বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের নিবন্ধনের বিধান রেখে বৃহস্পতিবার ‘বিদেশি নিবন্ধন আইন ২০১৪’ নামে একটি বিল সংসদে উত্থাপিত হয়েছে।
সংসদে বেসরকারি দিবসে বিলটি উত্থাপন করেছেন সরকারদলীয় সদস্য ইসরাফিল আলম (নওগাঁ-৬)। বিলটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য বেসরকারি সদস্যদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যে কোন স্থল, নৌ, সমুদ্র এবং বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন করতে হবে এবং তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া বিদেশি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য চাকরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যক্তি বা সংস্থার সম্পাদিত লিখিত চুক্তি বা সম্মতিপত্র বা আমন্ত্রণ পত্র থাকতে হবে। বাংলাদেশের সাথে অপর কোনো রাষ্ট্রের সম্পাদিত কোনো লিখিত চুক্তি থাকতে হবে।
বিলে আরো বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বিদেশি নিবন্ধন সেল থাকবে। নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে, সরকার তফসিলে বর্ণিত তথ্য সম্বলিত মেশিন রিডেবল নিবন্ধন ফরম প্রস্তত করবে। বাংলাদেশে আগমনে ইচ্ছুক প্রত্যেক নাগরিককে ভিসা ফরমের সাথে সংযুক্ত নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হবে। এই নিবন্ধন ফরম দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে এবং বাংলাদেশের বিমান-নৌ-স্থল ও সমুদ্র বন্দরে ব্যবহার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নিবন্ধন ফরমে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বাংলাদেশে প্রবেশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনায় কোনো চুক্তিবদ্ধ বাংলাদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর সংশ্লিষ্টতা থাকলে একই অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হবে। এই আইনের অধীনে অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়েছে।
অপরাধের জন্য অনুর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনুর্ধ্ব এক মাসের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অপরাধে সহযোগিতা কারণে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের কালো তালিকভুক্ত এবং একই অপরাধ পুনঃসংঘটিইনের কারণে ব্যবসায়িক লাইসেন্স (যদি থাকে) বাতিলযোগ্য হবে।
অপরাধ তদন্তকালে অর্থপাচার, রাষ্ট্রদ্রোহীরা ও সন্ত্রাসবাদের মত গুরুতর অপরাধের কোনো উপাদান বা আলামত এর উপস্থিতি প্রতীয়মান হয়, সে ক্ষেত্রে এই আইনের পাশাপাশি প্রচলিত আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্থ হবে না।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর লাখ লাখ বিদেশির আগমন ঘটে। কিন্তু আইনি সীমাবন্ধতার কারণে আমাদের দেশে এই আগমন-বর্হিঃগমনের সঠিক হিসাব সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা এখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি। যার ফলে বাংলাদেশে একদিকে যেমন-মুদ্রা পাচার, মাদক পাচারসহ নারী ও শিশু পাচারের মত আর্থ সামাজিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তেমনি রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদসহ জঙ্গিবাদের মত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে।
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জতিক সম্পর্ক অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে দেশে বিদেশিদের আগমন ও বর্হিগমনের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে প্রয়োজন যুগোপযোগী আইনি কাঠামো।
এ বিষয়টি বিবেচনা রেখে বিদেশিদের আগরমন ও বর্হিঃগমন এর তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ সুনিশ্চিতকল্পে প্রণয়নে ‘বিদেশি নিবন্ধন আইন,২০১৪’ নামক খসড়া বিলটি প্রস্তাব করা হয়েছে।