জীবন যখন যেমন

রোমেনা লেইস:

দেখতে দেখতে আজ সাত বছর হয়ে গেল।নিউ ইয়র্কে যখন প্রথম আসলাম আঠারো বছরের ঘর সংসার ছেড়ে বিদেশ বিভূইয়ে বেশ দ্বিধা আর শংকা নিয়ে।তবে একটাই ভাললাগা ছিলো আমরা সবাই একসাথে আছি।সুখে থাকি দুঃখে থাকি সবাই একসাথে আছি।একবার ভেবেছিলাম বাচ্চাদের রেখে আসবো। না আসলে আমি ভাবিনি কখনোই কাউকে রেখে আসবো।সুখে থাকি দুঃখে থাকি সব সময় একসাথে
থাকবো সবসময় এই থিওরীতে বিশ্বাস করি।কেউ কেউ বলেছিলো একা আসতে। তাই ২০০৯ এর নয় এপ্রিল যখন জেএফকে এয়ারপোটর্ে নেমেছি। মনে ভয় ছিলো । অনিশ্চয়তার পথ বেয়ে এখন ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করছে। বড় ছেলে গ্রাজুয়েশন করবে শিগগিরই। আশার আলো ফুটলো বলে।

প্রথম আসার পর এক ডলার দিয়ে পানি কেনার কথা ভাবলেই আৎকে উঠতাম ।আমার মেজ ছেলে ফুটবল প্র্যাকটিস করতে যেত।বলতো মা এক ডলার দাও পানি কিনবো। আমি ওকে পানি ভর্তি বোতল দিয়ে দিতাম বাসা থেকে। মনে মনে ভাবতাম এই এক ডলার দিয়ে দুটো ডোনাট কিনে বিকেলের নাস্তা খেতে পারবে। শুরুটা কঠিন ছিলো। প্রথম আসলাম যখন মেট্রোকার্ড ছিলো দুই ডলার।আগস্ট মাস থেকে তা বেড়ে সোয়া দুই ডলার হয়ে গেলো।বাচ্চা গুলোর হাইট কম ছিলো বাস ট্রেনে ভাড়া লাগতো না। ওরাও বেড়ে গেলো। ওদেরও মেট্রোকার্ড লাগে। সাত বছরে তিনদফায় মেট্রোকার্ড ফেয়ার এখন দুই টাকা পঁচাত্তর পয়সায় এসে ঠেকেছে।

আমাদের নিউইয়র্কের সাবওয়ে সিস্টেম খুব ভাল।সাবওয়ে আর বাস পরিবহন ব্যবস্থা এত সুন্দর যে যেকোন সময় যেকোনো জায়গায় নির্বিঘ্নে যাতায়াত করা যায়।চব্বিশ ঘন্টা সহজলভ্য এই যানবাহন। ছেলেরা বড় হচ্ছে। গাড়ি যদিও দরকার হয় না, তবুও ২০১৪ সালে ওদের জন্যই গাড়ি কেনা হলো। লং উইকএন্ডগুলিতে আমরা এদিক ওদিক ঘুরতে যাই। কত যে সুন্দর ছড়িয়ে আছে।অপূর্ব সৃষ্টি বিধাতার।দেখি আর দেখার সুযোগ পেয়েছি বলে আল্লাহর শোকর আদায় করি।

পেনসিলভানিয়া গিয়েছি প্রথম একবার নীলফামারী সমিতির পিকনিকে।কী সুন্দর উপত্যকা। সবুজ ঘাসের চাদর ছড়ানো।অপূর্ব এক লেক। সবুজ জলে অবারিত হাঁসের জলকেলী।

নিউজার্সী যাবার সময় দেখলাম নয়নাভিরাম নগর সৌন্দর্য। নিউইয়র্কে বাস করে নিউইয়র্ক দেখিনি এভাবে।কী যে সুন্দর স্কাইলাইন ম্যানহাটনের। বুঝলাম কেন নিউইয়র্ক অন্যতম সেরা।

এক ঈদে ছেলেরা লেইকজর্জ যেতে চাইলে আমরাও হৈ হৈ করে রাজী হয়ে গেলাম। তবে এখানে আবহাওয়া চেক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গুগল সার্চ দিয়েই বের হয়ে পড়লাম।সুন্দর ঝকঝকে দিন।রোদ যেন সোনা ঝরাচ্ছে গাছের পাতায়।লতা মুঙ্গেসকারের সেই বিখ্যাত গান গাছের পাতা রোদের ঝিকিমিকি
আমায় চমকে দাও….। শুনতে শুনতে পৌঁছে গেলাম লেইকজর্জ। কিন্তু গোল বাঁধালো ওয়েদার।আকাশকালো করে ঝুমঝুম বৃষ্টি নামলো। কী চমৎকার পাহাড়ের সারি।লেকের কালো জল। জলের বুক ঘেষে পাহাড়ের সারি।ভালভাবে কিছু দেখতে পারলাম না। ছবি তুলতে পারলাম না।তারপরও কীযে ভাল লাগলো।

মরিসপীয়ার। নিবিরের বন্ধু শাওন। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে একসাথে পড়তো। মালয়েশিয়ায় পড়ে। সেখানকার ইউনিভার্সিটি থেকেই সামার জব নিয়ে কন্ট্রাক্টে এসেছে ।জেএফকে থেকে নিবির নিয়ে আসলো। পরের দিন আমরা গেলাম ওকে নিয়ে মরিসপীয়ারে। অত্যন্ত সুন্দর ট্যুরিস্ট স্পট।আমার ভাল লাগলো ওখানকার সী বিচ।বেশ বিস্তৃত সী বিচ। নীল জল আছড়ে পরছে এসে।সীমাহীন জলরাশি বালুকাবেলায় এসে আছড়ে পরছে।আমরা বালির উপর হেঁটে যাই মনে বাজে মৌসুমি ভৌমিকের সেই বিখ্যাত গান—

আমি শুনেছি সেদিন তুমি
সাগরের ঢেউয়ে চেপে

নীলজল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছো
আমি শুনেছি সেদিন তুমি
নোনাবালি তীর ধরে
বহুদূর বহুদূর হেঁটে এসেছো।।
আমি কখনো যাইনি জলে
কখনো ভাসিনি নীলে
কখনো রাখিনি চোখ
ডানা মেলা গাংচিলে
আবার যেদিন তুমি
সমুদ্র স্নানে যাবে
আমাকেঔ সাথে নিও
নেবেত আমায় বলো….??

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর