হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের নীল দলের ভিসি প্যানেল চূড়ান্ত হলেও এতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে তিন জনের উপাচার্য প্যানেল চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সিনেটের চেয়ারম্যান ও ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল এই নির্বাচন বর্জন করে। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় নীল দলের প্যানেল। এই প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাতে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের নীল দল ভিসি প্যানেল চূড়ান্ত করেছিল। নীল দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে ভিসি প্যানেল নিয়ে মতানৈক্য হলে ভোটাভুটি হয়েছিল। এতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ৪২ ভোট, উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ৩৬ ভোট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এস এম মাকসুদ কামাল ৩০ ভোট পেয়ে প্যানেলে মনোনীত হয়েছিলেন।
এছাড়া উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ ২৮ ভোট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ২০ ভোট পেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ভোট বেশি পাওয়ায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের নাম চূড়ান্ত সিনেট তালিকায় সবার উপরে থাকার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়ম লংঘন করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে সিনেটের চূড়ান্ত তালিকায় প্রথমে রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থক নীল দলের শিক্ষকদের একাংশ এ বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, দলীয় ফোরামে সর্বাধিক ভোট পাওয়া মুহাম্মদ সামাদের নাম তালিকায় সবার আগে থাকার কথা থাকলেও তা লংঘন করে উপাচার্য আখতারুজ্জামানের নাম দেয়া হয়েছে। সিনেট অধিবেশনে এর প্রতিবাদ জানানো হলে সভাপতিত্ব করা আখতারুজ্জামান তা পাশ কাটিয়ে অধিবেশন শেষ করে দিয়েছেন।
নামের ক্রম পরিবর্তনের বিষয়ে রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, নীল দলের যৌথ সভায় আমরা মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ভোট করে একটি প্যানেল ঠিক করেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে তার নামটি আগে, তারপর মধ্যম, তারপর তৃতীয়জন। আজকে যখন সিনেটের ফ্লোরে এই প্যানেলের নাম প্রস্তাব করা হয় তখন আমরা দেখলাম অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের নামটি প্রথমে এসেছে, যিনি ওই যৌথ সভায় ৩৬ ভোট পেয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় স্থানে রাখা হয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের নাম। কিন্তু অধ্যাপক সামাদ সর্বোচ্চ ৪২ ভোট পেয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, তখন এটাকে সমর্থনও করলেন আমাদের রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি বাহালুল মজনুন চুন্নু। এই সময় আমাদের মাইক্রোফোন অন করেছিলেন আমাদের শিক্ষক ক্যাটাগরি থেকে সবচেয়ে প্রবীণতম শিক্ষক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন। তিনি বলেন, মাননীয় উপাচার্য আমাদের একটি কথা আছে, যেটা ক্রমানুসারে হয়নি। এটা তিনি একবার নয় কয়েকবার বলেছিলেন, কিন্তু মাননীয় উপাচার্য সেই কথা শোনেননি।
এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সামাদও এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলে তাকে থামিয়ে দেয়া হয় অভিযোগ করে সাদেকা হালিম বলেন, উনি বললেন, এটা তো একটা অধিবেশন এখানে আমরা সবাই কথা বলতে পারি। এটা গণতান্ত্রিক চর্চার একটা জায়গা, এখানে আপনি সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেন।
তখন উনি (উপাচার্য) বলেন, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হোক। জাতীয় সংগীত যখন বাজানো শুরু হল তখন সকল সিনেটর জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এভাবেই অধিবেশনের সমাপ্তি হল।