ক্যাসিনো কি পুলিশের নজরের বাইরে ছিল

হাওর বার্তাঃ বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্লাবে এবং ক্যাসিনোতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ জুয়া চলার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের কারো কোনো যোগসাজশ ছিল কিনা, সরকার তা তদন্ত করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা

এদিকে, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ক্যাসিনো যন্ত্রপাতি আমদানিকারক চারটি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গত এক সপ্তাহে ঢাকা অবৈধভাবে স্থাপিত ক্যাসিনোতে এবং বিভিন্ন ক্লাবে জুয়া পরিচালনার ঘটনা ধরা হয়েছে। সরকার সমর্থিত যুবলীগের দু’জন নেতা এবং শ’দুয়েক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ক্যাসিনোগুলো চলার পেছনে প্রশাসনের যোগসাজশ ছিল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই অনেকে এমন অভিযোগ তুলেছেন।

এতদিন ধরে এসব ক্যাসিনো চলছে কিভাবে, এর যন্ত্রপাতিই বা কিভাবে বাংলাদেশে এসেছে এমন অনেক প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশ বা প্রশাসন কেউ এর দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। রাজধানীতে ক্যাসিনো চলার ব্যাপারে কিছুই জানা ছিল না বলে বক্তব্য তুলে ধরছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গত বছর পুলিশের আইজির পদ থেকে অবসরে যান শহীদুল হক। তিনি বলছিলেন, তার সময়ে কখনো পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে এমন ক্যাসিনো সম্পর্কে কোনো তথ্য আসেনি। ক্লাবগুলো একেবারে জুয়ার খেলার হাউজে রূপান্তর হবে, এটা পুলিশের ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। স্থানীয় পুলিশ তো বলে যে তারা এগুলো জানত না। জুয়া খেলে জানতাম, কিন্তু ক্যাসিনো আছে, সেটা জানতাম না।এটা হচ্ছে তাদের ভাষ্য। অনেক সময় থানা পুলিশ যখন দেখে, আমি বন্ধ করতে পারি না এবং আইনও নেই সেখানে আমার যাওয়ার, তখন যদি কিছু পয়সা পাওয়া যায়, এ রকম চিন্তা অনেকে করে। এটাও হয়তো হয়েছে। এগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে দুর্নীতিবিরোধী চলমান তৎপরতার প্রথম দিনেই র? র‍্যাব ঢাকার মতিঝিল এলাকায় চারটি অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছিল। সেই ক্যাসিনোগুলো সেখানে থানা বা পুলিশ স্টেশন থেকে অল্প দূরত্বেই ছিল, এই বিষয়টি এখন উদাহরণ হিসেবে সামনে আসছে। দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলছিলেন, ঢাকায় ক্যাসিনো চলার বিষয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ কিছুই জানতো না, এমন বক্তব্য আরও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। কোনো নির্বোধও এটা বিশ্বাস করবে না যে, এটা পুলিশ বা প্রশাসনের নজরের বাইরে হয়েছে। নজরের বাইরে হলে তারা তাহলে কি করেছে? জানাটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যদি তারা জানতে না পারেন, সেটাও কিন্তু দায়িত্বে অবহেলার মধ্যে পড়ে। তাহলে তারা থানা খুলে বসে আছেন কেন? এসব প্রশ্ন তোলেন সুলতানা কামাল।

আওয়ামী লীগের ভেতরেও পুলিশ বা প্রশাসনের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।এমনকি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেছেন, অবৈধ ক্যাসিনো চলার ব্যাপারে প্রশাসনের কারো না কারো যোগসাজশ ছিল। বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসিকে বলেছেন, পুলিশের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলেই তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে এই অভিযান ক্যাসিনো বা ক্লাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কিনা, সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সারাদেশে এই অভিযান হবে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং মাদকের বিরুদ্ধে। রাঘববোয়াল বা চুনোপুঁটি কেউ ছাড় পাবে না।

কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যাদের ধরা হচ্ছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেকের যোগসাজশের তথ্য আসছে, সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে পুলিশ রাবের নজর এখনো বিভিন্ন ক্লাব এবং অবৈধ ক্যাসিনো বা জুয়া বাণিজ্যের দিকে। এসব সামাজিক অপরাধ এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের কিছু নেতা এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। পুলিশি অভিযানের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সন্দেহ ভাজন অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। সবকিছু ছাপিয়ে ক্যাসিনো ইস্যুই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দে রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর