ঢাকা ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহাজ্জদ নামাজে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৯৪ বার

স্রষ্টার নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে তার প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে দেওয়া। আর এ জন্য সর্বোত্তম মাধ্যম হলো নিষ্ঠার সঙ্গে নামাজ আদায় করা। মহান আল্লাহ রাব্বুুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসা পর্যন্ত নামাজ প্রতিষ্ঠিত করো। আর প্রভাতে কোরআন পড়াকে গুরুত্ব প্রদান করো। প্রভাতে কোরআন পাঠ নিশ্চয়ই এমন যে, তা সাক্ষ্য প্রদান করে থাকে। আর রাতের এক অংশেও তার (কোরআন পাঠের) সঙ্গে তাহাজ্জদ পড়তে থাকো। এটি তোমাদের জন্য হবে নফলবিশেষ। আশা করা যায়, তোমার প্রভু প্রতিপালক তোমাকে এক বিশেষ প্রশংসনীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৮-৭৯)। উল্লিখিত আয়াতে আমাদের আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভের পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। আমরা যদি তার নৈকট্য লাভ করতে চাই, তা হলে আমাদের নীরবে একনিষ্ঠ হয়ে তার কাছে কান্নাকাটি করে পাপগুলোর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহপাক ক্ষমাশীল। তিনি চাইলে আমাদের ক্ষমা করতে পারেন। আমাদের কাজ হচ্ছে ক্ষমা চাইতে থাকা আর দোয়া করতে থাকা। দোয়া করার উত্তম একটি সময় হলো গভীর রাত অর্থাৎ তাহাজ্জদের সময়।

হাদিসে এসেছে, হজরত বেলাল (রা.) বর্ণনা করেছেন- মহানবী (স) বলেছেন, ‘তাহাজ্জদ নামাজ তোমাদের নিয়মিতভাবে পড়া উচিত। কেননা এটি অতীতকালের সৎকর্মশীলদের পদ্ধতি ছিল এবং স্রষ্টার নৈকট্য লাভের মাধ্যম ছিল। এই অভ্যাস পাপকর্ম থেকে বিরত রাখে, মন্দকর্ম দূর করে আর শারীরিক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে’ (তিরমিজি, আবওয়াবুদ দাওয়াত)। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘রাতে শেষ প্রহর যখন আসে; আল্লাহতাআলা তখন পৃথিবী সকাশে অবতরণ করেন আর বলেন, আছে কি কেউ? যে আমার কাছে দোয়া যাচনা করবে আর আমি তার দোয়া কবুল করব। কেউ কি আছে? যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আর আমি তাকে মার্জনা করব। কেউ কি আছে? আছে সে- তার নিজের দুঃখ-ক্লেশ দূর করার জন্য দোয়া করলে আমি দুঃখ-ক্লেশ বিদূরিত করব। এভাবে আল্লাহতাআলার এ আহ্বান করা (ততক্ষণ পর্যন্ত) চলতেই থাকে, এমনকি সুবেহ সাদেক-প্রভাতের আলোকরেখা ফুটে ওঠে’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫২১)।

আরেকটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন- মহানবী (স) এক প্রসঙ্গে বলেছেন- ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, যে আমার বন্ধুর সঙ্গে দুশমনি করেছে; আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দা, যতটা আমার নৈকট্য, যা কিছু আমার পছন্দ আর আমি তাদের জন্য যেসব ফরজ করে দিয়েছি- তা থেকে লাভ করতে সক্ষম হবে, ততটা অন্য আর কিছু থেকে লাভ করতে পারবে না। আরও নফলের মাধ্যমে আমার বান্দা আমার এমন নিকটতর হয়ে যায় যে, আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করে দিই। আর আমি তাকে যখন নিজের বন্ধু বানিয়ে নিই, তখন তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শোনে; চোখ বনে যাই যা দ্বারা সে দেখে; তার হাতে পরিণত হই যা দ্বারা সে ধরে রাখে; তার পা হয়ে যাই- যা দ্বারা সে চলাফেরা করে। অর্থাৎ আমিই তার রূপকার-নির্মিতা। আমার কাছে চাইলেই আমি তাকে দিই। সে আমার কাছে আশ্রয় যাচনা করলে আমি তাকে নিরাপদ আশ্রয় দান করি’ (বোখারি)। হজরত আবু হুরায়ারা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, মহানবী (স) বলেনÑ ‘সেই ব্যক্তির ওপর আল্লাহতাআলা রহম করুন; যে রাতের বেলায় জেগে ওঠে ও নামাজ পড়ে আর প্রিয়তমা স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয়। স্ত্রী জেগে উঠতে গরিমসি করলে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয় যাতে সজাগ হয়ে সে উঠে পড়ে। অনুরূপভাবে আল্লাহতাআলা সেই মহিলার প্রতিও রহম করুন- যে প্রথমে জেগে ওঠে, নামাজ পড়ে আর প্রিয়তম স্বামীকেও জাগিয়ে তোলে। স্বামী জেগে উঠতে গড়িমসি করলে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়Ñ যাতে সে জেগে ওঠে’ (আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত)।

আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে তার নৈকট্য লাভের তৌফিক দান করুন।

মাওলানা এম আহমদ : প্রাবন্ধিক ও লেখক

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তাহাজ্জদ নামাজে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি

আপডেট টাইম : ১১:৫১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

স্রষ্টার নৈকট্য ও ভালোবাসা লাভের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে তার প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে দেওয়া। আর এ জন্য সর্বোত্তম মাধ্যম হলো নিষ্ঠার সঙ্গে নামাজ আদায় করা। মহান আল্লাহ রাব্বুুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসা পর্যন্ত নামাজ প্রতিষ্ঠিত করো। আর প্রভাতে কোরআন পড়াকে গুরুত্ব প্রদান করো। প্রভাতে কোরআন পাঠ নিশ্চয়ই এমন যে, তা সাক্ষ্য প্রদান করে থাকে। আর রাতের এক অংশেও তার (কোরআন পাঠের) সঙ্গে তাহাজ্জদ পড়তে থাকো। এটি তোমাদের জন্য হবে নফলবিশেষ। আশা করা যায়, তোমার প্রভু প্রতিপালক তোমাকে এক বিশেষ প্রশংসনীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৮-৭৯)। উল্লিখিত আয়াতে আমাদের আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভের পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। আমরা যদি তার নৈকট্য লাভ করতে চাই, তা হলে আমাদের নীরবে একনিষ্ঠ হয়ে তার কাছে কান্নাকাটি করে পাপগুলোর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহপাক ক্ষমাশীল। তিনি চাইলে আমাদের ক্ষমা করতে পারেন। আমাদের কাজ হচ্ছে ক্ষমা চাইতে থাকা আর দোয়া করতে থাকা। দোয়া করার উত্তম একটি সময় হলো গভীর রাত অর্থাৎ তাহাজ্জদের সময়।

হাদিসে এসেছে, হজরত বেলাল (রা.) বর্ণনা করেছেন- মহানবী (স) বলেছেন, ‘তাহাজ্জদ নামাজ তোমাদের নিয়মিতভাবে পড়া উচিত। কেননা এটি অতীতকালের সৎকর্মশীলদের পদ্ধতি ছিল এবং স্রষ্টার নৈকট্য লাভের মাধ্যম ছিল। এই অভ্যাস পাপকর্ম থেকে বিরত রাখে, মন্দকর্ম দূর করে আর শারীরিক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে’ (তিরমিজি, আবওয়াবুদ দাওয়াত)। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘রাতে শেষ প্রহর যখন আসে; আল্লাহতাআলা তখন পৃথিবী সকাশে অবতরণ করেন আর বলেন, আছে কি কেউ? যে আমার কাছে দোয়া যাচনা করবে আর আমি তার দোয়া কবুল করব। কেউ কি আছে? যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আর আমি তাকে মার্জনা করব। কেউ কি আছে? আছে সে- তার নিজের দুঃখ-ক্লেশ দূর করার জন্য দোয়া করলে আমি দুঃখ-ক্লেশ বিদূরিত করব। এভাবে আল্লাহতাআলার এ আহ্বান করা (ততক্ষণ পর্যন্ত) চলতেই থাকে, এমনকি সুবেহ সাদেক-প্রভাতের আলোকরেখা ফুটে ওঠে’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫২১)।

আরেকটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন- মহানবী (স) এক প্রসঙ্গে বলেছেন- ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, যে আমার বন্ধুর সঙ্গে দুশমনি করেছে; আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দা, যতটা আমার নৈকট্য, যা কিছু আমার পছন্দ আর আমি তাদের জন্য যেসব ফরজ করে দিয়েছি- তা থেকে লাভ করতে সক্ষম হবে, ততটা অন্য আর কিছু থেকে লাভ করতে পারবে না। আরও নফলের মাধ্যমে আমার বান্দা আমার এমন নিকটতর হয়ে যায় যে, আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করে দিই। আর আমি তাকে যখন নিজের বন্ধু বানিয়ে নিই, তখন তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শোনে; চোখ বনে যাই যা দ্বারা সে দেখে; তার হাতে পরিণত হই যা দ্বারা সে ধরে রাখে; তার পা হয়ে যাই- যা দ্বারা সে চলাফেরা করে। অর্থাৎ আমিই তার রূপকার-নির্মিতা। আমার কাছে চাইলেই আমি তাকে দিই। সে আমার কাছে আশ্রয় যাচনা করলে আমি তাকে নিরাপদ আশ্রয় দান করি’ (বোখারি)। হজরত আবু হুরায়ারা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, মহানবী (স) বলেনÑ ‘সেই ব্যক্তির ওপর আল্লাহতাআলা রহম করুন; যে রাতের বেলায় জেগে ওঠে ও নামাজ পড়ে আর প্রিয়তমা স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয়। স্ত্রী জেগে উঠতে গরিমসি করলে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয় যাতে সজাগ হয়ে সে উঠে পড়ে। অনুরূপভাবে আল্লাহতাআলা সেই মহিলার প্রতিও রহম করুন- যে প্রথমে জেগে ওঠে, নামাজ পড়ে আর প্রিয়তম স্বামীকেও জাগিয়ে তোলে। স্বামী জেগে উঠতে গড়িমসি করলে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়Ñ যাতে সে জেগে ওঠে’ (আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত)।

আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে তার নৈকট্য লাভের তৌফিক দান করুন।

মাওলানা এম আহমদ : প্রাবন্ধিক ও লেখক