পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশ
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন—অর্থ : আর যারা পবিত্রতার প্রতি যত্নবান, তাদেরই আল্লাহ ভালোবাসেন।
অর্থ : হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত, একসময় হজরত আসমা রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হায়েজের [ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার] গোসলের নিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা প্রথমে পানি নিয়ে তাতে পদ্মপাতা মেশাবে।
বৃক্ষরোপণের নির্দেশ
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে—অর্থ : হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্ল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি কোনো শস্য চাষ করে বা কোনো গাছ রোপণ করে এবং তা থেকে যদি কোনো মানুষ, কোনো পাখি, কোনো পশু, কোনো হিংস্র প্রাণী বা অন্য কোনো প্রাণী যদি [ফল, পাতা, লতা, ডাল] খায়, তাহলে এর বিনিময়ে সে [জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় ওই ফল, পাতা, লতা, ডাল ইত্যাদি] দান করার সাওয়াব পাবে। [সহিহ বুখারি শরিফসহ আটটি গ্রন্থ, বুখারির হাদিস নম্বর : ২১৯৫]
অর্থ : হজরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি কোনো গাছ রোপণ করে, তাহলে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হবে, তা তার জন্য সদকা বলে গণ্য হবে। তা থেকে যা চুরি হবে, তা-ও তার জন্য সদকা বলে গণ্য হবে। আর তা থেকে যদি কোনো পাখি বা কোনো হিংস্র প্রাণী খায়, তাহলে সেটাও তার জন্য সদকা বলে গণ্য হবে। আর যদি কেউ ওই গাছের কোনো ক্ষতি করে, তাহলে সেটাও তার জন্য সদকা বলে গণ্য হবে। [সহিহ মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১৫৫২]
অর্থ : হজরত আমর ইবনুল আসি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম যদি কোনো গাছ রোপণ করে বা কোনো শস্য চাষ করে এবং তা থেকে যদি কোনো মানুষ বা কোনো পাখি খায়, তাহলে এর বিনিময়ে সে [জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় ওই ফল, পাতা, লতা, ডাল ইত্যাদি দান করার] সাওয়াব পাবে। [তবরানি আওসাত, হাদিস : ৮৯৮৭]
অর্থ : হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাত উত্তম কাজের সওয়াব মানুষ মৃত্যুর পরও পেকে থাকে। তা হলো—কোনো জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া, কোনো নদী-নালা চালু করা, কোনো কূপ খনন করা, কোনো খেজুরগাছ [যেকোনো ফলগাছ হলে চলবে] রোপণ করা, কোনো একটি মসজিদ নির্মাণ করা, কোনো একটি কিতাব রেখে যাওয়া এবং কোনো সৎ সন্তান রেখে যাওয়া, যে তার জন্য মৃত্যুর পর গুনাহ মাফের দোয়া করবে। [বাইহাকির শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৪৯]
অর্থ : হজরত মুআয ইবনু আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল্লাম বলেছেন, যে কারো ওপর কোনো অন্যায় ও সীমা লঙ্ঘন ছাড়া কোনো গৃহ নির্মাণ করল অথবা কোনো গাছ রোপণ করল, সে এর তত দিন অব্যাহতভাবে সওয়াব পেতে থাকবে, যত দিন তা থেকে আল্ল্লাহর কোনো সৃষ্টি উপকৃত হবে। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৫৬৫৪ ও বাইহাকির শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৪৪৯]
অর্থ : হজরত খল্লাদ ইবনু সায়েব রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল্লাম বলেছেন, যে কোনো চারা রোপণ করল এবং তা থেকে কোনো পাখি বা অন্য কোনো প্রাণী বা মানুষে খেল, তাহলে সে এর জন্য সওয়াব পাবে। [মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৬৬০৭ ও তবরানি কবির, হাদিস : ৪১৩৪]
অর্থ : হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কেয়ামত এসে পড়ে এবং ওই সময় তোমাদের কারো হাতে একটি চারা থাকে, তাহলে সম্ভব হলে সে যেন সেটি রোপণ করে দেয়। [মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৪১৩৪ এবং বুখারির আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৭৯]
পাহাড় সংরক্ষণের নির্দেশ
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—অর্থ : আমি কি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা এবং পাহাড়গুলো পেরেক হিসেবে তৈরি করিনি? [সুরা আন নাবা : ৭৮/৬-৭]
আল্লাহর এই বাণী থেকে প্রতীয়মান হয়, পানির ওপর ভাসমান এই পৃথিবীর স্থিরতার জন্যই তিনি এর ওপর পাহাড়গুলো গেড়ে দিয়েছেন। অতএব, এই পাহাড়ের ক্ষতিসাধন যে পৃথিবীর মাঝে ভূমিকম্প এবং এর আবহাওয়ায় উষ্ণতাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে—অর্থ : হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে তার নিজের অভিভাবককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করল, আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত করুন। আর যে জমিনের কোনো নিদর্শন [পাহাড়-টিলা ও নদী-খাল ইত্যাদি] নষ্ট করল, তাকেও আল্ল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে কোনো অন্ধকে পথ দেখাল না, তাকেও আল্ল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে তার মা-বাবাকে অভিশাপ দিল, তাকেও আল্ল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে কোনো পশুর সঙ্গে সঙ্গম করল, তাকেও আল্ল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে লুত সম্প্রদায়ের কাজ [সমকামিতা] করল, তাকেও আল্ল্লাহ অভিশপ্ত করুন [শেষের এ বাক্যটি তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন]। [মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৫৫ ও আল হাকিম, হাদিস : ৮০৫২]
অর্থ : হজরত কাছির ইবনু আবদুল্লাহ তাঁর পিতা এবং তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন—রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেউ জমিনের কোনো নিদর্শন [পাহাড়-টিলা ও নদী-খাল ইত্যাদি] নষ্ট করলে কেয়ামতের দিন তার ওপর আল্ল্লাহর অভিশাপ ও ক্রোধ পতিত হবে এবং আল্লাহ তার ফরজ-নফল কোনো ইবাদত গ্রহণ করবেন না। [তবরানি কবির : ১৭/২৩]