হাওর বার্তা ডেস্কঃ কানাডায় বাংলাদেশের শরণার্থীদের সংকট নিয়ে ‘বাঁচাও রোহিঙ্গা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, তথ্য চিত্র প্রকাশ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশী ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর সমন্বয়ে কানাডা ন্যাশনাল এ্যাথনিক মিডিয়া, প্রেস কাউন্সিল, বেন-ক্যান যুব সংস্থা এবং আইইবি কানাডা ওভার সিয়েজ চাপটারের উদ্যোগে কানাডার স্ট্রিট টরন্টোর মেট্রো হলে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় ১৯ আগস্ট বিকেল সাড়ে তিনটায় আলোচনা সভা শেষে ফিতাকেটে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আব্দুল গাফফারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাউন্টেন্ট রুকনুজ্জামান, সঙ্গীত শিল্পী জাহিদ হোসেন, সাহিত্যিক অনুরুদ্ধ আলম, ফটো গ্রাফার নাদিম ইকবাল, ভিডিও বার্তায় যোগ দেন প্রধান আলোচক ওয়াশিম আহমেদ ব্যারিস্টার ও সলিসিটর, সি-প্রতিষ্ঠাতা ও অংশীদার এবং ওডাবু-এস আইন।
আরো বক্তব্য রাখেন BAN CAN এর সভাপতি শরিফুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-সোহেল শাহরিয়ার রানা, বাবুল চৌধুরী, শাকিল আহমেদ ও সানি মীর অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মম কাজী।
সভায় বক্তারা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে সহায়তা করতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে কানাডা। এই বিষয়ে যত রকম সহযোগিতা প্রয়োজন তাই করবে কানাডা সরকার বলে জানান বক্তারা।
তারা আরো বলেন, এই ছবির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে রোহিঙ্গাদের দুঃখ দুর্দশার। এখনি যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না করা হয় তবে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হবে পুরো বিশ্বকে।
সভায় ফোজিত শেখ বাবু বলেন, আমি শুরুতেই ধন্যবাদ জানাই আমার দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। যিনি মমতাময়ী মায়ের মতো নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি শুধু রোহিঙ্গাদেরই আশ্রয় দেননি, তিনি আশ্রয় দিয়েছে পুরো বিশ্ব বিবেক কে। বর্তমানে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে সম্প্রীতির, শান্তির দেশ এটাই তার প্রমাণ।
তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত গরীব অসহায় একজন মানুষ। একজন রিকশাওয়ালার ছেলে। রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা আমার হৃদয়ে যখন জেগে উঠল তখন ক্যামেরা নিয়ে ছুটে গেলাম সেই কক্সবাজার উখিয়া, রিফুজি ক্যাম্পে। নিজের ক্যামেরায় তাদের অসংখ্য ছবি তুললাম এবং আমাদের বাংলাদেশের কিছু সাংবাদিক এর থেকে কিছু ছবি সংগ্রহ করে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি। আজকে আমার ছবির মাধ্যমেই সব প্রমাণিত, তারপরও দু-চার কথা বলতে হয়-আজকে রোহিঙ্গারা যেমন দুঃখ-দুর্দশা কষ্ট ভোগ করছে আশির দশকে আমিও এই ধরনের দুঃখ-দুর্দশার কষ্ট ভোগ করেছি।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে পানিতে নিমজ্জিত একটি বস্তি এলাকায় রোহিঙ্গাদের মতো দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করে বড় হয়েছি। সুতরাং আমি তাদের কষ্ট বুঝি। আর আমাদের এই দুঃখ-দুর্দশার মর্ম বুঝে ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লড়াকু সৈনিক আমাদের স্থানীয় এমপি গাজী গোলাম দস্তগীরের সহযোগিতায় আমরা আমাদের মানবাধিকার ফিরে পায় এবং বর্তমানে আমাদের এলাকার লোকজন খুব সুন্দর ভাবে জীবন-যাপন করছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই এলাকা নিয়ে তসলিম শাকুর সাহেব পিএইচডি করতে যে বইটি লিখেছেন সেটিই তার প্রমাণ। তাই তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আরো ধন্যবাদ যে তিনি লন্ডনে এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীয় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সাদিকুর রহমান স্যারকেও ধন্যবাদ তিনি কানাডায় আমার আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছেন। গফফার সাহেবসহ অন্য সবাইকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, তবে আমি যখন দেশ-বিদেশে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বের হয়েছি তখনই স্থানীয় কিছু লোক যারা বাংলাদেশের মঙ্গল চায়না এবং রোহিঙ্গাদের ও মঙ্গল চায়না তারা আমার ফটো নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ দাঁড় করিয়েছে। তবে এতে আমি একটুও থমকে যায়নি। চাঁদের যেমন কলঙ্ক আছে আমারও না হয় একটু কলঙ্ক থাকলো। আমি এসেছি বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার জন্য, আমি এসেছি পিতা-মাতাহীন শিশুদের নিজ জন্মভূমিতে ফিরিয়ে দিতে, আমি এসেছি গর্ভবতী শতশত অসহায় মা-বোনকে তাদের ভিটে-মাটি ফিরিয়ে দিতে।
আমি এসেছি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে আপনাদের শিক্ষিত বিবেক কে জাগ্রত করতে। পরিশেষে আমি এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে একটাই দাবি জানায়, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা সহকারে জাতিসংঘের সহযোগিতায় কঠোর হস্তক্ষেপ এর মাধ্যমে পূনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হোক। ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ যে আশ্রয় দিয়েছে এর অর্থ এই নয় যে তাদেরকে সারা জীবন রাখতে হবে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে পুনর্বাসিত করা হোক। একটি জাতিগোষ্ঠীর মাঝে ক্ষুদ্র কোন জাতিসত্তা বসবাস করলে সেই জাতির প্রতি মান্বঅধিকার লুঙ্গিত হলে। সেখান থেকে জন্ম নেয় বিভিন্ন উশৃঙ্খল গ্রুপ। তাই এই রোহিঙ্গারা শুধু বাংলাদেশের হুমকি নয়। হুমকি সারা বিশ্বের জন্য। আর এই ব্যাপারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একটি করে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করার ইচ্ছে আছে সকলের সহযোগিতা পেলে।
এছাড়াও আমাকে ফটোগ্রাফি এবং অন্যান্য কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন যারা, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন জয়, দৈনিক দেশ রুপান্তর পত্রিকার ফটোসাংবাদিক হারুনুর রশিদ, ডেইলি নিউ এজ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মোঃ সৌরভ, বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মোমিন, দৈনিক বণিক বার্তা পত্রিকার ফটো সাংবাদিক ফজলে এলাহী ওমর, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ফটো সাংবাদিক রেহানা আক্তার, দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার ফটো সাংবাদিক বাদল দাস, স্মৃতি কালার স্টুডিও’র ভিডিও গ্রাফার আবুল হোসেন, স্মৃতি কালার স্টুডিও’র ভিডিও গ্রাফার মো: গোলাম কিবরিয়া সাইমন, অনুবাদক ওমর ফারুক জয়, অনুবাদক মোহাম্মদ তারেক, লেখক সওকত হোসেন জনী, লেখক মোহাম্মদ ফারুক হোসাইন এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার শোহাগ হাসান।