একসময় বলা হতো, ডাল-ভাত-আলুভর্তা হলো গরিবের খাবার। যার অবস্থা কিছুটা ভালো, তার পাতে জুটত বড়জোর ডিম, ব্রয়লার মুরগি অথবা পাঙাশ মাছ। এখন এর কোনোটিই গরিব বা নিম্নআয়ের মানুষের নাগালে নেই। সবশেষ বাজার পরিস্থিতি বলছে, মোটা চালের কেজি ৫৫-৫৬ টাকা, মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা; বৃহস্পতিবার আলু সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮৫ টাকা কেজি দরে। পাঙাশ বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২২০ টাকায়। এ অবস্থায় প্রশ্ন হলো, গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষ খাবে কী? কেন বাজারের এ অবস্থা? দেশে কি খাদ্যের ঘাটতি আছে? দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে? না, এর কোনোটিই নয়। বাজারে খাদ্যপণ্যের মজুত পর্যাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে বাজারে যা ঘটছে তা হলো, ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার লোভ। অসাধু ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে অর্থাৎ সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিটি পণ্যের দাম। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দিয়েও তা কার্যকর করাতে পারেনি।
কিন্তু এ অবস্থা তো চলতে পারে না। জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। অথচ যাদের কারণে সাধারণ মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে গেছে, সেই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই দিন দিন তাদের লোভ বাড়ছে, তারা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। বাজার তদারকির কথা শোনা গেলেও বাস্তবে এ ধরনের তৎপরতা কোনো বাজারেই দৃশ্যমান নয়। বাজার তদারকি সংস্থার উদ্দেশে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিত্যপণ্যের প্রতিটি বাজারে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো হোক। চিহ্নিত করা হোক সিন্ডিকেট। অসৎ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা করে আইনের আওতায় আনা হোক। এ ধরনের কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশকে (টিসিবি) সক্রিয় করুন। দেখবেন অতি মুনাফাখোরদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে গেছে। আর তা না পারলে সেটা বাজার তদারকি সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা বলে পরিগণিত হবে। প্রশ্ন উঠবে সংশ্লিষ্টদের সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে। সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধেই নিতে হবে ব্যবস্থা।