আসুন উৎসবে শাপের ফনা প্রতিহত করি

তসলিমা নাসরীনের বন্ধু নই।নারীবাদী লেখক নই। পুরুষবিদ্বেষী মানুষ ও নই। কোন দলকানাও নই। কিন্তু বুঝলামনা এবার কোন পুরুষ বা বন্ধু আমায় নববর্ষে একটি পাঞ্জাবি কেন, একখানি গামছাও উপহার দিলো না! তবে আমি আনন্দিত পুলকিত যে, এবার নববর্ষে ২১জন সুন্দরী রমনী ও বান্ধবী আমায় নববর্ষে ২২টি পাঞ্জাবি উপহার পাঠিয়েছেন।এর মধ্যে কিছু স্পেশালিটি আছে যা স্পর্শ করলে নিজেকে রবীন্দ্রনাথ মনে হয়।আমি তাই তাদের সঙ্গে নারীদের জন্য একটি লাল গোলাপ ও একখানি মালা আর ভুবন ভরা হাসিতে শুভ নববর্ষ দিলাম ফেসবুকের সুবাদে। আমি ১২জন বান্ধবীকে রঙ থেকে কেনা শাড়ি উপহার দিয়েছি। উপহার যারা পেলেন তারা টিটনকে শুভেচ্ছা দিতে পারেন। কারণ এবার কারা পাবেন এ তালিকা টিটন করেছে, টুকু তা পৌছে দিয়েছে। দুই বন্ধুর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নববর্ষে ঢাকায় দেখলাম দিনে দিনে ইলিশ পান্তা খাবার ঢেউ থেকে জোয়ার। হুজুকে মাতে বাঙ্গালি।আর যায় কোথায়, প্রান্তিকেও ইলিশের বাজারে আগুন। এবার মা ইলিশের মৌসুম, তাই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মাছের রাজা রাণীকে। প্রধানমন্ত্রী ইলিশ বাদ দিয়ে মেনু করেছেন।অভিনন্দন। ছোটবেলায় নতুন হালখাতার উৎসবে আসা নববর্ষে, মা পান্তা দূরে থাক, ইলিশতো মিলতো না এলাকায়, মাছের দেশে বড় রুই, মোরগ, পোলাও, দুধভাত, কত কি রান্না করে খাওয়াতেন। বলতেন, বছরের প্রথমদিন ভালো খাবে,ভালোভাবে চলবে। সারাবছর ভালো থাকবে। সেই স্মৃতি কত বছরের, মাও নেই অনেক বছর। জনজোয়ারে হেটে হেটে উৎসব উপভোগের শরীর মন নেই।একসময় রমনা, শাহবাগ, টিএসসি, তারপর জাতীয় প্রেসক্লাবে নববর্ষের আনন্দ। এখন কোথাও যাইনা, আড্ডাবাজিই করি। বিএনপি জমানায় রমনায় বোমাবাজি, ছায়ানটের ডাকে বাঙ্গালির বর্ষবরনের আনন্দ রক্তাক্ত। তবু দমেনি বাঙ্গালি উৎসবের জোয়ারে ঢল নামে লাখ লাখ মানুষের। কর্পোরেট সংস্কৃতি বাণিজ্য করে নিলেও, উৎসবের ঐতিহ্য হারায়নি জাতি।আওয়ামী লীগ আমলে গেলবার টিএসসির কাছেই উৎসবের বানে লান্চিত হয়েছে নারী।কোন ঘটনার বিচার হয়নি। এবার পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদারের পাশে পাচটার পর উৎসবের সীমানা টেনেছে। সীমাবদ্ধতা আছে।মানতে হবে,বিতর্ক হচ্ছে,কিন্তু কারো মান, ইজ্জত প্রান হারানোর চেয়ে উৎসব সময়ের সীমা টানা উত্তম।সুলতানা কামাল মধ্যযুগীয় বলেছেন, এর সঙ্গে একমত নই।তিনি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন সময়মতো না হওয়া এবং যা চলছিলো তা মানতে না পেরে তত্বাবধায়ক উপদেষ্টা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।নিজের সীমাবদ্ধতা জানেন, প্রশাসনেরটা জানেননা! আমরা কার্যত মডারেট মুসলিম দেশ। আমাদের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে দেখা। একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ।সেই লড়াই চলছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সব মত পথ থাকবে।তাই বলে সসাম্প্রদায়িক অসুস্হ মনে ধর্মীয় সংখালঘুদের নির্যাতন, মুক্ত চিন্তার নামে মানুষের ধর্মীয় আবেগ বিশ্বাস ও অনুভুতিতে আঘাত, পাল্টা জেহাদি ষ্টাইলে হত্যা, কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়।আমরা যখন গরিব জাতি ছিলাম, কৃষক পান্তা পেঁয়াজ লংকা ক্ষেতে যেত।এখন ডিম ভাত খেয়ে যায়।মাছে ভাতে বাঙ্গালী এখন অনেক স্বচছল।পান্তা কি আদৌ ঐতিহ্যের খাবার যে খারব্ ডাক ঢোল বাজিয়ে।আমরা উপাদেয় খাবার খাবো,বাংলা, বাউল গান শোনবো।মেলায় যাবো, হালখাতার মিষ্টি খাবো।উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে দেবো।রোজ মানবিক বাঙ্গালি হবো।নাগরদোলা চড়বো,বাঁশি বাজিয়ে পথ হাটবো।ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের কয়েক ‘শ গজের মধ্যে এত বড় উৎসব। ছাত্র-রাজনীতি ও প্রশাসন গৌরবের ঐতিহ্য হারিয়েছে, গেলোবার ছাএইউনিয়ের একটি সাহসী ছেলে প্রতিরোধে এগিয়ে মার খেছে।কেন!সকল ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীরা প্রশাসনের সঙ্গে বসে নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসেন না? কেনইবা প্রশাসন রাজৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে আগে বসে তাদেরকেও কাজে লাগালেননা।সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে মানুষের শক্তিই বড়।মানুষকেই আমাদের গৌরবের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করে উৎসবের আনন্দ যারা মাটি করে তাদের রুখতে।নববর্ষের দিনে আসুন সুন্দের সভ্যতার উৎসবের ভিতরে যে বিষধর শাপ ফনা তুললেই তাকে প্রতিহত করে।পহেলা বোশেখ আমাদের জাতীর উৎসবের প্রাণ। ঐক্যের এ প্রাণশক্তি রুদ্ধ নয়, মানুষের শক্তিতেই ছড়িয়ে দেই।মানবিক প্রফুল্লচিত্তের বাঙ্গালীর কাছে প্রতিদিন নববর্ষ। প্রতিক্ষণ যেমন অনুভুতিশীল প্রেমিকের ভালোবাসা দিবস।শুভ নববর্ষ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর