হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওর মানেই পানি। নদী-নালা-খাল-বিল। কিশোরগঞ্জের গভীর হাওরবেষ্টিত তিনটি উপজেলা হচ্ছে, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম। বহুযুগ ধরে এ তিনটি হাওর জনপদের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। দুই দশক আগেও এ এলাকার মানুষ গাড়িতো দূরের কথা একটি রিকশাও দেখেনি নিজের চোখে! সেই প্রত্যন্ত হাওরে চোখের সামনে প্রশস্ত উঁচু পাকা সড়ক ধরে হাঁকিয়ে চলছে দামি গাড়ি!
নিজের বাড়ি হলেও এই প্রথম বারের মতো কিশোরগঞ্জ থেকে দামি গাড়িতে করে মিঠামইন গেলেন, রাষ্ট্রপতি মো. আাবদুল হামিদের বড় ছেলে ও কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। এই প্রথম গাড়ি নিয়ে মিঠামইন থানার সামনে নামলেন জেলা পুলিশ সুপার মাশরুকর রহমান খালেদ বিপিএম (বার)। তাইতো তাদের চোখে যেন বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না! যেন স্বপ্নের মতো লাগছে!
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কিশোরগঞ্জের হাওরের তিনটি থানায় দেয়া হয়েছে পুলিশের পিকআপ। গতকাল সোমবার বিকেলে জেলার মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম থানায় তিনটি ডাবল কেবিন পিকআপ দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এ তিন থানার ওসিদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পিকআপের চাবি তুলে দেন।
উদ্বোধনের পর রাষ্ট্রপতির ছেলে ও স্থানীয় এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক মিঠামইন থানা পুলিশকে দেয়া একটি নতুন পিকআপ ভ্যানের চালকের আসনে বসেন। পাশের সিটে পুলিশ সুপার মাশরুকর রহমান খালেদ। পুলিশ সুপারকে সাথে নিয়ে থানার পাশে খালি মাঠে কিছুটা সময় পিকআপ চালান এমপি তৌফিক। এ সময় তিন থানার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যেন আনন্দের বান ডেকে যায়। চিৎকার, হৈ-হুল্লোড় করে, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে এই দুই অতিথিকে স্বাগত জানান।
হাওরের তিন থানায় গাড়ি বিতরণ উপলক্ষে মিঠামইন থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, পুলিশ সুপার হিসেবে নতুন পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম সোপান, অষ্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক, মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলম, ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিজা আক্তার, মিঠামইন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাকির রাব্বানী, অষ্টগ্রাম থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুল হাসান মোল্লা, ইটনা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুর্শেদ জামান, মিঠামইন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক তার বক্তৃতায় বলেন, ‘ কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি মিঠামইন থানা পুলিশ গাড়ি পাবে। নিজে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসতো পারবো! সবই স্বপ্নের মতো লাগছে।’ হাওরের অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলায় তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের জন্য দেয়া করতে বলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, আজকের দিনটি আমার কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কোনোদিন ভাবিনি নিজের গাড়িতে করে মিঠামইন আসবো। থানার সামনে নিজের থেকে নামার সময় বার বার অবাক হচ্ছিলাম। ভাবছিলাম-স্বপ্ন দেখছি কিনা। আজকের মুহূর্তটি তাই ক্যামেরাবন্দি করে রাখলাম।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলাকে সংযুক্ত করে প্রায় এক হাজার দেড়’শ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা বছর চলাচল উপযোগী নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়। রোববার (২৬ জানুয়ারি) ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের সাথে হাওরের তিন উপজেলায় সড়ক পথে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।