চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে খরচের তুলনায় কম দামে ধান বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকের। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
জেলার কৃষকরা বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও আবাদ খরচ তুলতে পারছেন না কৃষকরা। বাজারে এক মণপ্রতি ধান বিক্রিতে ১২০ টাকা করে লোকসান গুনছেন তারা। এজন্য অবিলম্বে ন্যায্য দামে ধান কেনার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
চিলারং গ্রামের কৃষক রমজান আলী জানান, ধান আবাদ করে লাভ হয় না। বাজারে যে দরে ধান বিক্রি হচ্ছে তাতে আবাদ খরচও ওঠে না। একই গ্রামের কৃষক ওয়াহেদ জানান, তিনি এবার বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছিলেন। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম নেই। হাটে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। এ দামে ধান বিক্রি করে আবাদ খরচ উঠছে না। দুই মণ ধান বিক্রি করে এক জোড়া ইলিশ মাছ কেনা যায় না।
রায়পুর গ্রামের চাষি সাদেক হোসেন জানান, একদোন (২৪ শতাংশ) জমিতে বোরো ধান আবাদে ৪০০ টাকার বীজ, জমি চাষে ৬০০, চারা তোলা ও রোপণ করতে ৬০০, সেচ ১১০০, দুবার নিড়ানিতে ৮০০, ওষুধ ও স্প্রে ৫০০, সার ২১০০, কাটা-মাড়াই ১৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। একদোন জমিতে ১২ মণ ধান হয়। ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ দামে কৃষি উপকরণ ও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে বোরো চাষে খরচ বেড়েছে। প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে সাড়ে ১৬ টাকা খরচ হয়। বাজারে প্রতিকেজি ধান সাড়ে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে কেজিপ্রতি তিন টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
সালন্দর এলাকার কৃষক জবেদ আলী জানান, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব দাবি করলেও সারসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও কৃষকদের ফসলের দাম কমিয়ে কৃষকদের লোকসানের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হাটে ধান বিক্রি করতে আসা দেবীপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেন জানান, হাটে ফরিয়া পাইকাররা ধান কিনছে। ফলে বাজার এখন ফড়িয়াদের দখলে রয়েছে। তারাই ধানের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ন্যায্য দামে ধান কেনার দাবি তুলেছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা চালকল মালিকরা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান রাজু জানান, সরকার ২২ টাকা দরে ধান এবং ৩২ টাকা দরে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনে মজুদে নেমে পড়েছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি কর্মকর্তা আরশেদ আলী খান জানান, এবার এ অঞ্চলে বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু হলে বাজারে ধানের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাবে।