ঢাকা ০১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিরাতে কান্নার শব্দ শুনতে পেতেন রাবার শ্রমিকরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মে ২০১৫
  • ৪২৬ বার
মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের সঙ্খলা জঙ্গল যেন মানবপাচারের শিকার নারী ও পুরুষদের নির্যাতনের অরণ্য হয়েই ইতিহাসে চিহ্নিত হলো। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাদের ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন ও অত্যাচার। এ যেন আধুনিক দাস ব্যবসার করুণ চিত্র।
মিয়ানমার রাষ্ট্র কর্তৃক বিতাড়িত মুসলিম রোহিঙ্গা নারীদের নিষ্ঠুরভাবে ভোগ করত মানবপাচারকে ঘিরে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা ও বার্মিজ মাফিয়ারা। মানবপাচারের সিন্ডিকেট সদস্যরা নির্যাতন চালিয়ে গেছে তাদের ওপর। সঙ্খলা প্রদেশের পাটাংবাচা জঙ্গলের রাবার শ্রমিক ও রোহিঙ্গারা ইত্তেফাকের প্রতিনিধিকে এমনই তথ্য জানান।
জঙ্গলে নারীদের ওপর নির্যাতনের নেপথ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গা দালাল, বার্মিজ মুন, কিরিং ও শ্যাম সম্প্রদায়ের মাফিয়ারা। তবে গণকবরের সন্ধ্যানের পর থেকে থাই সরকারের কঠোর যৌথ অভিযানে গা ঢাকা দিয়েছে মানবপাচারকারী। যদিও মাফিয়া রোহিঙ্গা আনোয়ারসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে থাই প্রশাসন।
থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নৌকায় করে বাঙ্গালিদেরও ফুসলিয়ে আনা হতো। আর ওই জঙ্গলে আগে থেকে অবস্থান করে থাকতো রোহিঙ্গা ও বার্মিজ দালাল-মাফিয়ারা। যারা চাহিদা মতো অর্থ পেলে গভীর রাতে মানবপাচারের শিকার রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দিতো। কিন্তু নারী হোক আর পুরুষ কেউ তাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতেন না। গত ১লা মে মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে গণকবরের সন্ধানের পর থেকে সারাবিশ্বে হৈইচৈই পড়ে যায়। মূলত রাবার শ্রমিকদের কল্যাণে এই গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সঙ্খলার পাশ্ববর্তী জঙ্গলে রাবার শ্রমিকরা জঙ্গলের কার্যক্রমের বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, গত প্রায় দু’বছর যাবৎ মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে নানা ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে আসছে। প্রতিদিন রাতে তারা জঙ্গলে নারীর কান্না শুনতে পেতেন। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না।
তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা রাত ১২টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত এই জঙ্গলে রাবার শ্রমিক হিসাবে কাজ করে আসছি। মোটরসাইকেল নিয়ে জঙ্গলের গভীরে সংঘবদ্ধভাবে যেতেন এই শ্রমিকরা। ৫ থেকে ১০জন এক একটা টিমে ভাগ করে কাজ করেন তারা। কিন্তু এই জঙ্গলে নারীদের নিয়ে এতো অমানবিক কাজ হতে পারে তা তাদের ভাবনায় ছিল না।
শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, জঙ্গলের গভীরে দূর থেকে তারা দেখতেন একটি জায়গায় ক্যাম্প করে অনেকগুলো মানুষকে বসে বা শুয়ে রাখা হয়েছে। তাদের পাশে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে চার থেকে পাঁচজন। কারো কারো হাতে লাঠি দেখতেন। যেগুলো দিয়ে ওই মানুষগুলোকে মারপিট করা হতো। তাদের নির্যাতনের শব্দ শুনতেন তারা। আর নারীদের পাশে পর্দার মতো কিছু টাঙ্গিয়ে আলাদা করে রাখা হতো। সেখানে নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করতো নরপিশাচগুলো।
আর নারী কন্ঠের ডুকরে ডুকরে কান্নার শব্দ পেতেন তারা।
এ ছাড়া জঙ্গলের অনেক জায়গায় তারা রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছেন বলে জানান।
কখনো কখনো তাদের হত্যার পর মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখা হতো।
তারা বলেন, জঙ্গলে ঘটা নির্যাতনের বিষয়গুলি আমাদের বৌদ্ধ মালিকদের অবগত করলে তারা স্থানীয় মুসলিম কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি সরকারকে অবগত করে। এরপর শুরু হয় গণকবর উদ্ধার অভিযান।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রতিরাতে কান্নার শব্দ শুনতে পেতেন রাবার শ্রমিকরা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মে ২০১৫
মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের সঙ্খলা জঙ্গল যেন মানবপাচারের শিকার নারী ও পুরুষদের নির্যাতনের অরণ্য হয়েই ইতিহাসে চিহ্নিত হলো। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাদের ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন ও অত্যাচার। এ যেন আধুনিক দাস ব্যবসার করুণ চিত্র।
মিয়ানমার রাষ্ট্র কর্তৃক বিতাড়িত মুসলিম রোহিঙ্গা নারীদের নিষ্ঠুরভাবে ভোগ করত মানবপাচারকে ঘিরে গড়ে উঠা রোহিঙ্গা ও বার্মিজ মাফিয়ারা। মানবপাচারের সিন্ডিকেট সদস্যরা নির্যাতন চালিয়ে গেছে তাদের ওপর। সঙ্খলা প্রদেশের পাটাংবাচা জঙ্গলের রাবার শ্রমিক ও রোহিঙ্গারা ইত্তেফাকের প্রতিনিধিকে এমনই তথ্য জানান।
জঙ্গলে নারীদের ওপর নির্যাতনের নেপথ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গা দালাল, বার্মিজ মুন, কিরিং ও শ্যাম সম্প্রদায়ের মাফিয়ারা। তবে গণকবরের সন্ধ্যানের পর থেকে থাই সরকারের কঠোর যৌথ অভিযানে গা ঢাকা দিয়েছে মানবপাচারকারী। যদিও মাফিয়া রোহিঙ্গা আনোয়ারসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে থাই প্রশাসন।
থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নৌকায় করে বাঙ্গালিদেরও ফুসলিয়ে আনা হতো। আর ওই জঙ্গলে আগে থেকে অবস্থান করে থাকতো রোহিঙ্গা ও বার্মিজ দালাল-মাফিয়ারা। যারা চাহিদা মতো অর্থ পেলে গভীর রাতে মানবপাচারের শিকার রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দিতো। কিন্তু নারী হোক আর পুরুষ কেউ তাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতেন না। গত ১লা মে মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে গণকবরের সন্ধানের পর থেকে সারাবিশ্বে হৈইচৈই পড়ে যায়। মূলত রাবার শ্রমিকদের কল্যাণে এই গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সঙ্খলার পাশ্ববর্তী জঙ্গলে রাবার শ্রমিকরা জঙ্গলের কার্যক্রমের বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, গত প্রায় দু’বছর যাবৎ মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে নানা ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে আসছে। প্রতিদিন রাতে তারা জঙ্গলে নারীর কান্না শুনতে পেতেন। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না।
তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা রাত ১২টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত এই জঙ্গলে রাবার শ্রমিক হিসাবে কাজ করে আসছি। মোটরসাইকেল নিয়ে জঙ্গলের গভীরে সংঘবদ্ধভাবে যেতেন এই শ্রমিকরা। ৫ থেকে ১০জন এক একটা টিমে ভাগ করে কাজ করেন তারা। কিন্তু এই জঙ্গলে নারীদের নিয়ে এতো অমানবিক কাজ হতে পারে তা তাদের ভাবনায় ছিল না।
শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, জঙ্গলের গভীরে দূর থেকে তারা দেখতেন একটি জায়গায় ক্যাম্প করে অনেকগুলো মানুষকে বসে বা শুয়ে রাখা হয়েছে। তাদের পাশে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে চার থেকে পাঁচজন। কারো কারো হাতে লাঠি দেখতেন। যেগুলো দিয়ে ওই মানুষগুলোকে মারপিট করা হতো। তাদের নির্যাতনের শব্দ শুনতেন তারা। আর নারীদের পাশে পর্দার মতো কিছু টাঙ্গিয়ে আলাদা করে রাখা হতো। সেখানে নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করতো নরপিশাচগুলো।
আর নারী কন্ঠের ডুকরে ডুকরে কান্নার শব্দ পেতেন তারা।
এ ছাড়া জঙ্গলের অনেক জায়গায় তারা রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছেন বলে জানান।
কখনো কখনো তাদের হত্যার পর মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখা হতো।
তারা বলেন, জঙ্গলে ঘটা নির্যাতনের বিষয়গুলি আমাদের বৌদ্ধ মালিকদের অবগত করলে তারা স্থানীয় মুসলিম কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি সরকারকে অবগত করে। এরপর শুরু হয় গণকবর উদ্ধার অভিযান।