কাঁটাতারে ঘেষা উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট জেলায় পাচঁটি উপজেলা জুড়ে ধুম পড়ছে আমন ধান কাটা, মাড়াই আর বিক্রিয়ের মহোৎসব। কৃষাণ কৃষাণীদের মুখে হাসির বদলে দেখা দিয়েছে হতাশার ছাপ। জমিতে পোকামাকড় আক্রমণ,আশানুরূপ ফলন, আর দাম না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশায় পড়েছেন।
বাজারে একমণ ধান বিত্রুি করে এক কেজি ইলিশ মাছও কেনা যায় না। তাই উপায় না পেয়ে হতাশা নিয়ে ধান কম দামে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। ধান বেচঁতে গেলেও মহাজনের ওজনের কারচুপি সইতে হয় প্রতিনিয়তেই কৃষকদের।
এক সময়ে কৃষকের গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু আজ হারাতে বসেছেন কৃষকরা। একমণ ধান বিক্রি করে এখন এক কেজি ইলিশ মাছও জোটে না। ইলিশ মাছ খাওয়া কৃষকের স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যায়।
Lalmonirhat
উপজেলার পশ্চিম ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এবারে প্রতিবিঘা জমিতে ধান চাষ করতে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ধান পেয়েছি মাত্র দশ থেকে এগারো মণ। বর্তমান বাজারে একমণ ধান বিক্রয় হচ্ছে মাত্র পাঁচশত চল্লিশ টাকায়। আক্ষেপ করে বলেন, একমণ ধান বিক্রি করে এখন আর এক কেজি ইলিশ মাছেও জোটে না। কত দিন যে ইলিশ খাইনি!
উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, এ বছর আমন ক্ষেতে নিয়ম অনুযায়ী সার বীজ প্রয়োগ করেও প্রচুর কারেন্ট পোকার আক্রমণ ছিল তাই ভালো ফসল পাইনি। তিনি আরও বলেন, ধান গাছ ভালো হলেও ধানে পাতানের সংখ্যা ছিল বেশি।
পাটগ্রাম উপজেলা কুচলীবাড়ীর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, আমনের ক্ষেতে বিভিন্ন রকমের পোকামাকড় আক্রমণ করায় যথেষ্ট পরিশ্রম করেও ভালো ফলন পাওয়া যায়নি। কারেন্ট পোকার আক্রমণ ছিল সবচেয়ে বেশি। ফলে ফলন ভালো হয়নি। সরকার যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতো তাহলে কৃষক ন্যায্য মূল্য পেতেন।
Lalmonirhat
লালমনিরহাট জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার পাচঁ উপজেলায় ৮৩ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। আমনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৯৯ মেট্রিকটন। অর্জন হয়েছে একশত ছয় ভাগ।
এদিকে সরকার ধানের মূল্য প্রতি কেজি ৩১ টাকা দর নির্ধারণ করেছে। তবে কাগজপত্র অফিসে না আসায় সরকারিভাবে ধান এখনো ক্রয় করা হচ্ছে না বলে জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি উপ-পরিচালক সাফায়েত হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিএলবি নামে একটি (ধান পাতা শুকন) রোগ ধরে ছিল কিন্তু তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তিনি আরও বলেন, এবছর একশত ছয় ভাগ বেশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে।