নির্বাচনের দিনক্ষণের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৮ ডিসেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগেরই এক ডজন প্রার্থী মাঠে রয়েছে। দেশের বাইরে প্রার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। উপ-নির্বাচন নিয়ে পোস্টারিং হচ্ছে, কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলছেন, আবার কারও সমর্থকরা মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে লাইমলাইটে আনার চেষ্টা করছেন। মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনটি রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে।
এ পর্যন্ত এই আসনে শুধু আওয়ামী লীগেরই সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা এখন এক ডজন। এর বাইরে আঞ্জুমানে আল ইসলাহর এক এবং স্বতন্ত্র একজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আবার জাতীয় পার্টিও আসনটি চাইতে পারে। ফলে এই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিপাকে পড়তে পারে দলের হাইকমান্ড। এমনকি এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে চলমান বিভক্তি আরও বাড়তে পারে।
জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুর রহমান, প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও জেলা সভাপতি সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের নেতৃত্বাধীন তিনটি ধারায় বিভক্ত এখানকার আওয়ামী লীগ। জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেও এর প্রভাব রয়েছে । ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীর একাংশ প্রয়াত মন্ত্রীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিনকে সমর্থন জানিয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর শহরের দর্জির মহলস্থ মন্ত্রীর বাড়িতে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের এক যৌথ বর্ধিত সভায় এই সমর্থন জানানো হয়। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জেলা পরিষদের প্রশাসক সাবেক হুইপ আজিজুর রহমান, জেলা সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদসহ তাদের কর্মী-সমর্থকরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন না। এই ৩ জনের মধ্যে সাবেক হুইপ আজিজুর রহমান ও জেলা সম্পাদক নেছার আহমদ প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন।
আবার সৈয়দ মহসিন আলীর বলয়ের জনতা ব্যাংকের পরিচালক ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) সৈয়দ বজলুল করিম বিপিএম, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ ও প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালিক তরফদার শোয়েব গণমাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক ছাত্রনেতা শোয়েব সৈয়দ মহসিন আলীর অনুসারী দাবি করে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন।
এদিকে নন রেসিডেন্স কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী, রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মিসবাউদ্দোজা ভেলাইর সমর্থকরা এবার রাজনগর থেকে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে পৃথক শোডাউন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পোস্টারিংয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ রহিম শহীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি ফজলুর রহমানের সমর্থকরা নানা মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জামান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত গিয়াস উদ্দিন মনি সরকারে থাকা এ দলটির এমপি হলে সহজে মন্ত্রী হবেন হাট-বাজারে এমন আলোচনাও চলছে।
আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ প্রার্থী তালিকা আরও দীর্ঘ করছে জাতীয় পার্টি। মহাজোটের শরিক এই দল আসনটি চাইতে পারে এমন আভাস দিলেন দলের জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ এম মাহবুবুল আলম শামীম অ্যাডভোকেট। তিনি বলেন, আমরা মহাজোটের শরিক দল। এই জেলায় আমাদের কোনো এমপি নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে একটি আসনে আমাদের ছাড় দিলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আমরা বিজয়ী হতে পারিনি। এখন এই আসনটি আমরা চাইব।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ প্রার্থী তালিকা নিয়ে জেলা সভাপতি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি বলেন, গঠনতন্ত্র ও জোটের ঘোষনাপত্র অনুযায়ী দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা বোর্ডের সভাপতি হিসেবে এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তিনি দেশ, দল ও জোটের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবেন, এখানে আবেগের কোনো স্থান নেই। এছাড়া সময় সময় কেন্দ্র যে নির্দেশনা দেবে সেটা পালন করা আমাদের দায়িত্ব। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সৈয়দা সায়রা মহসিনকে সমর্থনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
মহাজোটের শরিক জাসদ (ইনু) জেলা সভাপতি আবদুল হক বলেন, আমাদের দৃষ্টি এখন ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিকে। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে এখানে উপনির্বাচনে পেশাদার রাজনৈতিক কোনো প্রার্থী দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেই ভাবতে হবে।