ঢাকা ১০:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুধবার কৃষক লীগের সম্মেলন, দায়িত্ব পাচ্ছেন কারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৬১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রায় আট বছর পর হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলন। বুধবার বাজবে সম্মেলনের ডামাডোল। এ নিয়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন সাজ সাজ রব। সেই সঙ্গে তাদের কৌতূহলের পারদ বাড়ছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে যে, কোন দুজন পাচ্ছেন কৃষক লীগের শীর্ষ পদের দায়িত্ব?

জানা গেছে, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলা ১১টার দিকে যোগ দেবেন সংগঠনটির সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।  ১১টা ৫ মিনিটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন তিনি। এরপর ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ শীর্ষক ভিডি প্রদর্শনী দেখানো হবে।

পবিত্র আল কোরআনসহ ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।  পরে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলনের ব্যাজ পরাবেন কৃষক লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সাংসদ শামীমা শাহরিয়ার।

‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ শীর্ষক তিনটি গানের পর পরিবেশন করা হবে কৃষকদের গ্রামীণ নৃত্য।  পরে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব থাকবে। এরপর সভাপতির স্বাগত ভাষণের পর সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করবেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকদের।  প্রধান অতিথিরে ভাষণের পর সম্মেলনের প্রথম পর্বে অনুষ্ঠান শেষ হবে। দ্বিতীয় সেশন শুরু হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দুপুরের খাবারের বিরতির পর। এই সেশনে থাকবেন শুধু কাউন্সিলরা।

স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন লেকের পূর্বদিকের উত্তর পাশে দক্ষিণমুখী করে লম্বায় ৯০ ফুট আর প্রস্থে ৩০ ফুট মূল মঞ্চ করা হয়েছে।  এর সামনে ৯ ফুট প্রস্থ আর ৪২ ফুট দৈর্ঘ্যের আরেকটি মঞ্চ করা হচ্ছে।

মূল মঞ্চের সামনে আরো একটি মঞ্চের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কৃষক লীগের সম্মেলনের সমন্বয়ক ও সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র জানান, এখানে দুজন কৃষক, দুজন কৃষানী মডেল হিসেবে থাকবেন কৃষিপণ‌্য নিয়ে। সামনে কৃষকের উৎপাদিত সব পণ্য থাকবে। আর মডেলরা এগুলো বিক্রির মুডে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী কাঁচারি ঘরে বসে কৃষক তার উৎপাদিত পণ‌্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন কি না-তা তদারকি করছেন।  আর দর্শকরা থাকবেন ক্রেতা।  অর্থাৎ নেত্রী প্রবেশ করলেন কৃষকের কাঁচারি ঘরে।

মঞ্চের ডানপাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বামপাশে সাংবাদিকের জন্য আলাদা দুটি মঞ্চ হচ্ছে। মঞ্চের সামনে থাকবে অতিথিদের বসার জায়গা। এরপরই থাকবে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের স্থান।  সেখানে ২০ হাজার পর্যন্ত চেয়ার বসানোর জায়গা থাকবে বলে জানান কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা।

কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক রেজা  জানান, কৃষক লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যার অনুপাত প্রতি ২০ হাজারে একজন করে আমাদের কাউন্সিলর আসবে।  সেই হিসেবে ১০ হাজারের মত কাউন্সিলর হওয়ার কথা রয়েছে।  তবে ডেলিগেটের কোনো হিসেব নেই।  সবাই আসতে পারবে।

দেশে কৃষি উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয় সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। ৩ বছরের কমিটির মেয়াদ থাকলেও চলেছে প্রায় ৮ বছর। শুধু কেন্দ্রীয় কমিটি নয়, জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোও বিভিন্ন কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে। ‘কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও-এই মূলমন্ত্রে সারা দেশে কৃষকসমাজকে সংগঠিত করে কৃষক-জনতার সার্বিক উন্নয়ন সাধন করাই কৃষক লীগের মূলনীতি হলেও তা থেকে দূরে সরে গেছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংগঠনটি। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে হচ্ছে কৃষক লীগের সম্মেলন।

কৃষক লীগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষক লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১১১। এটা সংশোধন করে খসড়ায় ১৫১ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।  সহসভাপতি ১৬ জন থেকে বাড়িয়ে ২১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনজন থেকে পাঁচজন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ থেকে বাড়িয়ে ৯ জন করার প্রস্তাব রয়েছে।

এছাড়া নতুন যুক্ত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক সম্পাদক, কৃষিশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, কৃষি উপকরণ বিষয়ক সম্পাদক ও কৃষিপণ্য পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক পদ। আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০টি বিভাগীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে একটি করে সহ-সম্পাদকের পদ ছাড়াও প্রস্তাবকৃতসহ সব বিভাগীয় সম্পাদকের সঙ্গে সহ-সম্পাদক রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

জেলা-উপজেলা কমিটির আকারও বৃদ্ধির প্রস্তাব দেবে গঠনতন্ত্র উপকমিটি।  বর্তমান জেলা কমিটি ৮১ সদস্য বিশিষ্ট, যা ৯১ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব থাকছে।  উপজেলা কমিটি ৭১ জনের স্থলে ৮১ জনের প্রস্তাব রয়েছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন বা সমমর্যাদার কমিটি ৬১ থেকে বাড়িয়ে ৭১ আর ওয়ার্ড কমিটি ৫১ থেকে বাড়িয়ে ৬১ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।

এছাড়া এবার কয়েকটি সম্পাদকীয় পদের নামের সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হচ্ছে। সমবায় সম্পাদকের স্থলে কৃষি সমবায় সম্পাদক, কুটির শিল্পের স্থলে কৃষি-শিল্প ও বাণিজ্য, মৎস্য ও পশুর স্থলে মৎস ও প্রাণী, কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্থলে কৃষিবিজ্ঞান ও আইটি বিষয়ক সম্পাদক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের স্থলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্র বলছে, অন্যান্য সংগঠনের মতো দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ আছে কৃষক লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এই নেতারা প্রভাবশালী হলেও ছিটকে পড়বেন নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকে। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আর পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ এবার উঠে আসবেন কৃষক লীগের নেতৃত্বে। কৃষক লীগের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য পদপ্রত্যাশীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ ও নিজস্ব টিম দিয়ে নানা মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা আর অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। অর্থাৎ এবার কৃষক লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন তিনিই। কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন পিওর কৃষিবিদই আসতে যাচ্ছেন কৃষক লীগের নতৃন নেতৃত্বে। সেক্ষেত্রে কৃষক লীগের ভেতর থেকেই নির্বাচিত হবেন নেতৃত্ব।

কৃষক লীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের বর্তমান কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি শরীফ আশরাফ হোসেন, সহ-সভাপতি কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা, সহ-সভাপতি শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশ্বনাথ সরকার বিটু, কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট, আসাদুজ্জামান বিপ্লব, আবুল হোসেন, গাজী জসিম উদ্দিন, কাজী জসিম, আতিকুল হক আতিক।

সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ জানিয়ে কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা  বলেন, কৃষি ও কৃষক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে প্রধান্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সম্মেলন। সম্মেলনের পড়তে পড়তে কৃষি আবহ থাকবে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ স্লোগানকে সামনে রেখে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে।

‘প্রধানমন্ত্রী কৃষক লীগকে খুব ভালোবাসেন। এজন্য কৃষক লীগের সম্মেলন আগে দিয়েছেন। আমরা তার এই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।  আশা করি খুব জমকালো একটি সম্মেলন হবে।  যারা আগামীতে কৃষক লীগের নেতৃত্বে আসবেন তারা কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নের মাধ্যমে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন’, বলেছেন শীর্ষ এই দুই নেতা।

সম্মেলন নিয়ে বদিউজ্জামান বাদশা  বলেন, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের কাজ করবে কৃষক লীগ।  কৃষক লীগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখতেন, নেত্রী যেভাবে দেখতে চান; আগামীতে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা সেভাবেই পরিচালিত করবেন সংগঠনটিকে। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে আমরা কৃষক লীগের ভাবমূর্তি সেই ধারায় নিয়ে যেতে চাই।

কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশ্বনাথ সরকার বিটু  বলেন, বাংলাদেশ কৃষক লীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের যাদের দায়িত্ব দেবেন তারা সৎ, ক্লিন ইমেজের হবে। তাদের নেতৃত্বেই সারা বাংলাদেশের কৃষকদের সুসংগঠিত করবে। জাতির জনকের হাতে গড়া এই সংগঠন আমরা এমন কিছু করে দেখাব যাতে প্রধানমন্ত্রী মাথা উচু করে বলতে পারে বাংলাদেশ কৃষক লীগ এদেশের কৃষকের জন্য কাজ করে। সরকারের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

এদিকে সংগঠনের সময়মতো সম্মেলন হওয়ার দিকে গুরুত্বারোপ করে কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট বলেন, নতুন নেতৃত্ব বিকাশের জন্য এই চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।  আট বছর নয় আমরা চাই প্রতি তিন বছর পরপরই সম্মেলন হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, কৃষক লীগের কৃষিবান্ধব, সততা, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতৃত্ব বাছাই করবেন নেত্রী। এই বিষয়ে আমাদের দল জিরো টলোরেন্স নীতিতে আছেন। আপনারা জানেন যে দলের মধ্যেই আমরা শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছি। সুতরাং আগামীর নেতৃত্ব কেমন আসতে যাচ্ছে তা অনুমেয়।

বিভিন্ন কারণে অনেক সময় সম্মেলন নিয়মিত করা হয়ে ওঠে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিকূলতা থাকলেও সময়মতো সম্মেলনগুলো করা উচিত। সময়মতো সম্মেলন হলে নতুন নেতা নির্বাচিত হয়। সংগঠন গতিশীল হয়। যারা নেতা হতে চায় তারা নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করবে। এটা ঢিলা হয়ে গেলে মন খারপ হয়ে যায়। নেতা-কর্মীরা নিরুৎসাহিত হয়ে যায়। কাজে গতি কমে যায়।  সুতরাং সময়মতো সম্মেলন করা উচিত।

রাইজিংবিডি ডট কম

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বুধবার কৃষক লীগের সম্মেলন, দায়িত্ব পাচ্ছেন কারা

আপডেট টাইম : ১০:৫৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রায় আট বছর পর হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলন। বুধবার বাজবে সম্মেলনের ডামাডোল। এ নিয়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন সাজ সাজ রব। সেই সঙ্গে তাদের কৌতূহলের পারদ বাড়ছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে যে, কোন দুজন পাচ্ছেন কৃষক লীগের শীর্ষ পদের দায়িত্ব?

জানা গেছে, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলা ১১টার দিকে যোগ দেবেন সংগঠনটির সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।  ১১টা ৫ মিনিটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন তিনি। এরপর ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ শীর্ষক ভিডি প্রদর্শনী দেখানো হবে।

পবিত্র আল কোরআনসহ ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।  পরে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মেলনের ব্যাজ পরাবেন কৃষক লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সাংসদ শামীমা শাহরিয়ার।

‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ শীর্ষক তিনটি গানের পর পরিবেশন করা হবে কৃষকদের গ্রামীণ নৃত্য।  পরে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব থাকবে। এরপর সভাপতির স্বাগত ভাষণের পর সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করবেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকদের।  প্রধান অতিথিরে ভাষণের পর সম্মেলনের প্রথম পর্বে অনুষ্ঠান শেষ হবে। দ্বিতীয় সেশন শুরু হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দুপুরের খাবারের বিরতির পর। এই সেশনে থাকবেন শুধু কাউন্সিলরা।

স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন লেকের পূর্বদিকের উত্তর পাশে দক্ষিণমুখী করে লম্বায় ৯০ ফুট আর প্রস্থে ৩০ ফুট মূল মঞ্চ করা হয়েছে।  এর সামনে ৯ ফুট প্রস্থ আর ৪২ ফুট দৈর্ঘ্যের আরেকটি মঞ্চ করা হচ্ছে।

মূল মঞ্চের সামনে আরো একটি মঞ্চের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কৃষক লীগের সম্মেলনের সমন্বয়ক ও সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র জানান, এখানে দুজন কৃষক, দুজন কৃষানী মডেল হিসেবে থাকবেন কৃষিপণ‌্য নিয়ে। সামনে কৃষকের উৎপাদিত সব পণ্য থাকবে। আর মডেলরা এগুলো বিক্রির মুডে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী কাঁচারি ঘরে বসে কৃষক তার উৎপাদিত পণ‌্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন কি না-তা তদারকি করছেন।  আর দর্শকরা থাকবেন ক্রেতা।  অর্থাৎ নেত্রী প্রবেশ করলেন কৃষকের কাঁচারি ঘরে।

মঞ্চের ডানপাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বামপাশে সাংবাদিকের জন্য আলাদা দুটি মঞ্চ হচ্ছে। মঞ্চের সামনে থাকবে অতিথিদের বসার জায়গা। এরপরই থাকবে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের স্থান।  সেখানে ২০ হাজার পর্যন্ত চেয়ার বসানোর জায়গা থাকবে বলে জানান কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা।

কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক রেজা  জানান, কৃষক লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যার অনুপাত প্রতি ২০ হাজারে একজন করে আমাদের কাউন্সিলর আসবে।  সেই হিসেবে ১০ হাজারের মত কাউন্সিলর হওয়ার কথা রয়েছে।  তবে ডেলিগেটের কোনো হিসেব নেই।  সবাই আসতে পারবে।

দেশে কৃষি উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয় সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। ৩ বছরের কমিটির মেয়াদ থাকলেও চলেছে প্রায় ৮ বছর। শুধু কেন্দ্রীয় কমিটি নয়, জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোও বিভিন্ন কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে। ‘কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও-এই মূলমন্ত্রে সারা দেশে কৃষকসমাজকে সংগঠিত করে কৃষক-জনতার সার্বিক উন্নয়ন সাধন করাই কৃষক লীগের মূলনীতি হলেও তা থেকে দূরে সরে গেছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংগঠনটি। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে হচ্ছে কৃষক লীগের সম্মেলন।

কৃষক লীগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষক লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১১১। এটা সংশোধন করে খসড়ায় ১৫১ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।  সহসভাপতি ১৬ জন থেকে বাড়িয়ে ২১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনজন থেকে পাঁচজন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ থেকে বাড়িয়ে ৯ জন করার প্রস্তাব রয়েছে।

এছাড়া নতুন যুক্ত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক সম্পাদক, কৃষিশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, কৃষি উপকরণ বিষয়ক সম্পাদক ও কৃষিপণ্য পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক পদ। আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০টি বিভাগীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে একটি করে সহ-সম্পাদকের পদ ছাড়াও প্রস্তাবকৃতসহ সব বিভাগীয় সম্পাদকের সঙ্গে সহ-সম্পাদক রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

জেলা-উপজেলা কমিটির আকারও বৃদ্ধির প্রস্তাব দেবে গঠনতন্ত্র উপকমিটি।  বর্তমান জেলা কমিটি ৮১ সদস্য বিশিষ্ট, যা ৯১ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব থাকছে।  উপজেলা কমিটি ৭১ জনের স্থলে ৮১ জনের প্রস্তাব রয়েছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন বা সমমর্যাদার কমিটি ৬১ থেকে বাড়িয়ে ৭১ আর ওয়ার্ড কমিটি ৫১ থেকে বাড়িয়ে ৬১ করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।

এছাড়া এবার কয়েকটি সম্পাদকীয় পদের নামের সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হচ্ছে। সমবায় সম্পাদকের স্থলে কৃষি সমবায় সম্পাদক, কুটির শিল্পের স্থলে কৃষি-শিল্প ও বাণিজ্য, মৎস্য ও পশুর স্থলে মৎস ও প্রাণী, কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্থলে কৃষিবিজ্ঞান ও আইটি বিষয়ক সম্পাদক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের স্থলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্র বলছে, অন্যান্য সংগঠনের মতো দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ আছে কৃষক লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এই নেতারা প্রভাবশালী হলেও ছিটকে পড়বেন নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকে। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আর পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ এবার উঠে আসবেন কৃষক লীগের নেতৃত্বে। কৃষক লীগের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য পদপ্রত্যাশীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ ও নিজস্ব টিম দিয়ে নানা মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা আর অতীত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। অর্থাৎ এবার কৃষক লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন তিনিই। কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন পিওর কৃষিবিদই আসতে যাচ্ছেন কৃষক লীগের নতৃন নেতৃত্বে। সেক্ষেত্রে কৃষক লীগের ভেতর থেকেই নির্বাচিত হবেন নেতৃত্ব।

কৃষক লীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনের বর্তমান কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি শরীফ আশরাফ হোসেন, সহ-সভাপতি কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা, সহ-সভাপতি শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশ্বনাথ সরকার বিটু, কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট, আসাদুজ্জামান বিপ্লব, আবুল হোসেন, গাজী জসিম উদ্দিন, কাজী জসিম, আতিকুল হক আতিক।

সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ জানিয়ে কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা  বলেন, কৃষি ও কৃষক সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে প্রধান্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের সম্মেলন। সম্মেলনের পড়তে পড়তে কৃষি আবহ থাকবে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ স্লোগানকে সামনে রেখে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে।

‘প্রধানমন্ত্রী কৃষক লীগকে খুব ভালোবাসেন। এজন্য কৃষক লীগের সম্মেলন আগে দিয়েছেন। আমরা তার এই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।  আশা করি খুব জমকালো একটি সম্মেলন হবে।  যারা আগামীতে কৃষক লীগের নেতৃত্বে আসবেন তারা কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নের মাধ্যমে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন’, বলেছেন শীর্ষ এই দুই নেতা।

সম্মেলন নিয়ে বদিউজ্জামান বাদশা  বলেন, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের কাজ করবে কৃষক লীগ।  কৃষক লীগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখতেন, নেত্রী যেভাবে দেখতে চান; আগামীতে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা সেভাবেই পরিচালিত করবেন সংগঠনটিকে। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে আমরা কৃষক লীগের ভাবমূর্তি সেই ধারায় নিয়ে যেতে চাই।

কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশ্বনাথ সরকার বিটু  বলেন, বাংলাদেশ কৃষক লীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের যাদের দায়িত্ব দেবেন তারা সৎ, ক্লিন ইমেজের হবে। তাদের নেতৃত্বেই সারা বাংলাদেশের কৃষকদের সুসংগঠিত করবে। জাতির জনকের হাতে গড়া এই সংগঠন আমরা এমন কিছু করে দেখাব যাতে প্রধানমন্ত্রী মাথা উচু করে বলতে পারে বাংলাদেশ কৃষক লীগ এদেশের কৃষকের জন্য কাজ করে। সরকারের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

এদিকে সংগঠনের সময়মতো সম্মেলন হওয়ার দিকে গুরুত্বারোপ করে কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট বলেন, নতুন নেতৃত্ব বিকাশের জন্য এই চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।  আট বছর নয় আমরা চাই প্রতি তিন বছর পরপরই সম্মেলন হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, কৃষক লীগের কৃষিবান্ধব, সততা, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতৃত্ব বাছাই করবেন নেত্রী। এই বিষয়ে আমাদের দল জিরো টলোরেন্স নীতিতে আছেন। আপনারা জানেন যে দলের মধ্যেই আমরা শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছি। সুতরাং আগামীর নেতৃত্ব কেমন আসতে যাচ্ছে তা অনুমেয়।

বিভিন্ন কারণে অনেক সময় সম্মেলন নিয়মিত করা হয়ে ওঠে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিকূলতা থাকলেও সময়মতো সম্মেলনগুলো করা উচিত। সময়মতো সম্মেলন হলে নতুন নেতা নির্বাচিত হয়। সংগঠন গতিশীল হয়। যারা নেতা হতে চায় তারা নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করবে। এটা ঢিলা হয়ে গেলে মন খারপ হয়ে যায়। নেতা-কর্মীরা নিরুৎসাহিত হয়ে যায়। কাজে গতি কমে যায়।  সুতরাং সময়মতো সম্মেলন করা উচিত।

রাইজিংবিডি ডট কম