কেন তারা পদত্যাগ করছেন বিএনপি নেতারা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি থেকে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা পদত্যাগ করেছেন।  গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে  আরো কয়েকজন নেতা শিগগিরই বিএনপি ছাড়তে পারেন।  হঠাৎ এ অবস্থায়  আলোচনায় এসেছে বিএনপির পোড় খাওয়া নেতাদের ঘর ছাড়ার প্রসঙ্গ।  কেন তারা পদত্যাগ করছেন- এ নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম‌্যান মোর্শেদ খান, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস‌্য আলী আজগর লবি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস‌্য শাহ আলম, অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো শাহবুদ্দিন, বগুড়ার প্রভাবশালী নেতা মো. শুকরানা একাশদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দল ছেড়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ভুলের জন্য তারা দল ছেড়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, দলে গণতন্ত্রের অভাব আর রাজনীতি ঘরেই সীমাবদ্ধ।  রয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতা।  বিএনপি নেতার বলছেন, ভুলের জন্য নয়, যারা দল ছেড়েছেন তারা নিজেদের স্বার্থেই দল ছেড়েছেন।

বিগত কয়েক বছরে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ইনাম আহমেদ চৌধুরীর পর বিএনপি ছাড়েন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, মাহবুবুর রহমান।

সম্প্রতি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দল ছাড়েন মোর্শেদ খান।  ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির শাষণামলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে ঝিমিয়ে পড়েন।  দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকাণ্ডে নিস্ক্রিয় থেকে নিজের ব্যবসা দিকেই সময় দিয়েছেন। ২০০৮ সালের পর থেকে কূটনৈতিক ইস্যুতে তার তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।

২০১৩ সালে মোর্শেদ খান, তার স্ত্রী ও ছেলে ফয়সাল মোরশেদের বিরুদ্ধে মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করে দুদক। হংকংয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের হিসাব বাজেয়াপ্ত করতে নিম্ন আদালত রায় দেয়। নিম্ন আদালতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। অনেকের ধারণা রায় পক্ষে পেতে তিনি বিএনপি ছাড়েন।   কিন্তু ১৮ নভেম্বর উচ্চ আদালত নিম্ম আদলতের রায়ই বহাল রেখেছে।  নেতা-কর্মীরা বলছেন, দল ছেড়েও মোর্শেদ খানের লাভ হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, মোর্শেদ খান তো জানিয়ে দিয়েছেন তিনি তার ব্যক্তিগত কারণেই দল ছেড়েছেন।

এনাম আহমেদ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিনি তো আওয়ামী লীগে চলে গেছেন এটা তো অন্য বিষয়।  এরকম তো যাওয়া-আসা আছে আমাদের ভিতরে।’

নেতাদের বিএনপি ছাড়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাত ডা. জাফরুল্লাহ।  তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের চর্চা নেই।  নিজেদের মধ্যে হানাহানি।  দল ছাড়ার পেছনে একটা হলো- দলের মধ্যে আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করছি না।  কথা যা বলি, সেটা কাজে করি না। আরেকটা হচ্ছে কোনো পলিটিক্স না থাকার ফলে, ঘরে বসে পলিটিক্স তো, তাই।’

যারা দল ছেড়েছেন তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে নির্বাচনে যাওয়াটা ভুল ছিল বলে মনে করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।  তিনি বলেন, তখন নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির বিষয়ে জোর দেয়া বেশি দরকার ছিল।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চেীধুরী বলেন, ‘সব পেশায় অবসরে  যায়, রাজনীতিতে যাবে না; এটা কেমন কথা। সব পেশায় অবসর আছে, রাজনীতিতেও আছে।  অসুবিধা কী আছে।  আবার অনেক দলে অবসরে যেতে চায়, কিন্তু ভয়ে করতে পারছে না; এটাও আছে।’

বিএনপির কোনো ভুলের কারণে তারা দল ত্যাগ করছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যারা অবসর নিয়েছেন তারা নিজস্ব ব্যাপারেই নিয়েছেন।  যত রিজাইন করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিনিয়ত বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর