগুনে দগ্ধ হলে তার চিকিৎসার জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছি। কিছু যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। মসজিদের মিম্বার থেকে সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি এ সংগঠনের কাজ। ক’দিন আগে এতিম, দরিদ্র ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি।

ইত্তেহাদের অন্যতম সংগঠক মাওলানা ফিরোজ আহমদ গওহারী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেখানে কোরআন শেখার ব্যবস্থা নেই সেখানে মকতব চালু করেছি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তুমি পৃথিবীর মানুষের ওপর দয়া কর, আসমানের মালিক আল্লাহ তোমার ওপর দয়া করবেন।’ নবীজির এ বাণীর আমল করছে ইত্তেহাদ সংগঠন। আসুন হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াই। নবীর আদর্শে উজ্জীবিত হই।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদ্রাসাতুল বালাগ ঢাকা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নবীজির আদর্শ সমাজসেবা

আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সকালের রোদ কেবল আলো ছড়াচ্ছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। নবীজি (সা.) বেরিয়েছেন মক্কার গলিতে। দেখলেন একজন বৃদ্ধাকে। মাথায় ভারী বোঝা নিয়ে হাঁটছেন। নবীজি এগিয়ে এলেন বুড়ির দিকে। তার মাথার ভারী বোঝাটা নিজের মাথায় তুলে নিলেন। এরপর চলছেন বুড়িকে পৌঁছে দেয়ার জন্য।

ভারী বোঝা মাথা থেকে সরলে বুড়ির মন হালকা হল। নবীজির পাশে হেঁটে হেঁটে বলে যাচ্ছেন মনের যত ব্যথা। একপর্যায়ে বলছেন, ‘আমরা খুব ভালো ছিলাম। সংসারে কোনো ঝামেলা ছিল না। মুহাম্মদের ওপর কোন ভূত সওয়ার হল, সে আমাদের সংসারে ফাটল ধরাল। ভাইবোন, বাপ-ছেলে এবং মা-মেয়ের মাঝে সংঘাত লাগিয়ে দিল। তার যন্ত্রণায় মক্কায় থাকা যাচ্ছে না। ভাবছি অন্যত্র চলে যাব।’

রাগ ঝাড়লেন বুড়ি। ধৈর্যের পাহাড় নবীজি (সা.) চুপচাপ সব শুনলেন। গন্তব্যে গিয়ে বোঝা নামাতেই বুড়ি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে বাবা? আমার এত বড় উপকার করলে। তোমার নাম কী?’

নবীজি বললেন, ‘এতক্ষণ আপনি যাকে গালমন্দ করলেন আমিই সে মুহাম্মদ।’ শুনেই বৃদ্ধা নবীজির পায়ে পড়ে বললেন, ‘তুমি তো মানুষ নও, দেবতা- ফেরেশতা! মানুষ তোমার সম্পর্কে কেন এত কুৎসা রটাচ্ছে? এক্ষুনি তোমার কালেমা আমাকে পড়াও। আমি মুসলমান হয়ে যাব!’

এই ছিল মহানবীর মানবসেবা। মানবসেবায় তিনি ছিলেন জীবন্ত উপমা। নবুয়তি লাভের আগেই মানবসেবায় গড়ে তুলেছিলেন ‘হিলফুল ফুজুল’ সেবামূলক সংগঠন। তার কাছে সাহায্য চেয়ে পায়নি- এমন মানুষের সংখ্যা মেলানো ভার। নবীজির ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম এবং আওলিয়ায়ে কেরামের মাঝে মানবসেবার ধারাবাহিকতা রক্ষা পেয়েছিল।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, প্রিয়নবীর উত্তরসূরি মুসলিম উম্মাহ বা নায়েবে নবীদের মাঝে এখন সেবার প্রবণতা দেখা যায় কম। নবীজির গুণাবলি তাঁর উম্মতের মাঝে না থাকলে ইসলাম টিকে থাকবে কীভাবে?

শিক্ষা দেয়ার কাজ অনেকে করলেও সেবার কাজ বেছে নিয়েছে বিধর্মীরা। বাংলাদেশেই হাজার হাজার মুসলমানকে বিধর্মী করছে সেবা দিয়েই। মুমিন হিসেবে আমাদের কী কিছুই করার নেই?

সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘ইত্তেহাদুল উলামা ঢাকা’। ঢাকার হাজারীবাগে এর কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন জেলায় এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে। ওলামায়ে কেরামের একতা পুঁজি করে এ সংগঠনের সৃষ্টি। বিধবা নারীর আর্থিক সহযোগিতা, আগুনে দগ্ধ ইমামের চিকিৎসা দেয়া, এতিম-অসহায় শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করা, কর্মহীন যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মানুষের মৌলিক দ্বীনি শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং মানুষের আচরণ ও চরিত্র সংশোধনের কর্মসূচি।

ইত্তেহাদের অন্যতম সংগঠক মুফতি আহসান শরিফ বলেন, ইতিপূর্বে আমরা একজন বিধবাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। একজন ইমাম আগুনে দগ্ধ হলে তার চিকিৎসার জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছি। কিছু যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। মসজিদের মিম্বার থেকে সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি এ সংগঠনের কাজ। ক’দিন আগে এতিম, দরিদ্র ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি।

ইত্তেহাদের অন্যতম সংগঠক মাওলানা ফিরোজ আহমদ গওহারী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেখানে কোরআন শেখার ব্যবস্থা নেই সেখানে মকতব চালু করেছি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তুমি পৃথিবীর মানুষের ওপর দয়া কর, আসমানের মালিক আল্লাহ তোমার ওপর দয়া করবেন।’ নবীজির এ বাণীর আমল করছে ইত্তেহাদ সংগঠন। আসুন হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াই। নবীর আদর্শে উজ্জীবিত হই।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদ্রাসাতুল বালাগ ঢাকা