হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছিল শেখ আজগর লস্করের গভীর সখ্য। ওই সময় বিএনপির সভা-সমাবেশেও তার সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই তিনি ভোল পাল্টে চলতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। পরে মৎস্যজীবী লীগের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করেন আওয়ামী রাজনীতিতে। এরপরই বদলাতে থাকে সব কিছু।
এক সময়ের কাঠের বেপারি আজগর লস্কর কয়েক বছরের ব্যবধানে হয়ে যান হাজার কোটি টাকার মালিক। চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা পড়েছে বলে একাধিক সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আজগর লস্করের আদি নিবাস ভারতের হাওড়া জেলায়। সেখান থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন ঠাকুরগাঁও জেলায়। নানা অপকর্মের পর চলে আসেন দিনাজপুরে। এসেই একটার পর একটা অঘটন ঘটিয়ে এলাকার ত্রাসে পরিণত হন।
একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে জেলেও যান আজগর। এক সময় জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ঢাকায় চলে আসেন। শুরু করেন কাঠের ব্যবসা। কিন্তু সে ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে গলাকাটা পাসপোর্টের আদম ব্যবসা শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, তার কাঠের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেবলই লোক দেখানো। আদম ব্যবসার আড়ালে তিনি নানারকম অবৈধ ব্যবসায় জড়িত বলে সন্দেহ অনেকের। বিশেষ করে টক্কা (সাংকেতিক নাম), ১৪ ইঞ্চি/১৭ ইঞ্চির নিষিদ্ধ (পিলার) ব্যবসা ছাড়াও মানি লন্ডারিংয়ের মতো একাধিক অবৈধ ব্যবসায় জড়িত আজগর। আর এতেই বদলাতে থাকে তার ভাগ্য। এখন তিনি থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাটে। বনানীর কাকলী এলাকায় রয়েছে তার বিশাল অফিস। আরেকটি অফিস রয়েছে টঙ্গী এলাকায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে শেখ আজগর লস্করের ৭-৮টি ফ্ল্যাট-বাড়ি, আলিশান অফিস, ৪-৫টি দামি গাড়ি রয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালের শেষের দিকে ফকিরাপুলে সাউথ প্যাসিফিক নামের (১০ তলা) একটি আবাসিক হোটেল ৬০ কোটি টাকায় কিনেছেন।
ঢাকার অদূরে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জে কয়েক একর জমির মালিক তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে চলাচলকারী ৭-৮টি কার্গো লরির মালিক আজগর; যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। এছাড়া তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকা জমা রয়েছে।
এদিকে মৎস্যজীবী লীগের একাধিক সূত্রের দাবি, আজগরের প্রকৃত পদবি হল লস্কর। কিন্তু শেখ টাইটেল জুড়ে দিয়ে নিজেকে শেখ পরিবারের সদস্য হিসেবে জাহির করছেন।
এদিকে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগকে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন করা হচ্ছে- এমন আলোচনা শুরু হওয়ার পর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পদ বাগাতে মরিয়া আজগর। ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রভাবশালী নেতাদের কাছে। এছাড়া পোষ্য কর্মীদের পেছনে ব্যয় করছেন অঢেল টাকা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বুধবার সন্ধ্যায় শেখ আজগর লস্করের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর এ বিষয়ে তার মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।