মৌসুমী কৃষকে জমজমাট বোরো চাষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাজার হাজার অভাবী লোক প্রতি বছরই কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে আসে এক মুঠো অন্ন সংগ্রহ করতে। তাদের মধ্যে রয়েছেন নিরক্ষর, অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন থেকে শুরু করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পাড় হওয়া এসএস সি ও এইচএস সি পাস যুবকও। শুধু মাত্র পরিবারের একটু সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য কলেজ পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীও চলে আসেন এই এলাকায়।

বর্তমানে কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলাতেই চলছে জমজমাট বোরো চাষ। দম ফেলার ফুসরত নেই এই চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। দেশের উত্তরাঞ্চলের অসংখ্য যুবক পাশাপাশি বৃদ্ধও চলে এসেছেন এই কয়েক মাস এখানে কৃষি কাজ করার জন্য। মৌসুমী এই কৃষকদের পদচারণায় মুখর কুমিল্লা অঞ্চলের সবুজ জমিন।

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউপির মির্জানগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে নানা বয়সের নারী পুরুষ মিলে বোরো ধান আবাদ করছে। গোমতী নদীর কুল ঘেঁষে বেড়ে উঠা এই জমিতে গিয়ে কথা হয়  মিজান, খোকন, নাঈম,পলাশ, রাসেল ও আনিসের সঙ্গে। মাথা নিচু করে হাতে সবুজ বোরোর মুঠি নিয়ে কাদা জমিতে বোরো ধান আবাদ করছে আর গুনগুনিয়ে মনের আনন্দে গান গাইছেন।

সালাম দিতেই এগিয়ে এলেন আনিছ নামের মধ্য বয়সের এক যুবক। বাড়ির নাম জানতেই এক গাল হেসে বললেন, ভাই আমরা রংপুরের না। আমাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার পূর্বধলা ও গৌরীপুর উপজেলায়।

কবে এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, প্রায় এক মাস হয়ে যাবে। প্রতি বছরই আমরা এই অঞ্চলে ধান চাষ করতে আসি। এ সময় আমাদের এখানে খুব একটা কাজ থাকে না। কুমিল্লা অঞ্চলে কাজও বেশি আবার টাকাও বেশি।

আনিছ বলেন, কুমিল্লায় আমরা চুক্তিতে কাজ করি। এক কানি (৪০ শতাংশ) বোরো আবাদ করতে আমরা ২ হাজার টাকা নেই। ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কম বা বেশিও নেই। গড়ে প্রতি দিন আমরা প্রায় আড়াই থেকে তিন কানি জমিতে বোরো আবাদ করি। গড়ে আমরা প্রত্যেকে ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা রোজগার করি। খরচ গিয়ে আমাদের প্রায় ৬০০ টাকা থাকে।

কৃষক আনিছের সঙ্গে কথা বলার সময় এগিয়ে আসেন মিজানুর রহমান। তাকে বোরো আবাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই লাজুক হাসিতে বলেন, ভাই আমি কিন্তু কৃষক না। কৃষি সম্পর্কে ভালো উত্তর দিতে পারব না। আমি হলাম মৌসুমী কৃষক। কলেজে পড়ি। এখন এই এলাকায় বোরো আবাদের মৌসুম। তাই এক মাসের জন্য কুমিল্লা এসেছি। এখানে এক মাস কাজ করলে প্রায় সারা বছরের পড়াশুনার খরচ হয়ে যায়। তাই চাচাদের সঙ্গে প্রায় বছরই আমি এখানে আসি কাজ করি। শুধু আমি না। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় আমাদের ময়মনসিংহ জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকেও প্রায় কয়েকশ শিক্ষার্থী রয়েছে যারা দশম শ্রেণি থেকে শুরু করে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। আমার জানা মতে কয়েকজন অনার্সেও পড়ে। আমরা শিক্ষার্থীরা শুধু উইন্টার সিজনে আসি। কেউ এক মাস, কেউ দুই মাস, কেউ তিন মাস কাজ করে চলে যায়। আবার পরের বছর আসে। নিজের পড়াশুনার খচর আর সংসারের সচ্ছলতা আনতেই তারা এই পরিশ্রম করেন।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে কুমিল্লা জেলায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বেরো আবাদের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৭৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। সব কিছু অনুকূলে থাকলে এবার বিগত বছরের তুলনায় কুমিল্লায় বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্পসারণ অফিসের উপ পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে প্রতি বছরই আমাদের ধানের আবাদি জমি কমছে। তারপরও আমরা আমাদের লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায় ৯৫ ভাগ আবাদি জমিতে বোরো আবাদ করা হয়ে গেছে। আশা করি ২/১ দিনের মধ্যে বাকি আবাদ সম্পন্ন হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর