‘মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনারে বিএনপি’র না আসার সিদ্ধান্ত কি দলটির নেতৃত্ব সংকটের কারণে, বিএনপি কি নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে ?’
রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে লন্ডনের ইম্প্রেশন ভেন্যুতে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এক ডিনার পরবর্তী মতবিনিময়ে এমনই প্রশ্ন তুলেছেন সেমিনারে যোগ দিতে আসা আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট তারানা হালিম এমপি।
তারা বলেন, ‘যদি তাই না হবে তাহলে দুইমাস আগে সেমিনারের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে হঠাৎ করে কেনই বা তারা এতে না আসার সিদ্ধান্ত নিলেন।’
মতবিনিময়ে প্রতিনিধি দলের অন্য দুই সদস্য ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, সহ সভাপতি জালাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারোজ্জামান চৌধুরী, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব ও যুবলীগ যুগ্ম সম্পাদক জামাল খান প্রমুখ।
বিএনপি’র অনুপস্থিতি লর্ড এরিক এভিবারি আহুত ‘বাংলাদেশ: ইলেকশন, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড দ্যা রোল অব ল’ শীর্ষক সেমিনারের গুরুত্ব হ্রাস করবে কি না ? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, বিএনপি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অফিসিয়াল কোন বিরোধী দল নয়। সেমিনারে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিও যোগ দিচ্ছেন। সুতরাং পার্লামেন্টের বাইরের একটি দল কোন সেমিনারে না আসলে সেই সেমিনারের গুরুত্ব কমে যাবে এমনটি আমরা মনে করি না।
এইচ টি ইমাম বলেন, ব্রিটেনের প্রবীণ রাজনীতিক লর্ড এভিবারি প্রতিবছরই বাংলাদেশ নিয়ে এ ধরনের সেমিনারের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। এই সব সেমিনারে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হতো। কিন্তু আমরা বলেছি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি নয়। সুতরাং ব্রিটিশ এমপিদের উপস্থিতিতে বিরোধী দলের সাথে কথা বলতে হলে পার্লামেন্টের অফিসিয়াল বিরোধী দলের সামনেই আমরা তা বলতে চাই। আমাদের এই যুক্তি মেনে নিয়েই বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে এবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই জায়গায় পার্লামেন্টের বাইরের একটি দল সেমিনারে আসলো কি না তা আমাদের কাছে বিবেচ্য নয়।
এইচ টি ইমাম বলেন, আমরা তো তথ্য প্রমাণ হাতে নিয়ে এধরনের সেমিনারে বিএনপি’র সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলি। তথ্য প্রমাণ সমৃদ্ধ আমাদের এই কথার জবাব বিএনপি’র কাছে নেই, এ কারনেই হয়তো তারা সেমিনারে আসছে না।
সম্প্রতি দেশে দুই বিদেশি হত্যা ও আইএস এর অস্তিত্ব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি তদন্তনাধীন। সুতরাং বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি এইসব পরিকল্পিত কর্মকাণ্ড দেশকে অস্থিতিশীল করার একটি ষড়যন্ত্র।
পশ্চিমা কোন কোন দেশের বাংলাদেশ সম্পর্কে সতর্কতার বিষয়ে তাঁর মন্তব্য জানতে চাইলে এইচ টি ইমাম বলেন, ব্রিটেনের মত একটি দেশে প্রকাশ্যে আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির উপর হামলা হয়, এই ঘটনার কারণে আমরা তো সতর্কতা জারি করি না !
আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটে, কিন্তু কোন দেশের বিরুদ্ধে কখনও কেউ সতকর্তা জারি করতে আমরা শুনিনি। কোন একটি গোষ্ঠীর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বর্তমানে স্থিতিশীল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতেই পরিকল্পিতভাবে এটি করা হচ্ছে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর উপর হামলার বিষয়টি মঙ্গলবারের সেমিনার ও ব্রিটিশ সরকারের কাছে তোলা হবে বলেও এ সময় সাংবাদিকদের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
অপরদিকে বিএনপি’র সেমিনারে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বিএনপি সেমিনারের উদ্যোক্তাদের জানিয়েছে তাদের শীর্ষ নেতারা কেউ কারাগারে কেউ পুলিশি তাড়া খেয়ে আত্মগোপনে। এমতাবস্থায় দলটি সেমিনারে প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে না। কিন্তু আমরা জানি বিএনপির কোন কোন শীর্ষ নেতা এই মুহূর্তে লন্ডন কিংবা ইউরোপীয় অন্যান্য দেশে অবস্থান করছেন। এছাড়া কেউ কেউ আমরিকাতেও আছেন। মির্জা ফখরুলসহ অন্যান্যরা ঢাকাতেও প্রায় প্রতিদিনই প্রেসের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। এরপরও দলটি যখন বলে, সেমিনারে কোন প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে না, তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে তবে কি এক সময়ের প্রধান বিরোধী দল এখন নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে।
তারানা হালিম বলেন, আসলে বিগত সেমিনারগুলোতে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ ও সহিংস রাজনীতি পরিহার করার যে প্রতিশ্রুতি বা এগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক নেই বলে যে কথা তারা বলে গিয়েছিলেন, সেটির কোনটিই পালন না করায় এবারের সেমিনারে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন, বিব্রত হবেন এমন আশঙ্কা থেকেই তারা আসছেন না।
তারানা হালিম বলেন, আন্দোলনের নামে ১০৭ জন মানুষ ও ১৮শ’ যানবাহন পোড়ানোর তথ্য প্রমাণ যখন আমরা সেমিনারে উত্থাপন করবো, তখন ব্রিটিশ এমপি ও মানবাধিকার কর্মীদের সামনে এর দায় এড়ানোর কোন সুযোগই তো নেই বিএনপি’র সামনে। এক্ষেত্রে সেমিনারে অনুপস্থিত থাকাকেই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছেন তারা।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের (পিএইচআরজি) ভাইস চেয়ার, প্রবীণ রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার নেতা লর্ড এরিক এভিবারির উদ্যোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আয়োজিত বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনারে বিএনপি’র না আসার খবর প্রকাশের দিনই সেমিনারে যোগ দিতে এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল লন্ডনে এসে পৌঁছে।
এর আগে ‘বাংলাদেশ: ইলেকশন, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড দ্য রোল অব ল’ শীর্ষক এই সেমিনারের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেও তাতে অংশ না নেওয়ার কথা জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।
লর্ড এভিবারির মুখপাত্র সুজিত সেনকে গত সপ্তাহে এক ইমেল বার্তায় সাবিহ উদ্দিন জানান, দলের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কেউ কারাগারে, কেউ বা পুলিশি হয়রানির শিকার। এ অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে সিনিয়র কোনো নেতাকে সেমিনারে পাঠানো যাচ্ছে না।
তবে সূত্র জানায় বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই এই সেমিনারে অনুপস্থিত থাকছে বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া, আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস ও সর্বশেষ দুই বিদেশি হত্যায় বিএনপির জড়িত থাকার গোয়েন্দা সন্দেহের মতো বিষয়গুলো সেমিনারে উঠবে- এই আশঙ্কায়ই সেমিনারে বিএনপি যোগ দিচ্ছে না বলে সূত্রের দাবি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, দল ও আন্দোলনের ভবিষ্যত রূপরেখা প্রণয়নে দলীয় চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান একান্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই সময়ে সেমিনারের অজুহাতে দলের নেতারা লন্ডনে এসে ভিড় জমাক তারেক রহমান তা চান না।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসের কমিটি রুম-জি তে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ: ইলেকশন, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড দ্য রোল অব ল’ শীর্ষক এই সেমিনার।
এতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ার লর্ড এরিক এভিবারি ও বাংলাদেশ বিষয়ক অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ার আন মেইন এমপি।
বৃটেনের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী এবং যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ লর্ড কার্লাইল, লেবার দলীয় এমপি জিম ফিটজ প্যাট্রিক, বব ব্লাকবার্ন এমপি ও অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আব্বাস ফয়েজ প্রমুখ সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন।