হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমার মেয়ের মুখটি এখনো আমার সামনে ভেসে উঠছে। জানি না, এই বেদনা থেকে আমি কোনদিন মুক্ত হতে পারব কিনা। আমি যখন আমার মেয়ের বয়সী অন্য শিশুদের খেলতে দেখি, তখন আমার মন ভেঙ্গে যায়।”
কথাগুলো বলছিলেন আট বছর বয়সী এক কাশ্মীরী মেয়ের মা, যার মেয়েকে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কাঠুয়া শহরের কাছে জঙ্গলে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। মেয়েটি নিখোঁজ হয় ২০১৮ এর নববের্ষের সময়। নিখোঁজের তিন সপ্তাহ পর তার ক্ষতবিক্ষত মৃত দেহ পাওয়া যায় একটি জঙ্গলে।
তদন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেয়েটিকে প্রথমে কয়েকদিন একটি মন্দিরে বন্দী করে রাখা হয়। এ সময় তাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অচেতন রাখা হয় কয়েকদিন।
প্রতিবেদনটিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, মেয়েটিকে দিনের পর দিন উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়েছে। তারপর এক সময় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এই শিশুটিকে হত্যা ধর্ষণ মামলায় যে সাতজন হিন্দু পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, চারজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন বালক রয়েছেন। আজ অভিযুক্ত সাত জনের ছয়জনকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে।
ঘটনার শিকার আট বছরের মুসলিম শিশুটি গুজ্জার নামের একটি যাযাবর উপজাতির মেয়ে। ঘটনায় অভিযুক্ত হিন্দুদের সঙ্গে যাযাবর মুসলিম উপজাতির জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তদন্তকারীরা বলেছেন, গুজ্জার সম্প্রদায়কে ভয় দেখানোর জন্যই আট বছরের মেয়েটিকে টার্গেট করেছিল অভিযুক্তরা।
সাংবাদকর্মীরা যখন মেয়েটির মায়ের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তিনি তার বড় মেয়ে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এক পাহাড়ের উপর ছিলেন। তাদের চারপাশে তাদের গবাদি পশুগুলো চরে খাচ্ছিল।
১৫ বছর বয়সী তার বড় মেয়েটি বলছিল, সে এবং তার বয়সী অন্যান্য মেয়েরা এখন সব সময় হিন্দুদের ভয়ে থাকে। ঘর থেকে একাকী বের হয় না। কখনো বের হলে বড় কারো সঙ্গে বের হয়।
ঘটনার শিকার শিশুটির মা দুজন আসামীকে সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই দুজন হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সানজি রাম এবং পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়া। এই দুজনকেই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
কাঠুয়ায় ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা ভারতের সবচেয়ে আলোচিত একটি মামলা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতে এক নতুন আইন করা হয় যাতে বারো বছরের কম বয়সী শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের সাজার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কিন্তু এত আইন কানুন সত্ত্বেও শিশুটির মা-বাবা জানিয়েছেন, তারা কাঠুয়ায় নিরাপদ নন, যেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা হিন্দু।