পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ৭ বছরের কারাদণ্ড

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। সোমবার রাজধানী ইসলামাবাদের দুর্নীতি বিরোধী আদালত ঘোষিত সম্পদের বাইরেও অর্থ থাকায় তাকে এই কারাদণ্ড দেন।

লন্ডনে কেনা বিলাসবহুল চারটি ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধে দেওয়া অর্থের উৎস দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ৬ জুলাই নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় পাকিস্তানের আদালত। তার মেয়ে মরিয়মকে দেওয়া হয় ৭ বছরের কারাদণ্ড। মরিয়মের স্বামী ও নওয়াজের মেয়ের জামাই অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ সফদরকেও আদালত এক বছরের সাজা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে নিম্ন আদালতের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ। মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ৫ লাখ রুপিতে নওয়াজ ও তার পরিবারের সংশ্লিষ্ট সদস্যদের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। এবার অন্য দুই দুর্নীতি মামলায় নওয়াজের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়।

সোমবার রায় ঘোষণার সময়ে ইসলামাবাদের আদালতের চারপাশে প্রচুর নিরাপত্তা ছিলো। সাবেক ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের সমর্থকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যদি এমন কিছু ঘটে তাহলে তারা ব্যাপক বিদ্রোহ গড়ে তুলবে। দলের শীর্ষ নেতা নওয়াজের প্রতি সমর্থন জানাতে সকাল সাড়ে সাতটা থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ভীড় জমান পিএমএল-এন কর্মীরা।আদালতের বাইরে অপেক্ষমান সমর্থকদের টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে নিরাপত্তাকর্মীরা।

আদালত বলেন, সৌদি আরবে আল আজিজিয়া স্টিল মিলের মালিকানা নেওয়ার ক্ষেত্রে আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো কিছু প্রমাণ করতে পারেননি তিনি রায়ের পর নওয়াজ শরীফ দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত এবং এই রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করবেন তিনি। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে ফ্ল্যাগশিপ বিনিয়োগে পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তার দুই ছেলে হাসান এবং হুসেইন যারা বর্তমানে পাকিস্তানে নেই তাদের আত্মগোপনকারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন আদালত। সোমবার আদালত চত্বরেই নওয়াজ শরীফকে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল দুনিয়ার প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং রাঘববোয়ালদের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেয় আলোচিত ‘পানামা পেপারস’। ফাঁস হওয়া ওই গোপন নথিতে অর্থ পাচারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলের নাম উঠে আসায় নিজ দেশে চাপের মুখে পড়েন তিনি। বিরোধী দলগুলো থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়।

২০১৬ সালের ১ নভেম্বর নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে অবৈধ বিনিয়োগের অভিযোগ তদন্তে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পানামা পেপারস প্রকাশের পর বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত দেয় আদালত। ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর পদত্যাগ করেন নওয়াজ শরিফ। আর ওই বছরের সেপ্টেম্বরে নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের সমস্ত সম্পত্তি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার সুপারিশ করা হয়।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে নওয়াজ শরিফের পরিবারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো। এর মধ্যে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে অ্যাভেনফিল্ড দুর্নীতি মামলায় রায় প্রদান করলেও অন্য দুই মামলার শুনানি থেকে নিজেকে বিরত রাখেন বিচারপতি মোহাম্মদ বশির। পরে এ দুই মামলা বিচারপতি আরশাদ মালিকের আদালতে পাঠানো হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর