হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের খ্যাতিমান প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার এর সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তর এর সাথে তার সাক্ষাৎকার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিভ্রান্তি ভাইরাল হয়েছে, সে প্রসঙ্গে বলতে চাই- ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে অতীতেও। মন্ত্রী হওয়ার আগেও যে তার বহু অর্জন। ১৯৮৮ সালে বিজয় বাংলা কিবোর্ড প্রকাশিত করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি তিনি। তথ্যপ্রযুক্তি জগতে আগে থেকেই আলাদা একটা জায়গা ছিল মোস্তাফা জব্বারের।
চলতি বছরের এপ্রিলে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডাব্লিউএসআইএস) সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন মোস্তাফা জব্বার। বর্তমানের এই এতো এতো সাফল্যের পেছনের গল্পটা কিন্তু সহজ নয়। এবার আলোচনাটাও শুরু হয়েছে গণমাধ্যমে সেই গল্পের ভুল উপস্থাপনা নিয়ে। সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় মোস্তাফা জব্বারের একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছে। সেখানে মন্ত্রী তার শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার জন্য বাড়ি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের স্কুলে পড়ালেখা করতে হয়েছে তাকে। সেই সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে প্রসঙ্গক্রমে তরুণদের উৎসাহিত করতে মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘পরিশ্রমই সফলতার মূল চাবিকাঠি।
আজকের এখানে পৌঁছতে আমাকেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। বাড়ি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে। আমাদের সময়ে তো এত সুযোগও ছিল না।’ কিন্তু যুগান্তর পত্রিকায় মন্ত্রীর সেই বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। মন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক ট্রল হওয়া শুরু হয়। অনেকেই প্রকৃত বক্তব্য না জানায় প্রতিদিন ৪০ কিলোমিটার দূরের স্কুলে পায়ে হেঁটে যাওয়া-আসা কীভাবে সম্ভব? সেই প্রশ্নও করছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় দেখে দৈনিক পত্রিকাটির প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এর একটি ব্যাখ্য দিয়েছেন। মাসুদ করিম ফেসবুকে লিখেন, ‘জব্বার ভাইয়ের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার ভাটি এলাকার খালিয়াজুড়ি। ওই এলাকার হাওর এলাকা বছরের একটা সময় ডুবে থাকে।
শুকনো সময়ে হেঁটে চলাচল করা ছাড়া উপায় থাকে না। তিনি তার বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের আজমিরীগঞ্জের স্কুলে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করেছেন। স্কুল খোলার আগে হেঁটে সেখানে যেতেন। আবার গ্রীষ্ম, রমজান কিংবা অন্যান্য ছুটির সময় হেঁটে বাড়ি আসতেন। তার মানে এটা নয় যে তিনি প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার হেঁটে আজমিরীগঞ্জ যেতেন। প্রতিদিন এতটা হাঁটা সম্ভব নয় বিধায় হোস্টেলে থাকতেন। তার এক সাক্ষাৎকারে মিস কমিউনিকেশনের কারণে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। মোস্তাফা জব্বার মন্ত্রী হওয়ায় আমি খুবই গর্ব অনুভব করি। তিনি একজন অতি উঁচুমানের তথ্য প্রযুক্তিবিদ, পরোপকারী, ভালো মানুষ। তার জন্যে আমার শুভ কামনা সব সময়।’ মাসুদ করিমের এই স্ট্যাটাসের কমেন্টসে যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম লিখেন, ‘মাসুদ করিম ঠিকই বলেছেন, কিছু ভুল হয়েছে। এ জন্য দুঃখিত।’ মাসুদ করিমের স্ট্যাটাসেও পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত আসে।
আশরাফ আরজু নামের একজন লিখেছেন, ‘বদনাম তো হচ্ছে উনার। এর দায় কে নেবে?’ আসলাম আহমেদ খানের মন্তব্য, ‘এ বিভ্রান্তির শেষ হবে না। কারণ উনি স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করার পরও কিছু মানুষ জোর করে মজা লুটতে চাচ্ছে। মজা নেওয়ার জন্য অন্যকে হেয় করার প্রবণতা উন্নত মানসিকতার পরিচয় বহন করে না।’ বাহরাম খান মন্তব্য করছেন, ‘বিভ্রান্তির অবসান হোক।’ এসব মন্তব্যের মাঝে রিপ্লাই কমেন্টেসে মাসুদ করিম আবারও বলেন, ‘উনার (মন্ত্রীর) বলার ধরনের কারণে কিংবা আমাদের রিপোর্টারের বোঝার অক্ষমতায় একটা গ্যাপ হয়েছে। ফলে প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হয়নি। আমরা যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে তা সংশোধন করেছি। আমার এ স্ট্যাটাসে পরে যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম মন্তব্য করেছেন, ভুল হয়েছে। এ জন্যে দুঃখিত।’