উপজেলা পরিষদ দেশের একটি অন্যতম গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার। গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মূলত পরিচালিত হয়ে থাকে এই পরিষদের মাধ্যমে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের একটি সিদ্ধান্তের কারণে দেশের উপজেলাগুলোয় বিরাজ করছে অস্থিরতা, যা বাধাগ্রস্ত করছে উন্নয়নের গতিধারা। উপজেলা প্রশাসনের ১৭টি দফতরের প্রধান ও তাদের অধীনস্থ কর্মচারীরা মানতে চাইছেন না বেতন-বিলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র যৌথ স্বাক্ষরের বাধ্যতামূলক নিয়ম। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নানা কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে প্রকৌশলী-কৃষিবিদ-চিকিৎসক (প্রকৃচি) এবং ২৬টি ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসের বিসিএস সমন্বয় কমিটি। আন্দোলন পরিচালনাকারীরা আইন সংশোধনের দাবি করেছেন এবং দাবি মানা না হলে আজ ঢাকায় প্রতিনিধি সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদের কার্যপ্রণালী নিয়ে একটি পুরনো বিতর্ক স্মরণ করা যেতে পারে। আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হবেন এবং পরিষদ উপদেষ্টার পরামর্শ শুনতে বাধ্য থাকবে। এমনকি পরিষদের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নেও স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এ আইনের কারণে টেস্ট রিলিফ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দের দেখভাল করেন মূলত সংসদ সদস্যরাই। বিধান অনুযায়ী উপজেলার জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাঝে সরকারি বরাদ্দ ভাগ করে দেয়ার কথা; কিন্তু পরিষদের উপদেষ্টার পরামর্শ বাধ্যতামূলক বলে পরিষদ চেয়ারম্যানরা বাস্তবে এই নিয়ম পালন করতে পারছেন না। জাতীয় দিবস উদযাপনের বাজেট এবং এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমও পরিষদের উপদেষ্টা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এই আইন পাস হওয়ার সময় কথা উঠেছিল, সবকিছুর তদারকি ও দেখভাল যদি সংসদ সদস্যই করবেন, তাহলে উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান পদটি রাখার যৌক্তিকতা কী? তাছাড়া সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করা। তারা কেন স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মুরব্বি সাজবেন? স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদকে পরামর্শ দিতে পারেন বৈকি; কিন্তু যখন তা বাধ্যতামূলক হয়, তখন সেখানে গণতন্ত্রের বদলে এমপিতন্ত্র দেখা দিতে বাধ্য।
উপজেলা পরিষদে বর্তমানে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে। এমপি বনাম উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের অতিরিক্ত শুরু হয়েছে ইউএনও বনাম অন্যান্য ক্যাডারের দ্বন্দ্ব। অনেকে মনে করছেন, সংসদ সদস্য ও উচ্চপর্যায়ের আমলাদের একটি অশুভ আঁতাত তৈরি হয়েছে এবং এই আঁতাত উপজেলা চেয়ারম্যান ও অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে একচেটিয়াত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে। এসব দ্বন্দ্বের নিরসন হওয়া জরুরি। উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের চেয়ে বেশি ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন ইউএনও, এই অসঙ্গতিও দূর করতে হবে। ঢাকঢোল পিটিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করা হয়, অথচ তাদের ওপর খবরদারি করেন সংসদ সদস্য অথবা ইউএনও। উপজেলা পরিষদের অধীনে যেসব দফতর রয়েছে, সেগুলোর কর্মচারীদের বেতন-বিলে চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র যৌথ স্বাক্ষরের নিয়মটিও কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা-ও ভেবে দেখতে হবে। এক কথায়, উপজেলা পরিষদে এমন সব দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক জিইয়ে রাখা যাবে না, যা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত কিংবা এর গতি শ্লথ করতে পারে।
সংবাদ শিরোনাম
উপজেলা পরিষদে অস্থিরতা । অধ্যক্ষ আসাদুল হক
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১০:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৫
- ৩১২ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ