ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়ক আইন বাস্তবায়ন শুরুতেই চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৯
  • ১৯১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছে। পরিবহন মালিক শ্রমিক এ আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশে।  আইন কার্যকর শুরু না করতেই সংশোধনের দাবিতে গত সোমবার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করছেন বাসচালক ও শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবারও এ ধর্মঘট অব্যাহত ছিল। এ আইন সংশোধনের দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে। এর মধ্যে আজ বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বাস মালিক শ্রমিকদের এই বেপরোয়া নৈরাজ্যের ফলে অর্থাৎ কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ গণপরিবহনের এমন সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস ছেড়ে না আসায় তাদের দুর্ভোগও ছিল চরমে। গতকালও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিআরটিএর ৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। এসব আদালত বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৭৯টি মামলা ও ১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা এবং ৩টি যানের কাগজপত্র জব্দ করেন।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবিতে দুই দিন ধরে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এ ছাড়া ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জেলায়ও চলছে অঘোষিত ধর্মঘট। এতে যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এভাবেই যাত্রীদের জিম্মি করে ধর্মঘট চালিয়ে যা”েছ।

ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট
এদিকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ¯’গিত ও সংশোধনের দাবিসহ ৯ দফা দাবি জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন ও ধর্মঘট ডাকেন সংগঠনের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান। এ সময় সদস্য সচিব মো. তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মুকবুল আহমেদ ও যুগ্ম সচিব তালুকদার মো. মনির প্রমুখ উপ¯ি’ত ছিলেন।

৯ দফা দাবির মধ্যেÑ মালিক-শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জরিমানা ও দ- নির্ধারণ, সড়ক ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল কমিটিতে সংগঠনটির প্রতিনিধি রাখা, চালককে এককভাবে দায়ী না করা এবং মামলা জামিনযোগ্য ধারায় রাখাসহ তদন্তে প্রতিনিধি রাখা। নভেম্বর-২০১৯ এর আগের তৈরি গাড়ির নতুন দৈর্ঘ্য, প্র¯’, উ”চতা নির্ধারণ না করে চলাচলের অনুমতি, সড়ক-মহাসড়ক ও হাইওয়েতে গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, সকল জেলা টার্মিনাল ও ট্রাকস্ট্যান্ডে অথবা লোডিং পয়েন্টে গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিং করা, সহজ শর্তে স্বল্প সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়াসহ মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও ভটভটিসহ রেজিস্ট্রেশনবিহীন সকল যান চলাচল নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণে অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল রাজধানীতে বাসসহ গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল অনেক কম। মামলা ও জরিমানা এড়াতে রাস্তায় বাস নামাননি মালিক ও চালকরা। এতে দিনভর নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সকালে অফিস বা কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বের হয়েই দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষসহ সাধারণ যাত্রীরা। এছাড়া স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গন্তব্যে পৌঁছতে দুর্ভোগ ছিল সীমাহীন। নগরীর প্রতিটি মোড়ে অফিসগামী মানুষের অনেক ভিড় দেখা গেছে। গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গতকাল নগরীর বাড্ডা, গুলশান ও মগবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সোমবারের তুলনায় গতকাল বাসের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। সকালবেলা যমুনা ফিউচার পার্ক, নর্দায় বাসস্টপে যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। দুপুর থেকে ভিড় একটু কমে আসে। প্রগতি সরণিতে কথা হয় ট্রাফিক বিভাগের (উত্তর) এডিসি আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরেই রাস্তার বাস কম। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল ছিল আরও কম।

মিরপুর থেকে মতিঝিলে অফিস করা ব্যাংক কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস পাইনি। মিরপুর ১২ নম্বরে বাসস্ট্যান্ডেও যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা অনেক কম ছিল। মারাত্মক ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে হয়েছে যাত্রীদের। তবে রাস্তায় যানজট কম ছিল।

দূরপাল্লার কাউন্টারেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। এক বাসচালক বলেন, রাজপথে তাদের জেল জরিমানার ভয় আছে। সড়কে গাড়ি নিয়ে নামলে টুকটাক সমস্যা হবেই। যার কারণে ঝামেলায় পড়ার চেয়ে গাড়ি না নামানোই ভালো।

নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত
গতকালও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। দিনভর চলা বিআরটিএ’র ৭টি আদালত বিভিন্ন যানবাহনে ৭৯টি মামলা ও ১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া তিনটি যানের কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।

গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট বসেছিল মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় রাজধানী উ”চবিদ্যালয়ের সামনে সংসদ সদস্যদের ভবনের সামনের রাস্তায়। এসময় বেশ কয়েকটি যানবাহনকে বিভিন্ন ধরনের জরিমানা করতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (পশ্চিম) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, জরিমানা করা একটি বাসের চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না, আরেকটি বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানো ছিল না এবং আরেকটি বাসে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়েছিল।

মোবাইল কোর্টের পাশে মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরাগামী আর্ক পরিবহনের মালিক মজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাদের পরিবহনের ৩০টি বাস চালক সংকটের কারণে ১৫ দিন ধরে চলছে না। তিনি আরও বলেন, চালকদের এখন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে ভারী যান চালানোর লাইসেন্স দি”েছ না। তাই বাস চালানোর জন্য চালক পাওয়া যা”েছ না। আমরা তো আর ঋণ করে বাস চালাতে হবে না।
মজিবুর রহমান বলেন, এখন যে গণপরিবহনের শৃঙ্খলার কথা বলা হ”েছ, সরকার তিনটি বিষয় নির্ধারণ করলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং ভোগান্তি দূর হবে। তিনি বলেন, কাউন্টার সার্ভিস চালু এবং টিকিটের ব্যব¯’া করা। চালক হেলপারদের চুক্তিভিত্তিক ভাড়া না দিয়ে নির্দিষ্ট দৈনিক হিসেবে দেয়া। এছাড়া কিলোমিটার হিসাবের ভাড়াকে তিনটি ধাপে ভাগ করে পুনরায় নির্ধারণ করার মত দেন তিনি।

এদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সরকারি সং¯’ার কোনো যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে না দেখে প্রশ্ন তোলেন অন্যান্য পরিবহনের চালকরা। পরে বিআরটিসির বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গতকাল মানিক মিয়া এভিনিউতে দোতলা বাস থামিয়ে কাগজ যাচাই করেন বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ সাদিয়া তাজনীন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে মানিক মিয়া এভিনিউতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল থেকেই একে একে বেসরকারি বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় কয়েকজন পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী বিআরটিসির বাস না ধরা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
গাবতলী রুটে চলাচলকারী গাবতলী লিংকের একটি বাসের মালিক নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, নতুন আইন অনুযায়ী জরিমানা করছে তা মানলাম। কিš‘ এই অভিযানে বিআরটিসির বাস বাদ যাবে কেন?

এ সময় একযাত্রী বলেন, আইন প্রয়োগ করলে সবার জন্য একই ব্যব¯’া হওয়া উচিত। বিআরটিসি বাসও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। সকাল থেকে অনেকগুলো গাড়ি সামনে দিয়ে চলে গেছে। কিš‘ কোনো গাড়ি ধরে কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়নি।

বিআরটিসি বাস কেন ধরা হ”েছ নাÑ জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ বলেন, আমরা সব ধরনের পরিবহনের কাগজপত্র দেখছি। এখানে কোনো বিভেদ নেই। বিআরটিসির বাস কেন থামানো হ”েছ না জানতে চাইলে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট স্যার নির্দেশ না দিলে আমি পারব না।

এর কিছুক্ষণ পর ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ পেয়ে মোহাম্মদপুর থেকে কুড়িল রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির একটি দোতলা বাস (নম্বর-ঢাকা মেট্রো ব ১১-৫৮১২) থামানো হয়। ট্রাফিক সার্জেন্ট কাগজপত্র চাইলে মামলার একটি কাগজ বের করে দেখান বাসের চালক। ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান যে, আগের মামলাটি লাইসেন্সের। সেটার জরিমানাও দেয়া হয়েছে। কিš‘ লাইসেন্স তোলা হয়নি। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট চালককে বলেন, এভাবে লাইসেন্স ছাড়া আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন না। এরপর বাস ডিপোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ম্যাজিস্ট্রেট। লাইসেন্সবিহীন এই চালককে দিয়ে আর বাস না চালানোর নির্দেশ দেন তিনি।

বিকাশ পরিবহনের মালিক মজিবর রহমান বলেন, আমাদের লাইসেন্স না দিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয় কেন? আমরা কি জোর করে চাইছিলাম? দ্বৈতনীতি কেন? আমার বাসের এক গেট খোলা থাকলেই মামলা দেয়, আর বিআরটিসির দুই গেট খোলা থাকলেও মামলা হয় না। এছাড়া আমাদের কাগজপত্র রিনিউ করতে গেলে সময়মতো দেয় না। মনে হ”েছ যে, আমি গাড়ি নামাইছি তা পাপ হইছে বলে তিনি ক্ষোভ ঝাড়েন।
দেশের বিভিন্ন্ স্নান থেকে আমাদের সংবাদদাতাদের এ সংক্রান্ত পাঠানো খবরে প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় : নগরীর ১২টি রুটের প্রায় সবকটিতে গতকাল বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। একই চিত্র ছিল মহানগরী থেকে উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটেও। পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, নতুন আইনে সাজার মেয়াদ এবং জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। এতে করে চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে অনেকে যানবাহন রাস্তায় নামা”েছন না।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হ”েছ, অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না। নতুন আইনে কড়াকড়ি থাকলেও এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও সময় নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

যশোর ব্যুরো জানায়: যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, কুস্টিয়া ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘোষণা ছাড়াই পরিবহণ ধর্মঘটের পরিধি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। প্রথমে যশোরের ১৮টি রুটে পরিবহণ শ্রমিকদের স্বে”ছায় কর্মবিতি শুরু হয় রোববার। এরপর সোমবার থেকে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মবিরতি চলে। মঙ্গলবার আরো এলাকা যুক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে যশোর জেলা পরিবহণ সং¯’া শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোর্তজা হোসেন জানান, শ্রমিকরা অব¯’ান থেকে সরছেন না। সড়ক আইন বাস্তবায়ন ¯’গিত ঘোষণা দিয়ে না ফেডারেশন নেতাদের কাছে বৈঠক হলেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে। তা না হলে চলবে। তাদের কথা বুধবার থেকে আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন, ধর্মঘট অবসানের কোন লক্ষণ দেখা যা”েছ না।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়: রাজশাহীতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সোমবার ‘অঘোষিত’ ধর্মঘটের খানিকটা অবসান হয়েছে। যাদের কাগজপত্র ঠিকমত আছে সেসব গাড়ি রাস্তায় নামিয়েছেন শ্রমিকরা। সরেজমিনে নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী থেকে যাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়ে যা”েছ। রাজশাহী থেকে সাতক্ষীরাগামী জনি পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের কাগজপত্র সব ঠিক আছে, গাড়ি চালাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। গতকালও আমি গাড়ি চালিয়েছি। তবে দুপুরে রাজশাহী এসে গাড়ি আর ছাড়তে দেয়নি। আমার মনে হয়, যাদের কাগজ নেই, দ্রুত করে নেওয়া উচিত। কারণ আইন যেহেতু পাস হয়ে গেছে, এখন মানতেই হবে।

বরিশাল ব্যুরো জানায় : বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুট সমুহে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সাধারন যাত্রীরা চরম দূর্ভেগে পড়েছেন। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের দাবী এটা কোন ধর্মঘট নয়, নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকায় তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে জানান, জেল-জরিমানার ভয়ে শ্রমিকরা বাস চালা”েছন না। ধর্মঘটের সঙ্গে মালিকদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

মাদারীপুর : শ্রমিকদের দাবী, বিদ্যমান আইনের কারনে শ্রমিকদের দায়িত্বপালন করা সম্ভব নয়। তাই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্ম বিরতি শুরু করেছে। আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি ও ঘর্মঘট চলবে। তবে এভাবে কোন ঘোষনা ছাড়া ধর্মঘট ডাকায় বেকায়দায় পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।

এব্যাপারে মাদারীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, নতুন আইনটি সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের উপর এক প্রকার গলায় ফাঁসির মতো চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। এই ফাঁসির দড়ি নিয়ে কোন শ্রমিক আর পরিবহন চালাবে না। তাই দ্রুত আইনটি সংশোধন করে পুনঃবির্বেচনা করতে হবে। না হলে লাগাতার আন্দোলনে থাকবে শ্রমিকরা।

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে : শ্রমিক ধমর্ঘটের কারণে মাগুরা-যশোর সড়কে তৃতীয় দিনের মত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ এ ধর্মঘটের ফলে এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিকল্প হিসেবে ইজিবাইক, টেম্পু ও সিএনজিতে করে যাতায়াতের ফলে যাত্রীদের দ্বিগুণ অর্থ ও অধিক সময় ব্যায় করতে হ”েছ।
জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমদাদুর রহমান জানান, সম্প্রতি সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু জনিত কারনে চালকের মৃত্যুদ-সহ মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান করায় সাধারণ শ্রমিকরা এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
নওগাঁ : জেলার বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার ১১টি উপজেলার সকল রুটের মেইল ও লোকাল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে রাজশাহী ও বগুড়া চলাচলের সকল বাস। ফলে দূরপাল্লার রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

স্টাফ রিপোর্টার,পাবনা থেকে : শ্রমিকদের একপক্ষ পরিবহণ পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইছেন, আর এক পক্ষ পরিবহণ চালানোর পক্ষে রয়েছেন। সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হ”েছ। যে কোচগুলো রাজধানী এবং বাস অভ্যন্তরীণ রুটে যেতে চাইছে এদের সিডিউল ঠিক থাকছেন। অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়েছেন যাত্রীরা ।

নগরীর ১২টি রুটের প্রায় সবকটিতে গতকাল বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। একই চিত্র ছিল মহানগরী থেকে উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটেও। পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, নতুন আইনে সাজার মেয়াদ এবং জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। এতে করে চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে অনেকে যানবাহন রাস্তায় নামা”েছন না।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হ”েছ, অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না। নতুন আইনে কড়াকড়ি থাকলেও এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও সময় নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

যশোর ব্যুরো জানায়: যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, কুস্টিয়া ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘোষণা ছাড়াই পরিবহণ ধর্মঘটের পরিধি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। প্রথমে যশোরের ১৮টি রুটে পরিবহণ শ্রমিকদের স্বে”ছায় কর্মবিতি শুরু হয় রোববার। এরপর সোমবার থেকে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মবিরতি চলে। মঙ্গলবার আরো এলাকা যুক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে যশোর জেলা পরিবহণ সং¯’া শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোর্তজা হোসেন জানান, শ্রমিকরা অব¯’ান থেকে সরছেন না। সড়ক আইন বাস্তবায়ন ¯’গিত ঘোষণা দিয়ে না ফেডারেশন নেতাদের কাছে বৈঠক হলেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে। তা না হলে চলবে। তাদের কথা বুধবার থেকে আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন, ধর্মঘট অবসানের কোন লক্ষণ দেখা যা”েছ না।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়: রাজশাহীতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সোমবার ‘অঘোষিত’ ধর্মঘটের খানিকটা অবসান হয়েছে। যাদের কাগজপত্র ঠিকমত আছে সেসব গাড়ি রাস্তায় নামিয়েছেন শ্রমিকরা। সরেজমিনে নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী থেকে যাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়ে যা”েছ। রাজশাহী থেকে সাতক্ষীরাগামী জনি পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের কাগজপত্র সব ঠিক আছে, গাড়ি চালাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। গতকালও আমি গাড়ি চালিয়েছি। তবে দুপুরে রাজশাহী এসে গাড়ি আর ছাড়তে দেয়নি। আমার মনে হয়, যাদের কাগজ নেই, দ্রুত করে নেওয়া উচিত। কারণ আইন যেহেতু পাস হয়ে গেছে, এখন মানতেই হবে।

বরিশাল ব্যুরো জানায় : বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুট সমুহে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সাধারন যাত্রীরা চরম দূর্ভেগে পড়েছেন। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের দাবী এটা কোন ধর্মঘট নয়, নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকায় তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে জানান, জেল-জরিমানার ভয়ে শ্রমিকরা বাস চালা”েছন না। ধর্মঘটের সঙ্গে মালিকদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

মাদারীপুর : শ্রমিকদের দাবী, বিদ্যমান আইনের কারনে শ্রমিকদের দায়িত্বপালন করা সম্ভব নয়। তাই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্ম বিরতি শুরু করেছে। আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি ও ঘর্মঘট চলবে। তবে এভাবে কোন ঘোষনা ছাড়া ধর্মঘট ডাকায় বেকায়দায় পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।

এব্যাপারে মাদারীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, নতুন আইনটি সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের উপর এক প্রকার গলায় ফাঁসির মতো চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। এই ফাঁসির দড়ি নিয়ে কোন শ্রমিক আর পরিবহন চালাবে না। তাই দ্রুত আইনটি সংশোধন করে পুনঃবির্বেচনা করতে হবে। না হলে লাগাতার আন্দোলনে থাকবে শ্রমিকরা।

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে : শ্রমিক ধমর্ঘটের কারণে মাগুরা-যশোর সড়কে তৃতীয় দিনের মত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ এ ধর্মঘটের ফলে এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিকল্প হিসেবে ইজিবাইক, টেম্পু ও সিএনজিতে করে যাতায়াতের ফলে যাত্রীদের দ্বিগুণ অর্থ ও অধিক সময় ব্যায় করতে হ”েছ।
জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমদাদুর রহমান জানান, সম্প্রতি সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু জনিত কারনে চালকের মৃত্যুদ-সহ মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান করায় সাধারণ শ্রমিকরা এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
নওগাঁ : জেলার বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার ১১টি উপজেলার সকল রুটের মেইল ও লোকাল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে রাজশাহী ও বগুড়া চলাচলের সকল বাস। ফলে দূরপাল্লার রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

স্টাফ রিপোর্টার,পাবনা থেকে : শ্রমিকদের একপক্ষ পরিবহণ পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইছেন, আর এক পক্ষ পরিবহণ চালানোর পক্ষে রয়েছেন। সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হ”েছ। যে কোচগুলো রাজধানী এবং বাস অভ্যন্তরীণ রুটে যেতে চাইছে এদের সিডিউল ঠিক থাকছেন। অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়েছেন যাত্রীরা ।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সড়ক আইন বাস্তবায়ন শুরুতেই চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

আপডেট টাইম : ০৭:৫৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছে। পরিবহন মালিক শ্রমিক এ আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশে।  আইন কার্যকর শুরু না করতেই সংশোধনের দাবিতে গত সোমবার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করছেন বাসচালক ও শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবারও এ ধর্মঘট অব্যাহত ছিল। এ আইন সংশোধনের দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে। এর মধ্যে আজ বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বাস মালিক শ্রমিকদের এই বেপরোয়া নৈরাজ্যের ফলে অর্থাৎ কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ গণপরিবহনের এমন সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস ছেড়ে না আসায় তাদের দুর্ভোগও ছিল চরমে। গতকালও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিআরটিএর ৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়েছে। এসব আদালত বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে ৭৯টি মামলা ও ১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা এবং ৩টি যানের কাগজপত্র জব্দ করেন।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবিতে দুই দিন ধরে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এ ছাড়া ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকটি জেলায়ও চলছে অঘোষিত ধর্মঘট। এতে যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এভাবেই যাত্রীদের জিম্মি করে ধর্মঘট চালিয়ে যা”েছ।

ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট
এদিকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ¯’গিত ও সংশোধনের দাবিসহ ৯ দফা দাবি জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন ও ধর্মঘট ডাকেন সংগঠনের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান। এ সময় সদস্য সচিব মো. তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মুকবুল আহমেদ ও যুগ্ম সচিব তালুকদার মো. মনির প্রমুখ উপ¯ি’ত ছিলেন।

৯ দফা দাবির মধ্যেÑ মালিক-শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জরিমানা ও দ- নির্ধারণ, সড়ক ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল কমিটিতে সংগঠনটির প্রতিনিধি রাখা, চালককে এককভাবে দায়ী না করা এবং মামলা জামিনযোগ্য ধারায় রাখাসহ তদন্তে প্রতিনিধি রাখা। নভেম্বর-২০১৯ এর আগের তৈরি গাড়ির নতুন দৈর্ঘ্য, প্র¯’, উ”চতা নির্ধারণ না করে চলাচলের অনুমতি, সড়ক-মহাসড়ক ও হাইওয়েতে গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, সকল জেলা টার্মিনাল ও ট্রাকস্ট্যান্ডে অথবা লোডিং পয়েন্টে গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিং করা, সহজ শর্তে স্বল্প সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়াসহ মহাসড়কে নসিমন, করিমন ও ভটভটিসহ রেজিস্ট্রেশনবিহীন সকল যান চলাচল নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণে অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল রাজধানীতে বাসসহ গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল অনেক কম। মামলা ও জরিমানা এড়াতে রাস্তায় বাস নামাননি মালিক ও চালকরা। এতে দিনভর নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সকালে অফিস বা কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বের হয়েই দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষসহ সাধারণ যাত্রীরা। এছাড়া স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গন্তব্যে পৌঁছতে দুর্ভোগ ছিল সীমাহীন। নগরীর প্রতিটি মোড়ে অফিসগামী মানুষের অনেক ভিড় দেখা গেছে। গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গতকাল নগরীর বাড্ডা, গুলশান ও মগবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সোমবারের তুলনায় গতকাল বাসের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। সকালবেলা যমুনা ফিউচার পার্ক, নর্দায় বাসস্টপে যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। দুপুর থেকে ভিড় একটু কমে আসে। প্রগতি সরণিতে কথা হয় ট্রাফিক বিভাগের (উত্তর) এডিসি আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরেই রাস্তার বাস কম। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল ছিল আরও কম।

মিরপুর থেকে মতিঝিলে অফিস করা ব্যাংক কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস পাইনি। মিরপুর ১২ নম্বরে বাসস্ট্যান্ডেও যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা অনেক কম ছিল। মারাত্মক ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে হয়েছে যাত্রীদের। তবে রাস্তায় যানজট কম ছিল।

দূরপাল্লার কাউন্টারেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। এক বাসচালক বলেন, রাজপথে তাদের জেল জরিমানার ভয় আছে। সড়কে গাড়ি নিয়ে নামলে টুকটাক সমস্যা হবেই। যার কারণে ঝামেলায় পড়ার চেয়ে গাড়ি না নামানোই ভালো।

নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত
গতকালও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। দিনভর চলা বিআরটিএ’র ৭টি আদালত বিভিন্ন যানবাহনে ৭৯টি মামলা ও ১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া তিনটি যানের কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।

গতকাল বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট বসেছিল মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় রাজধানী উ”চবিদ্যালয়ের সামনে সংসদ সদস্যদের ভবনের সামনের রাস্তায়। এসময় বেশ কয়েকটি যানবাহনকে বিভিন্ন ধরনের জরিমানা করতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (পশ্চিম) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, জরিমানা করা একটি বাসের চালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না, আরেকটি বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানো ছিল না এবং আরেকটি বাসে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়েছিল।

মোবাইল কোর্টের পাশে মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরাগামী আর্ক পরিবহনের মালিক মজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাদের পরিবহনের ৩০টি বাস চালক সংকটের কারণে ১৫ দিন ধরে চলছে না। তিনি আরও বলেন, চালকদের এখন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে ভারী যান চালানোর লাইসেন্স দি”েছ না। তাই বাস চালানোর জন্য চালক পাওয়া যা”েছ না। আমরা তো আর ঋণ করে বাস চালাতে হবে না।
মজিবুর রহমান বলেন, এখন যে গণপরিবহনের শৃঙ্খলার কথা বলা হ”েছ, সরকার তিনটি বিষয় নির্ধারণ করলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং ভোগান্তি দূর হবে। তিনি বলেন, কাউন্টার সার্ভিস চালু এবং টিকিটের ব্যব¯’া করা। চালক হেলপারদের চুক্তিভিত্তিক ভাড়া না দিয়ে নির্দিষ্ট দৈনিক হিসেবে দেয়া। এছাড়া কিলোমিটার হিসাবের ভাড়াকে তিনটি ধাপে ভাগ করে পুনরায় নির্ধারণ করার মত দেন তিনি।

এদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সরকারি সং¯’ার কোনো যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে না দেখে প্রশ্ন তোলেন অন্যান্য পরিবহনের চালকরা। পরে বিআরটিসির বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গতকাল মানিক মিয়া এভিনিউতে দোতলা বাস থামিয়ে কাগজ যাচাই করেন বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ সাদিয়া তাজনীন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পরে মানিক মিয়া এভিনিউতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল থেকেই একে একে বেসরকারি বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় কয়েকজন পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী বিআরটিসির বাস না ধরা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
গাবতলী রুটে চলাচলকারী গাবতলী লিংকের একটি বাসের মালিক নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, নতুন আইন অনুযায়ী জরিমানা করছে তা মানলাম। কিš‘ এই অভিযানে বিআরটিসির বাস বাদ যাবে কেন?

এ সময় একযাত্রী বলেন, আইন প্রয়োগ করলে সবার জন্য একই ব্যব¯’া হওয়া উচিত। বিআরটিসি বাসও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। সকাল থেকে অনেকগুলো গাড়ি সামনে দিয়ে চলে গেছে। কিš‘ কোনো গাড়ি ধরে কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়নি।

বিআরটিসি বাস কেন ধরা হ”েছ নাÑ জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ বলেন, আমরা সব ধরনের পরিবহনের কাগজপত্র দেখছি। এখানে কোনো বিভেদ নেই। বিআরটিসির বাস কেন থামানো হ”েছ না জানতে চাইলে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট স্যার নির্দেশ না দিলে আমি পারব না।

এর কিছুক্ষণ পর ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ পেয়ে মোহাম্মদপুর থেকে কুড়িল রুটে চলাচলকারী বিআরটিসির একটি দোতলা বাস (নম্বর-ঢাকা মেট্রো ব ১১-৫৮১২) থামানো হয়। ট্রাফিক সার্জেন্ট কাগজপত্র চাইলে মামলার একটি কাগজ বের করে দেখান বাসের চালক। ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান যে, আগের মামলাটি লাইসেন্সের। সেটার জরিমানাও দেয়া হয়েছে। কিš‘ লাইসেন্স তোলা হয়নি। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট চালককে বলেন, এভাবে লাইসেন্স ছাড়া আপনি গাড়ি চালাতে পারবেন না। এরপর বাস ডিপোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ম্যাজিস্ট্রেট। লাইসেন্সবিহীন এই চালককে দিয়ে আর বাস না চালানোর নির্দেশ দেন তিনি।

বিকাশ পরিবহনের মালিক মজিবর রহমান বলেন, আমাদের লাইসেন্স না দিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয় কেন? আমরা কি জোর করে চাইছিলাম? দ্বৈতনীতি কেন? আমার বাসের এক গেট খোলা থাকলেই মামলা দেয়, আর বিআরটিসির দুই গেট খোলা থাকলেও মামলা হয় না। এছাড়া আমাদের কাগজপত্র রিনিউ করতে গেলে সময়মতো দেয় না। মনে হ”েছ যে, আমি গাড়ি নামাইছি তা পাপ হইছে বলে তিনি ক্ষোভ ঝাড়েন।
দেশের বিভিন্ন্ স্নান থেকে আমাদের সংবাদদাতাদের এ সংক্রান্ত পাঠানো খবরে প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় : নগরীর ১২টি রুটের প্রায় সবকটিতে গতকাল বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। একই চিত্র ছিল মহানগরী থেকে উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটেও। পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, নতুন আইনে সাজার মেয়াদ এবং জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। এতে করে চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে অনেকে যানবাহন রাস্তায় নামা”েছন না।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হ”েছ, অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না। নতুন আইনে কড়াকড়ি থাকলেও এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও সময় নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

যশোর ব্যুরো জানায়: যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, কুস্টিয়া ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘোষণা ছাড়াই পরিবহণ ধর্মঘটের পরিধি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। প্রথমে যশোরের ১৮টি রুটে পরিবহণ শ্রমিকদের স্বে”ছায় কর্মবিতি শুরু হয় রোববার। এরপর সোমবার থেকে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মবিরতি চলে। মঙ্গলবার আরো এলাকা যুক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে যশোর জেলা পরিবহণ সং¯’া শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোর্তজা হোসেন জানান, শ্রমিকরা অব¯’ান থেকে সরছেন না। সড়ক আইন বাস্তবায়ন ¯’গিত ঘোষণা দিয়ে না ফেডারেশন নেতাদের কাছে বৈঠক হলেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে। তা না হলে চলবে। তাদের কথা বুধবার থেকে আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন, ধর্মঘট অবসানের কোন লক্ষণ দেখা যা”েছ না।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়: রাজশাহীতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সোমবার ‘অঘোষিত’ ধর্মঘটের খানিকটা অবসান হয়েছে। যাদের কাগজপত্র ঠিকমত আছে সেসব গাড়ি রাস্তায় নামিয়েছেন শ্রমিকরা। সরেজমিনে নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী থেকে যাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়ে যা”েছ। রাজশাহী থেকে সাতক্ষীরাগামী জনি পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের কাগজপত্র সব ঠিক আছে, গাড়ি চালাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। গতকালও আমি গাড়ি চালিয়েছি। তবে দুপুরে রাজশাহী এসে গাড়ি আর ছাড়তে দেয়নি। আমার মনে হয়, যাদের কাগজ নেই, দ্রুত করে নেওয়া উচিত। কারণ আইন যেহেতু পাস হয়ে গেছে, এখন মানতেই হবে।

বরিশাল ব্যুরো জানায় : বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুট সমুহে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সাধারন যাত্রীরা চরম দূর্ভেগে পড়েছেন। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের দাবী এটা কোন ধর্মঘট নয়, নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকায় তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে জানান, জেল-জরিমানার ভয়ে শ্রমিকরা বাস চালা”েছন না। ধর্মঘটের সঙ্গে মালিকদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

মাদারীপুর : শ্রমিকদের দাবী, বিদ্যমান আইনের কারনে শ্রমিকদের দায়িত্বপালন করা সম্ভব নয়। তাই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্ম বিরতি শুরু করেছে। আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি ও ঘর্মঘট চলবে। তবে এভাবে কোন ঘোষনা ছাড়া ধর্মঘট ডাকায় বেকায়দায় পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।

এব্যাপারে মাদারীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, নতুন আইনটি সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের উপর এক প্রকার গলায় ফাঁসির মতো চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। এই ফাঁসির দড়ি নিয়ে কোন শ্রমিক আর পরিবহন চালাবে না। তাই দ্রুত আইনটি সংশোধন করে পুনঃবির্বেচনা করতে হবে। না হলে লাগাতার আন্দোলনে থাকবে শ্রমিকরা।

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে : শ্রমিক ধমর্ঘটের কারণে মাগুরা-যশোর সড়কে তৃতীয় দিনের মত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ এ ধর্মঘটের ফলে এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিকল্প হিসেবে ইজিবাইক, টেম্পু ও সিএনজিতে করে যাতায়াতের ফলে যাত্রীদের দ্বিগুণ অর্থ ও অধিক সময় ব্যায় করতে হ”েছ।
জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমদাদুর রহমান জানান, সম্প্রতি সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু জনিত কারনে চালকের মৃত্যুদ-সহ মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান করায় সাধারণ শ্রমিকরা এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
নওগাঁ : জেলার বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার ১১টি উপজেলার সকল রুটের মেইল ও লোকাল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে রাজশাহী ও বগুড়া চলাচলের সকল বাস। ফলে দূরপাল্লার রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

স্টাফ রিপোর্টার,পাবনা থেকে : শ্রমিকদের একপক্ষ পরিবহণ পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইছেন, আর এক পক্ষ পরিবহণ চালানোর পক্ষে রয়েছেন। সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হ”েছ। যে কোচগুলো রাজধানী এবং বাস অভ্যন্তরীণ রুটে যেতে চাইছে এদের সিডিউল ঠিক থাকছেন। অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়েছেন যাত্রীরা ।

নগরীর ১২টি রুটের প্রায় সবকটিতে গতকাল বাস-মিনিবাসের সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। একই চিত্র ছিল মহানগরী থেকে উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটেও। পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানান, নতুন আইনে সাজার মেয়াদ এবং জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। এতে করে চালকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে অনেকে যানবাহন রাস্তায় নামা”েছন না।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হ”েছ, অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হবে না। নতুন আইনে কড়াকড়ি থাকলেও এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও সময় নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

যশোর ব্যুরো জানায়: যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, কুস্টিয়া ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘোষণা ছাড়াই পরিবহণ ধর্মঘটের পরিধি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। প্রথমে যশোরের ১৮টি রুটে পরিবহণ শ্রমিকদের স্বে”ছায় কর্মবিতি শুরু হয় রোববার। এরপর সোমবার থেকে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মবিরতি চলে। মঙ্গলবার আরো এলাকা যুক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে যশোর জেলা পরিবহণ সং¯’া শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোর্তজা হোসেন জানান, শ্রমিকরা অব¯’ান থেকে সরছেন না। সড়ক আইন বাস্তবায়ন ¯’গিত ঘোষণা দিয়ে না ফেডারেশন নেতাদের কাছে বৈঠক হলেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে। তা না হলে চলবে। তাদের কথা বুধবার থেকে আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন, ধর্মঘট অবসানের কোন লক্ষণ দেখা যা”েছ না।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়: রাজশাহীতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সোমবার ‘অঘোষিত’ ধর্মঘটের খানিকটা অবসান হয়েছে। যাদের কাগজপত্র ঠিকমত আছে সেসব গাড়ি রাস্তায় নামিয়েছেন শ্রমিকরা। সরেজমিনে নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী থেকে যাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন রুটে বাস ছেড়ে যা”েছ। রাজশাহী থেকে সাতক্ষীরাগামী জনি পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের কাগজপত্র সব ঠিক আছে, গাড়ি চালাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। গতকালও আমি গাড়ি চালিয়েছি। তবে দুপুরে রাজশাহী এসে গাড়ি আর ছাড়তে দেয়নি। আমার মনে হয়, যাদের কাগজ নেই, দ্রুত করে নেওয়া উচিত। কারণ আইন যেহেতু পাস হয়ে গেছে, এখন মানতেই হবে।

বরিশাল ব্যুরো জানায় : বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুট সমুহে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সাধারন যাত্রীরা চরম দূর্ভেগে পড়েছেন। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের দাবী এটা কোন ধর্মঘট নয়, নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকায় তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে জানান, জেল-জরিমানার ভয়ে শ্রমিকরা বাস চালা”েছন না। ধর্মঘটের সঙ্গে মালিকদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

মাদারীপুর : শ্রমিকদের দাবী, বিদ্যমান আইনের কারনে শ্রমিকদের দায়িত্বপালন করা সম্ভব নয়। তাই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্ম বিরতি শুরু করেছে। আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মবিরতি ও ঘর্মঘট চলবে। তবে এভাবে কোন ঘোষনা ছাড়া ধর্মঘট ডাকায় বেকায়দায় পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা।

এব্যাপারে মাদারীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, নতুন আইনটি সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের উপর এক প্রকার গলায় ফাঁসির মতো চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। এই ফাঁসির দড়ি নিয়ে কোন শ্রমিক আর পরিবহন চালাবে না। তাই দ্রুত আইনটি সংশোধন করে পুনঃবির্বেচনা করতে হবে। না হলে লাগাতার আন্দোলনে থাকবে শ্রমিকরা।

স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে : শ্রমিক ধমর্ঘটের কারণে মাগুরা-যশোর সড়কে তৃতীয় দিনের মত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ এ ধর্মঘটের ফলে এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিকল্প হিসেবে ইজিবাইক, টেম্পু ও সিএনজিতে করে যাতায়াতের ফলে যাত্রীদের দ্বিগুণ অর্থ ও অধিক সময় ব্যায় করতে হ”েছ।
জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমদাদুর রহমান জানান, সম্প্রতি সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু জনিত কারনে চালকের মৃত্যুদ-সহ মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান করায় সাধারণ শ্রমিকরা এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
নওগাঁ : জেলার বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলার ১১টি উপজেলার সকল রুটের মেইল ও লোকাল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে রাজশাহী ও বগুড়া চলাচলের সকল বাস। ফলে দূরপাল্লার রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

স্টাফ রিপোর্টার,পাবনা থেকে : শ্রমিকদের একপক্ষ পরিবহণ পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইছেন, আর এক পক্ষ পরিবহণ চালানোর পক্ষে রয়েছেন। সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হ”েছ। যে কোচগুলো রাজধানী এবং বাস অভ্যন্তরীণ রুটে যেতে চাইছে এদের সিডিউল ঠিক থাকছেন। অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়েছেন যাত্রীরা ।