হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে ১ দশমিক ৬৭ লাখ টন বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। তারপরও বন্ড সুবিধা নিয়ে লবণ আমদানি করা হচ্ছে। এতে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না লবণ চাষিরা। বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা নিয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করলেও বাস্তবে তাদের বন্ডেড ওয়্যার হাউস নেই। এসব লবণ ওয়্যার হাউসে না রেখে শিল্প কারখানায় ব্যবহার না করে ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত করছে। এতে যেমন দেশে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হচ্ছে না, তেমনি লবণ চাষিরাও নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পক্ষ থেকেই এসেছে অদ্ভুত তথ্য। অভিযোগ রয়েছে একটি পক্ষকে অনৈতিক সুবিধা দিতেই এমন সুবিধা রেখেছে অদৃশ্য শক্তি।
আর তাই বন্ড ওয়্যার হাউস সুবিধায় লবণ আমদানি বন্ধ ও লবণ মিলের বন্ড নিবন্ধন বাতিল চায় বিসিক। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর এক চিঠিতে বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান, এনডিসি এ অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান সাংবাদিককে বলেন, ‘আমাদের দেশীয় শিল্পকে আগে বাঁচাতে হবে। লবণ উৎপাদনের সঙ্গে অনেক পরিবার জড়িত। বন্ডের লবণ বাজারে আসার ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লবণ কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের চাষিরা লবণ চাষের জন্য ব্যাংক ঋণ পায় না। তারা উচ্চ সুদে দাদন নিয়ে লবণ চাষ করে। এরপরে তারা যদি লবণের ন্যায্যমূল্য না পায় তাহলে তারা পথে বসবে।’
এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেওয়া বিসিকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন লবণ উৎপাদন ও আয়োডিনযুক্ত করণের সার্বিক বিষয়গুলো মনিটরিং করে। বিসিকের আওতায় কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ও চট্টগ্রামের বাশখালীতে লবণ চাষে সার্বিক সহায়তা দেয়া হয়। পাশাপাশি বিসিকের সিআইডিডি প্রকল্পের আওতায় লবণ চাষের এলাকাসমূহ ৮টি অঞ্চলে ভাগ করে আয়োডিন মিশ্রণ কার্যক্রম মনিটরিং করা হয়।
জাতীয় লবণনীতি ২০১৬ অনুযায়ী, দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লবণের চাহিদা ১৬.৫৭ লাখ মেট্রিক টন ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লবণ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ্যাৎ ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া, গত বছরেও ১ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত ছিল।
চিঠিতে আরো বলা হয়, লবণ উৎপাদন ও আয়োডিন যুক্তকরণ কার্যক্রম বিসিকের আওতাভূক্ত হলেও লবণ আমদানির বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কারখানার জন্য সোডিয়াম ক্লোরাইড লবণ আমদানির বিষয়ে বিসিকের মতামত নেওয়া হলেও অন্যান্য লবণ আমদানির বিষয়ে বিসিকের মতামত নেওয়া হয় না। অন্যান্য লবণের মধ্যে গ্লুবার সল্ট, সোডিয়াম সালফেট, বিট লবণ, কসটিক সোডার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত লবণ আমদানির ঘোষণা দিয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে থাকে। এ ছাড়া, বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা নিয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করা হলেও বাস্তবে তাদের বন্ডেড ওয়্যার হাউস নেই। এসব লবণ ওয়্যার হাউসে না রেখে শিল্প কারখানায় ব্যবহার না করে ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত করছে। ফলে দেশে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হচ্ছে না এবং লবণ চাষিরাও নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইসলামপুর মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ বলেন, ‘যে সব প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় লবণ আমদানি করছে তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা দরকার। দেশে যে লবণ উৎপাদন হচ্ছে তা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত। গত বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত ছিল। আমদানির কারণে লবণ কারখানাগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে চাষিদের লবণ।