Islamic calligraphy for Allahu Akbar can be used to design holidays in Islam, such as ramadan.Translation-Allahu Akbar-Allah Great!

আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইসলাম ও ঈমান মানুষের আশা আকাংখাকে উৎসাহিত করে, পক্ষান্তরে হতাশা বা নিরাশাকে, করে নিরুৎসাহিত।

প্রকৃতপক্ষে যিনি আল্লাহকে প্রভু, রাসূলকে (সা.) অনুসরণীয় অনুকরণীয় নেতা ও ইসলামকে দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে তার কি কোনো হতাশা থাকতে পারে? না, কখনো না, হতাশা-নিরাশা তাকে স্পর্শ করতে পারে না।

আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না’ পর্ব-১

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَمَن يَقْنَطُ مِن رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلاَّ الضَّآلُّونَ

অর্থাৎ:‘যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে হতাশ হয়? (সূরা: আল হিজর, আয়াত,১৫-৫৬)

(২) ধৈর্য ধারণ করা: কেননা বিপদে ধৈর্য ধারণ-ই হলো সর্বোত্তম পন্থা। তা পরকালীন বিষয়ে হোক আর ইহকালীন বিষয়েই হোক। বিপদে ধৈর্য ধারণ করা নবী-রাসূলসহ প্রকৃত মুমিনদের একটি উত্তম বৈশিষ্ঠ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

অর্থাৎ: ‘নিশ্চয়ই আমি পরীক্ষা করব তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ ও শস্যের ঘাটতির কোনো একটি দ্বারা। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করো।’(সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُواْ الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْاْ مِن قَبْلِكُم مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاء وَالضَّرَّاء وَزُلْزِلُواْ حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ مَتَى نَصْرُ …اللّهِ

অর্থাৎ-‘তোমরা কি ধারণা করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের পূর্ববতীদের মতো সংকটময় অবস্থা এখনো তোমাদের ওপর আসেনি। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এবং তাদেরকে কাঁপিয়ে তোলা হয়েছিল। এমনকী রাসূল ও তার সঙ্গে ঈমান আয়নকারীরা শেষ পর্যন্ত বলেছিলেন, কখন আসবে
মহান আল্লাহর সাহায্য?…..(সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ২১৪)।

মুমিন কখনো বিপদে ভেঙ্গে পড়ে না বরং ধৈর্য ধারণ করে যা তার জন্য কল্যাণকর। যেমন-রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

অর্থাৎ: মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বেশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকরিয়া আদায় করে আর দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কর‌্যাণকর। (সহিহ মুসলিম, হা: ২৯৯৯)।

(৩) মহান আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা: আপনার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের প্রতি একটু লক্ষ্য করুন! দেখবেন আপনার শুকরিয়া আদায় সহজ হবে এবং হতাশ বা নিরাশা আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

…وَآتَاكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ وَإِن تَعُدُّواْ نِعْمَتَ اللّهِ لاَ تُحْصُوهَا

অর্থাৎ: ‘তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তোমরা তাঁর নিকট যা চেয়েছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।….’(সূরা: ইব্রাহিম, আয়াত: ৩৪)।

মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার মাধ্যমে তাঁর নিয়ামত আরোও বেশি পাওয়া যায়। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন,

لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ

অর্থাৎ: ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তাহলে তোমাদেরকে অবশ্যই (আমার নিয়ামত) বৃদ্ধি করে দেবো আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে (জেনে রেখ) অবশ্যই আমার শাস্তি কঠোর।’(সূরা: ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)।

তাইতো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,

‘সুতরাং আমি যা দিলাম তা গ্রহন করো এবং কৃতজ্ঞ হও।’

(৪) আখিরাতের বিষয়ে বেশি বেশি চিন্তা করা: আখিরাতের চিন্তা থাকলে  আপনার জন্যে ভালো কাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করা অতি সহজ হবে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা  আপনার জন্য তা সহজ করে দেবেন। যেমন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ারা বলেন,

‘আখিরাত যার একমাত্র চিন্তা ও লক্ষ্য আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেন এবং (তার জীবনের) এলোমেলো হওয়া কাজগুলোকে গুছিয়ে দেন এর ফলে দুনিয়া তার নিকট অতীব তুচ্ছ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে দুনিয়া যার একমাত্র চিন্তা ও লক্ষ্য আল্লাহ তায়ালা তার চোখের সামনে শুধু দারিদ্রতা-অভাব-অপূর্ণতা লাগিয়েই রাখেন এবং (তার জীবনের) কাজগুলোকে এলোমেলো করে দেন এর ফলে শত চেষ্টার পরেও তার জন্য নির্ধারিত অংশের বেশি দুনিয়ার উপভোগ্যতা লাভ করতে পারে না। (আত তিরমিযী, হা: ২৪৬৫,ই:ফা: বাং,হা: ২৪৬৮)।

০৫.বিপদে মহান আল্লাহর ক্ষমার কথা স্বরণ করা: এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

‘কোনো ঈমানদার ব্যক্তির এমন কোনো ব্যাথা-বেদনা, রোগ-ব্যাধি, দুঃখ-কষ্ট পৌছে না, এমনকী দুর্ভাবনা পর্যন্ত, যার প্রতিদানে তার কোনো গুনাহ ক্ষমা করা হয় না। (সহিহ মুসলিম, হা: ২৫৮৩, ই:, ফা:, বাং, হা: ৬৩৩৪, বাং,ই: সে: ,হা: ৬৩৮৩)।

(৬) মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা: যে বিষয়টি পাবার আশায় আপনি সময়, শ্রম, অর্থ সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেও অর্জন করতে পারছেন না, অথচ ভাবছেন ওই বিষয়টি আপনার জন্য কল্যাণকর। হতে পারে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত তার বিপরীত অর্থাৎ-তা আপনার জন্য অকল্যাণকর। মনে রাখতে হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালা আপনার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তা আপনি নিশ্চয়ই পাবেন। আর যা আপনার জন্য বরাদ্ধ নেই, তা শত চেষ্টার পরেও পাবেন না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,

وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ

অর্থাৎ: ‘হয়তো তোমরা কোনো বিষয়কে অপছন্দ করো যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আবার হতে পারে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করছ যা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলতঃআল্লাহই জানেন তোমরা যান না। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২১৬)।

(৭) মহান আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা: হতাশার একটি বড় ওষুধ হলো মহান আল্লাহর স্মরণ বা জিকির। মৌখিক জিকিরও হতে পারে বা যে কোনো ‘ইবাদতের মাধ্যমেও হতে পারে। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

অর্থাৎ:‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রেখ! আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সূরা: আর রা’দ, আয়াত: ২৮)।

(৮) সালাত আদায় করা: রাসূল (সা.) এর একটি স্বভাব ছিল যখনই তিনি কোনো বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতেন তখনই তিনি সালাতের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভের চেষ্টা করতেন এবং মহান আল্লাহর নির্দেশও এমনি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

অর্থাৎ: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।

(৯) সততাকে সঙ্গী করো: হতে পারে সৎ লোকদের সাথী হওয়া, সৎ লোকদের জীবনী পড়া, সৎ চিন্তা বেশি করা এবং সৎ হতে চেষ্টা করা।

(১০) নিজের থেকে ধনে-জনে যোগ্যতায় বা যে কোনোভাবে উপরে যিনি রয়েছেন তার দিকে না তাকিয়ে যিনি নিচে আছে তার দিকে তাকানো: যেমন- একজন ধনী মৃত মানুষকে নিয়ে ভাবুন যিনি অনেক কিছু থাকা সত্বেও তিনি সঙ্গে কতটুকু নিয়ে যেতে পেরেছেন? তাই আল্লাহ তায়ালা যা দিয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করুন ও
ভোগ-বিলাসিতা হতে সর্তকতা অবলম্বন করুন।

এছাড়াও হতাশামুক্ত জীবন পেতে আরো কিছু দিক নির্দেশনা অনুসরণ করা যেতে পারে।

(১১) সুযোগ বুঝে বৈধ বিনোদনে অংশ নেয়া, কোথাও ঘুরতে যাওয়া।

(১২) এটা মনে রাখা যে সবার মধ্যে কম-বেশি এমন চাহিদা আছে যা এখনো পূরণ হয়নি, এমনকী পৃতিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটিরও।

(১৩) কাজে ব্যস্ত থাকা।

(১৪) নিরাশ না হয়ে এটা ভাবা আজ যা হয়নি তা আগামীকাল হবে অথবা তার চেয়ে আরো ভালো কিছু হবে- ইনশা-আল্লাহ!

(১৫) হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করা, রাগ প্রতিহত করা, অন্যকে যে কোনোভাবে সাহায্য করা, অন্যের নিকট নিজের দুঃখ-কষ্টের কথা না বলে তা অপসারণের ব্যবস্থা নেয়া ইত্যাদি।

উপরের আলোচনা থেকে  শিক্ষাসমূহ:

(১) যে কোনো কাজে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার ওপর আস্থা রাখা।

(২) কোনো বিপদেই অস্থির বা নিরাশ না হওয়া।

(৩) পরকালকে টার্গেট রেখে পৃথিবীতে কাজ করা।

অত্র আলোচনা হতে আমরা এ সিদ্ধন্ত নিতে পারি যে,অতীতের দুঃখ কষ্ট ভুলে নতুন করে বর্তমান জীবনকে বৈধভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করা, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হওয়া, হাসি-খুশি থাকা, নিজ পরিবার, সৎ বন্ধু-বান্ধব ও সৎ লোকদের সঙ্গে বেশি সময় ব্যয় করা, আত্নসমালোচনা করা ও সময়মত তাওবাহ করে জীবন পরিচালনা করতে পারলেই একজন হতাগ্রস্ত ব্যক্তি সুন্দর পুণ্যময় জীবন লাভে সক্ষম হবে-ইনশা-আল্লাহ!

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর