ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাটের মহা ধুমধামে চলছে আমন ধান কাটা ও মাড়াই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৫৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জয়পুরহাট, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ধুমধামে রোপা আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। ইতোমধ্যে জেলায় শতকরা ৪৫ ভাগ ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বাসস’কে জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলার সর্বত্র এখন কৃষকরা আমন ধান কাটা মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে আমন ধান লাগানোর পরে তেমন কাজ থাকতো না কৃষক ও মজুরদের হাতে ফলে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজের অভাবে মঙ্গা হিসেবে দেখা দিতো জয়পুরহাটের মানুষের নিকট। চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হতো দৈনন্দিন খরচ চালাতে। বর্তমান সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর ফলশ্রুতিতে উদ্ভাবন করা হয় ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ বিনা-৭, জিরা শাইল, গুটিস্বর্ণা ও কাটারী ভোগ জাতের আমন ধান। এছাড়াও স্থানীয় মামুন ও রনজিত, পটল পাইরী, চয়ন জাতের ধান স্বল্প সময়ে (৯০ দিন) অল্প খরচে কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করে। সে কারণে সরকার উত্তরাঞ্চল থেকে চিরতরে মঙ্গা দূর করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা মূলক কর্মসূচীর আওতায় প্রায় বছর ব্যাপী ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, হত দরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী হিসেবে ১০ টাকা কেজি চাল ও ওএমএস সহ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে। ফলে জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ মঙ্গাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ ও বিনা-৭ জাতের আমন ধান আগাম জাত হওয়ায় স্বল্প সময়ে এ ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র আরো জানায়, নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৯-২০২০ রোপা আমন চাষ মৌসুমে ৭৩ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ৬৭ হাজার ৪৮০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ৫ হাজার ১০০ হেক্টর ও স্থানিয় জাতের রয়েছে ৫৮০ হেক্টর। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন । হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন চাল। জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় রোপা আমন চাষ সফল করতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি বিএডিসি (বীজ) থেকে উন্নত মানের ধানবীজ সরবরাহ করা হয় কৃষকদের মাঝে। আলু চাষের জন্য এ জেলার কৃষকরা বেশিরভাগ জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে থাকেন।
কালাই উপজেলার সরাইল গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম এ প্রতিনিধিকে বলেন, এবার ৯ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বিনা-৭ ধান চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন, একই গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম এবার ৬ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে বিঘা প্রতি ১৭/১৮ মণ ধান পেয়ে খুশি বলে জানান। নতুন ধান বাজারে আমদানি শুরু হয়েছে। ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় শতকরা ৪৫ ভাগ ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় এবার রোপা আমন চাষে জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিস নিবিড়ভাবে মনিটরিং করে। জেলায় এবার বীজ ও সারের কোন সঙ্কট ছিল না তবে রোপা আমনের চারা লাগানোর সময় আকাশের বৃষ্টিপাত কম থাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ দিতে হয়। এতে ফলনের কোন সমস্যা হয়নি। গতবারের মতো এবারও বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ বলে বাসস’ কে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্র নাথ রায় । উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ রোপা আমন চাষ মৌসুমে জেলায় ৭২ হাজার ৯শ ৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছিল। এতে চাল উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। যা জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জয়পুরহাটের মহা ধুমধামে চলছে আমন ধান কাটা ও মাড়াই

আপডেট টাইম : ০৪:৪১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জয়পুরহাট, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় ধুমধামে রোপা আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। ইতোমধ্যে জেলায় শতকরা ৪৫ ভাগ ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বাসস’কে জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলার সর্বত্র এখন কৃষকরা আমন ধান কাটা মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে আমন ধান লাগানোর পরে তেমন কাজ থাকতো না কৃষক ও মজুরদের হাতে ফলে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজের অভাবে মঙ্গা হিসেবে দেখা দিতো জয়পুরহাটের মানুষের নিকট। চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হতো দৈনন্দিন খরচ চালাতে। বর্তমান সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা দূর করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর ফলশ্রুতিতে উদ্ভাবন করা হয় ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ বিনা-৭, জিরা শাইল, গুটিস্বর্ণা ও কাটারী ভোগ জাতের আমন ধান। এছাড়াও স্থানীয় মামুন ও রনজিত, পটল পাইরী, চয়ন জাতের ধান স্বল্প সময়ে (৯০ দিন) অল্প খরচে কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করে। সে কারণে সরকার উত্তরাঞ্চল থেকে চিরতরে মঙ্গা দূর করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা মূলক কর্মসূচীর আওতায় প্রায় বছর ব্যাপী ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, হত দরিদ্রদের জন্য খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী হিসেবে ১০ টাকা কেজি চাল ও ওএমএস সহ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে। ফলে জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ মঙ্গাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ব্রি ধান-৩২, ৩৩, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৮৭ হাইব্রিড ধানীগোল্ড,স্বর্ণ-৫ ও বিনা-৭ জাতের আমন ধান আগাম জাত হওয়ায় স্বল্প সময়ে এ ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র আরো জানায়, নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৯-২০২০ রোপা আমন চাষ মৌসুমে ৭৩ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ৬৭ হাজার ৪৮০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ৫ হাজার ১০০ হেক্টর ও স্থানিয় জাতের রয়েছে ৫৮০ হেক্টর। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন । হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন চাল। জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় রোপা আমন চাষ সফল করতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি বিএডিসি (বীজ) থেকে উন্নত মানের ধানবীজ সরবরাহ করা হয় কৃষকদের মাঝে। আলু চাষের জন্য এ জেলার কৃষকরা বেশিরভাগ জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে থাকেন।
কালাই উপজেলার সরাইল গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম এ প্রতিনিধিকে বলেন, এবার ৯ বিঘা জমিতে আগাম জাতের বিনা-৭ ধান চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন, একই গ্রামের কৃষক আতিকুল ইসলাম এবার ৬ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে বিঘা প্রতি ১৭/১৮ মণ ধান পেয়ে খুশি বলে জানান। নতুন ধান বাজারে আমদানি শুরু হয়েছে। ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় শতকরা ৪৫ ভাগ ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলায় এবার রোপা আমন চাষে জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিস নিবিড়ভাবে মনিটরিং করে। জেলায় এবার বীজ ও সারের কোন সঙ্কট ছিল না তবে রোপা আমনের চারা লাগানোর সময় আকাশের বৃষ্টিপাত কম থাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ দিতে হয়। এতে ফলনের কোন সমস্যা হয়নি। গতবারের মতো এবারও বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ বলে বাসস’ কে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্র নাথ রায় । উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ রোপা আমন চাষ মৌসুমে জেলায় ৭২ হাজার ৯শ ৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছিল। এতে চাল উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। যা জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল বলে জানায় কৃষি বিভাগ।