সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান

বাংলাদেশে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন সালমান রুশদি, মার্গারেট অ্যাটউডসহ বিশ্বের দেড়শতাধিক লেখক। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। বৃটেনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ওই খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্বের মোট ১৭৮ জন লেখক। নির্মম ব্লগার হত্যাকাণ্ডের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও তার সরকারকে সম্ভাব্য সকল কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সালমান রুশদি ও মার্গারেট অ্যাটউডের পাশাপাশি ওই খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ইয়ান মার্টেল, কম টইবিনের মতো লেখকরা। এ ছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষা এবং সাহিত্য প্রচারণামূলক লেখকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনালের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লেখক চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। তারা লিখেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার। অনন্ত বিজয় দাস, অভিজিৎ রায় এবং ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ডগুলোর দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত এবং আন্তর্জাতিক সুষ্ঠু বিচারিক মানদণ্ড অনুযায়ী দোষীদের বিচারের আওয়তায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই। এ ছাড়াও বাংলাদেশে ঝুঁকির মুখে থাকা ব্লগার ও লেখকদের সুরক্ষা ও সহায়তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন লেখকরা। এটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা বলে উল্লেখ করা হয়। বুকার পুরষ্কারজয়ী ঔপন্যাসিক মার্টেল গার্ডিয়ানকে ইমেইলে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের ন্যক্কারজনক পন্থার কারণে আমি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছি। এ নিয়ে কিছু একটা করা খুবই জরুরি। বাংলাদেশ সরকার এ চিঠিতে প্রভাবিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের কোন সরকারের তুলনায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ চিঠি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্ব বহন করতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলোতে এসব চিঠি এবং আহ্বানগুলো তেমনটা আমলে নেয়া হয় না। রাজনীতিবিদরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আমার প্রত্যাশা, শেখ হাসিনার সরকার হয়তো সত্যিকার অর্থে এতে প্রভাবিত হবে।
গত সপ্তাহে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাসকে সিলেটের জনাকীর্ণ এক রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি যখন কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তখন চার মুখোশধারী হামলাকারী উন্মুক্ত চাপাতি হাতে তাকে ধাওয়া করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। ফেব্রুয়ারি মাসে একই প্রক্রিয়ায় নিহত হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। একই ব্লগে লিখতেন অনন্ত। মার্চ মাসে আবারও একইরকম হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হয়। এবারে শিকার হন ওয়াশিকুর রহমান নামের আরেক ব্লগার।
গার্ডিয়ানে লেখা চিঠিতে, বিশ্বের নানা প্রান্তের লেখকেরা এসব ব্লগার হত্যাকাণ্ডে তাদের বিস্ময় ও আতঙ্কবোধের কথা প্রকাশ করেছেন। তারা উল্লেখ করেন, এসব ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হয় নি। তিন মাসে তিন ব্লগার হত্যাকাণ্ডসহ বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিহত ব্লগার ও লেখকদের সংখ্যা ছয়। যেসব লেখক ও সাংবাদিক শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করে থাকেন তাদের প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার এ গতিধারা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন লেখকরা। মার্টেল মন্তব্য করেছেন, বিশ্বের যেসব দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিশেষভাবে চাপের মুখে রয়েছে সেখানে বসবাসরত সহকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করাটা পশ্চিমা লেখকদের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, আমরা কেনই বা তাদের রক্ষা করবো না? যে কোন অপরাধ স্রেফ অপরাধ। আর অপরাধগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে তা সংক্রামক হয়ে যায়। বাংলাদেশের ব্লগার হত্যাকাণ্ডের গতিধারার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সেখানে যা হচ্ছে একসময় এখানেও তার প্রভাব পড়বে।
বিদ্বেষমূলক বৈরী সংস্কৃতির মধ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার সাহস দেখানো ব্লগার ও লেখকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার এক প্রচারণা হিসেবে সাম্প্রতিক হামলাগুলোকে ব্যাখ্যা করেন ইংলিশ পেন এর পরিচালক জো গ্ল্যানভিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে জরুরিভাবে দণ্ডমুক্তির এ পরিবেশকে আমলে নিতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। মর্মান্তিক এসব ঘটনাপ্রবাহ বিশ্বজুড়ে লেখকদের ঐক্যবদ্ধ করেছে যা সংহতি প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ নজির।’

গার্ডিয়ানে প্রকাশিত খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকৃত লেখদের নাম:
এলিজাবেথ অ্যাবেনড্রোথ
জিম এইটকেন
ট্রুইজেন্স অ্যালেইড
ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকে আনিম-আপিয়াহ
ফ্রাঙ্কি আসারে-ডোনকোহ, প্রেসিডেন্ট, ঘানা পেন সেন্টার
মার্গারেট অ্যাটউড
মাইকেল অগাস্টিন
ড. হানাহ আওয়াদ, প্রেসিডেন্ট প্যালেস্টাইন পেন
সেসিলিয়া ব্যালকাজার
এলকে বানাশ
মারিয়া সেসিলিয়া বারবেটা
নিয়েলস বারফোড
শ্রাবনি বসু
নাজমি বায়রি
রোনাল্ড বোস
ম্যারিয়ান বোটসফোর্ড ফ্রেজার, চেয়ার অব রাইটার্স ইন প্রিসন কমিটি, পেন ইন্টারন্যাশনাল
সুজ্যান ব্রোগার
ড. বারবারা ব্রোনেন
রিকি ব্রাউন
উর্বশী বুটালিয়া
জয়েস ক্যাপলান
মেটিন সেনগিজ
সুদীপ চক্রবর্তী
অ্যান ক্লার্ক
জেনিফার ক্লেমেন্ট
জো ক্লিফোর্ড
অ্যান কনোলি
ড্যানিয়েলা ডান
স্বপন দাসগুপ্ত
রচনা দেবিদার
অ্যালিন ডেভিডফ, প্রেসিডেন্ট, পেন মেক্সিকো
অ্যালেক্সিস ডে রুড
সিদ্ধার্থ দেব
জব ডিগিনার
অ্যান্টোনিও ডেলা রোকা, প্রেসিডেন্ট, পেন ট্রাইয়েসটে
রেনান ডেমিরকান
মেঘনাদ দেশাই
ফয়সাল দেবজি
ড. ম্যাথিয়াস স্ক্রাইবার
ড. বুর্খহার্ট ভাইজেল
সুজ্যান ইগার্টন
জন এলিয়ট
পিটার ইংলান্ড
হায়দার এরগুলেন
রবার্টে ফ্যাব্রিস
মোরিস ফারহি
ফাহিমেহ ফারসাই
চার্লস ফোরান
অয়ভিন্দ ফস
মরিন ফ্রিলি, প্রেসিডেন্ট, ইংলিশ পেন
উয়ি ফ্রাইসেল
জস্টাইন গার্ডার
মিনাক্ষি গাঙ্গুলি
নিনা জর্জ
অমিতাভ ঘোষ
জো গ্ল্যানভিল, ডিরেক্টর, ইংলিশ পেন
ব্রিগিট সি গোটহোল্ড
ফিওনা গ্রাহাম
গ্লোরিয়া গার্ডিয়া
মাইকেল গুগেনহাইমার
অপার গুপ্ত
ড্যানিয়েল হান
কায়সার হক
জোসেফ হাসলিঙ্গার, প্রেসিডেন্ট, জার্মান পেন
জার্ট হেইডেনরাইক
ক্রিস্টোফার হেইন
হ্যালগ্রিমুর হেলগাসন
ওয়ার্নার হোলজার
জুলস হর্ন
ইমান হুমায়দান
খাদেমুল ইসলাম, সদস্য, বাংলাদেশ পেন
অঞ্জলি জোসেফ
উইম জার্গ
সিরপা কাহকোনেন, প্রেসিডেন্ট, ফিনিশ পেন
রঘু কার্নাদ
লুসিনা কাথমান
জ্যান কেম্প
আন্দ্রেজ খাদানোভিচ, প্রেসিডেন্ট, বেলারুসিয়ান পেন
চার্লি কিং
তানজা কিনকেল
কার্ল ওভ কেনাউসগার্ড
সিবাইল কেনাউস
ক্রিস্টোফ কোনিগ
আনজা কোভাকস
হরি কুঞ্জরু
ওলা লার্সমো, প্রেসিডেন্ট, সুইডিশ পেন
জোয়ান লিডম-অ্যাকারম্যান
জোয়ান লিনগার্ড
শিয়ারা ম্যাকোনি
কোনা ম্যাকফি
রিশি মজুমদার
এমিলি মার্টেল, প্রেসিডেন্ট, কুইবেক পেন
ইয়ান মার্টেল
ক্রিস্টিন ম্যাকেঞ্জি, প্রেসিডেন্ট, পেন মেলবোর্ন
কাইলি মিউবার্ন, প্রেসিডেন্ট, পেন নিউজিল্যান্ড
অ্যালিসন মিলার
স্যাম মিলার
ডেনিস মিনা
রোহিন্টন মিস্ট্রি
পেট্রা মোর্সব্যাক
লিনা মোর্সেলি
নিল মুখার্জি
আয়তেন মুতলু
মরিন মিয়ান্ট
ভায়ু নাইডু
হেগ নিউথ নৌরি
উইলিয়াম নাইগার, প্রেসিডেন্ট, নরওয়েজিয়ান পেন
হ্যারি ওবেরল্যান্ডার
হ্যান্স-ক্রিশ্চিয়ান ওয়েসার
ভিদা ওগনজেনোভিচ
পার ওহরগার্ড, প্রেসিডেন্ট, ড্যানিশ পেন
অডুর অ্যাভা ওলাফসডোটির
জেনেপ ওরাল, প্রেসিডেন্ট, পেন তুরস্ক
মার্গি ওরফোর্ড, প্রেসিডেন্ট, পেন দক্ষিণ আফ্রিকা
মেত ওজেল
কায়সার ওজহান
রা পেইজ প্রতিষ্ঠাতা, কোমা প্রেস
পিটার পার্কার
পার প্যাটারসন
টম পাও
লুতস গোতসা
গ্যাব্রিয়েল পোমারিন-গোতসা
ক্রিস্টফ লিন্ডেনমেয়ার
জ্য র‌্যাফার্টি
আনিতা রাঘবন
আশিস রায়
মনিকা রিঙ্ক
জুডিথ রড্রিগেজ
থমাস রথচাইল্ড
নিলাঞ্জনা রায়
অনুরাধা রায়
এলিজাবেথ রুজ
সালমান রুশদি
গিতা স্যাহগাল
মিনোলি স্যালগাডো
আলেজান্দ্রো সানচেজ-আইজকোর্বে
উলরিক স্যান্ডিগ
ফিলিপে স্যান্ডস কিউসি
অশ্বিন সাঙ্ঘি
রাজদীপ সরদেশাই
আইসে সারিসায়ান
ক্যারোল সত্যমূর্তি
জন র‌্যালস্টন সল, প্রেসিডেন্ট, পেন ইন্টারন্যাশনাল
সামান্থা শ্নি
ক্রিস্টা শুয়েঙ্কে
অ্যান্ড্রু স্ক্ল্যাটার
সাইওন, প্রেসিডেন্ট, আইসল্যান্ডিক পেন
মোরেলে স্মিথ
ক্লেয়ার স্কয়ার্স
এলিজাবেথ স্টারসেভিচ
লেসলি স্টিভেনসন
লিয়াম স্টুয়ার্ট
ক্লাউস থেওয়েলেইট
আনিকা থর
এলসা টিও
প্রজ্ঞ্যা তিওয়ারি
কোম তইবিন
কার্লস টর্নার, ডিরেক্টর, পেন ইন্টারন্যাশনাল
সলিল ত্রিপাটি
সিনথিয়া ট্রাউপ
আলেইড ট্রুইজেন্স
টিনা উইবেল
লিন উলমান
ম্যানন উফফ, প্রেসিডেন্ট, পেন নেদারল্যান্ডস
আমির ভ্যাল ওজেদা
কার্তিকা ভিকে
মার্টিন এ ভোল্কার
গ্যাব্রিয়েল ভন আর্নিম
ক্যাথরিন ভুইলস্টিক
পার ওয়াস্টবার্গ
হ্যারি ওয়াটসন
হার্বার্ট ওয়াইজনার
লেস উইলসন
ইয়াজিচি ইয়াসমিন
হালিম ইয়াজিচি
সেটিন ইগেনোগলু
আর্নল্ড জাবলে
আতিয়া জাইদি

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর