কুলাউড়ায় নলকূপ কাণ্ড! সুলতান মনসুর বললেন : কে ধনী কে গরিব-এটা বিষয় না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সরকারি প্রকল্পের গভীর নলকূপ বিতরণে স্থানীয় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, দুস্থদের বাদ দিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতা, ধনাঢ্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীকে তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, তিনি যাকে প্রয়োজন মনে করেছেন, তাকেই নলকূপ দিয়েছেন।

তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন—বরমচাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহান উদ্দিন (তিন ভাই লন্ডনে থাকেন), ধনাঢ্য সবুজ উদ্দিন ও ধনাঢ্য ব্যক্তি মো. দলা মিয়া। ভূকশিমইল ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন ডা. মামুন, ইউনিয়ন যুুবলীগের সাবেক নেতা এনামুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম খান, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ধীরেন্দ্র মোহন দাস, ইউনিয়ন যুুবলীগের সভাপতি বীরেন্দ্র কান্ত দাস। ভাটেরা ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ, ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আব্দুল হামিদ খান, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রনি হাসান ছালাম, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মুজিবুর রহমান তালুকদার, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন মিয়া। জয়চণ্ডী ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এনামুল হক মিফতা,

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক খালেদ পারভেজ বখ্শ ও অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম।

ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য বিমলেন্দু সেন কৃষ্ণ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির ছেলে নাসের আহমদ, জাহাঙ্গীর আলম কণা। কাদিপুর ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিআরডিবি চেয়ারম্যান ফজলুল হক ফজলু, উপজেলা বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন ঠিকাদার শাহিন বক্স, খায়রুল আলম কয়ছর, নিয়ামুল ইসলাম, আব্দুল নাঈম চৌধুরী।

সদর ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন ধনাঢ্য ব্যক্তি আতাউর রহমান চৌধুরী বাবলা, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ইউপি সদস্য আবু তালিব লিটন। রাউত্গাঁও ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রুহুল আমীন, উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সফি আহমদ চৌধুরী পলিট, ধনাঢ্য ব্যক্তি সৈয়দ মহসিন আল হাসান, শিপন খান ও বিএনপি নেতা লেবু মিয়া। টিলাগাঁও ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন ছাত্রদল নেতা আনখার উদ্দিন, সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বাবুল মিয়া, ধনাঢ্য ব্যক্তি আব্দুস ছালাম চৌধুরী ও ডা. কেরামত আলী।

হাজীপুর ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি আব্দুল মুহিত, সাংগঠনিক সম্পাদক তোয়াহিদ আলী, সাবেক সভাপতি জমসেদ আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রকিব আলী, ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি মছব্বির আলী, ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন মিজু ও পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবু বিধান চন্দ্র দে। শরীফপুর ইউনিয়নে রয়েছেন তায়েফ আহমদ, যিনি টিউবওয়েল বণ্টনের সমন্বয়কারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ছয়ফুর রহমানের ভাগ্নে।

পৃথিমপাশা ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন- সুলতানপুরের ধনাঢ্য ব্যক্তি জাহাঙ্গীর কবির হেপী, যার বাড়িতে দ্বিতল একটি অত্যাধুনিক ভবন রয়েছে, ধনাঢ্য ব্যক্তি আবু মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, যার স্থানীয় রবিরবাজারে বড় হোটেল রয়েছে এবং তার পরিবারের এক ভাই যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, ধনাঢ্য ব্যক্তি বখতিয়ার হোসেন খছরু, ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও ব্যবসায়ী হিরা মিয়া, খালেদ আহমদ যার রবিরবাজারে আশিক ম্যানশন নামে একটি বড় মার্কেট রয়েছে।
কর্মধা ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন- কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজিব আলীর ছেলে জুয়েল, যার পরিবারের কয়েকজন প্রবাসে রয়েছেন, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী রুহুল আমীন, কর্মধা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মশাহিদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ছায়দুল ইসলাম সাহেদ, ধনাঢ্য ব্যক্তি রেজান আলী, কর্মধা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সেক্রেটারি আজিজুল হক জুয়েল। এমপি’র অফিস সহকারী শেখ রুহেলের বাড়ির ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ডা. উজির আহমদ শিশু একাডেমির নামেও টিউবওয়েল বরাদ্দ হয়েছে। বিশেষ করে কর্মধা ইউনিয়নের কর্মধা গ্রামেই ৮টি টিউবওয়েল বরাদ্দ করা হয়েছে।

সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আব্দুস শহীদ বলেন, ‘আমি এমপির কোনো কমিটির দায়িত্বে নেই। নলকূপ বণ্টনের দায়িত্বে রয়েছেন ছয়ফুর রহমান।’

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ছয়ফুর রহমান বলেন, ‘টিউবওয়েল বরাদ্দ এমপির সিদ্ধান্ত। নেতাকর্মীদের তিনি খুশি রাখতে সমন্বয় করে টিউবওয়েল বরাদ্দ দিয়েছেন।’

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এসব বিষয়ে সামনাসামনি কথা বলা উচিত। আমি তো তোমারে চিনি না। এককথায় আমি বলতে পারি, যাকে প্রয়োজন মনে করেছি, তাকে টিউবওয়েল দিয়েছি। কে ধনী, কে গরিব—এটা আমার বিবেচনার বিষয় নয়। যার পানির প্রয়োজন, তাকে টিউবওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর