চট্টগ্রাম সিটি চসিক নির্বাচন: নাছির বাদ পড়ায় হতাশ অনুসারীরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় আ জ ম নাছির শিবিরে প্রচণ্ড হতাশা নেমে এসেছে।

পাঁচ বছর নগর উন্নয়ন তথা ‘ক্লিন সিটি গ্রিন সিটি’ বাস্তবায়নে দিন-রাত পরিশ্রম করার পরও মনোনয়ন যুদ্ধ থেকে নাছিরের ছিটকে পড়াকে অবিশ্বাস্যই মনে করছেন তারা।

একইভাবে আলোচনায় না থাকা একজন মনোনয়ন পাওয়ায় অনেকটা হতবাকও তারা। যদিও রেজাউল করিম চৌধুরীর নাম ঘোষণার পর বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও ঘোষণা শিরোধার্য।

তিনি যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এখন তার পক্ষে কাজ করা এবং নির্বাচনে তাকে জয়ী করে আনাই হবে আমার প্রথম ও প্রধান কাজ। একজন মুক্তিযোদ্ধা, যোগ্য ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসেবে রেজাউল করিম চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।’

এদিকে মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরী জীবনের শেষ সময়ে এসে মেয়রের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামবাসী ও চট্টগ্রামের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করব। পথচলায় বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাব।’

রোববার চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন।

‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’ বাস্তবায়নসহ ৩৬ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।

তবে এবার নাছির কেন মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন- এ নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তার অনুসারীরা বলছেন, আ জ ম নাছির উদ্দীন নির্বাচিত হলেও প্রথম তিন বছর সরকার থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ পেয়েছেন নামে মাত্র। উন্নয়ন প্রকল্প আনতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ‘পাঁচ শতাংশ ঘুষ দিতে হয়’- এমন বক্তব্য দেয়ার পর আমলারা ক্ষেপে যান নাছিরের ওপর।

এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্প আনতে গিয়ে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হলেও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে দেয়া হয়নি। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে অপরাজনীতি, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সেবা সংস্থাগুলোকে সমন্বয়ে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।

তাছাড়া সুবিধাবঞ্চিত একটি গ্রুপ আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল। তারাই নজিরবিহীনভাবে খ্যাত-অখ্যাত ১৯ জন প্রার্থীর জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বসেন। অধিকাংশ প্রার্থীর ইচ্ছাটাই ছিল যেন এরকম- ‘আর সবাই মনোনয়ন পেলেও নাছির যেন না পান।’ মূলত এসব কারণে মনোনয়ন যুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়েন আ জ ম নাছির।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে নগর আওয়ামী লীগে এখন নানা মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা তার (মহিউদ্দিন চৌধুরী) ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে রয়েছেন। এমএ লতিফ এমপিকে ঘিরে রয়েছে আরেকটি গ্রুপ। আ জ ম নাছিরকে ঘিরে রয়েছে আলাদা শক্তিশালী গ্রুপ।

সূত্র আরও জানায়, সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরী তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন নেতা।

তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে রাজনীতি করেন এবং তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মাঝপথে অন্যমুখী হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর গ্রুপের সঙ্গে রয়েছেন। এখন রেজাউল করিম চৌধুরীকে ঘিরে নগর আওয়ামী লীগে নতুন মেরুকরণ হতে পারে- এমনটাই ধারণা করছেন অনেকে।

মেয়র নাছিরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুরাদ বিপ্লব বলেন, ‘মেয়র আ জ ম নাছির নগর উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সকাল থেকে রাত অবধি কাজের মধ্যেই ডুবে থেকেছেন। নগরীর অনেক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান।

গ্রিন সিটি ক্লিনি সিটি বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন তিনি। শত প্রতিকূলতা ও বাধাবিপত্তির মধ্যেও তিনি এগিয়ে গেছেন। নগরবাসীর মন জয়ে সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় আমাদের মধ্যে হতাশা আছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষে কাজ করাই হবে আমাদের প্রথম কাজ। যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন তার পক্ষে কাজ করার জন্য আ জ ম নাছির সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।’

ছাত্রলীগে দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া : চট্টগ্রাম সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে।

রোববার দুপুরে আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অনুসারী হিসেবে পরিচিত রবিউল ওয়াহাব কমল বলেন, ‘নওফেল অনুসারীরা নাছির ভাইকে নিয়ে বাজে কমেন্ট করেছে। মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন নেত্রী। সেটা নিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করা হয়েছে।

বহিরাগতদের এনে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন নেতার নামে স্লোগান দেয়া হচ্ছিল। তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। এরপর তারা আমাদের ওপর হামলা করে।’ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী মায়মুন উদ্দিন মামুন বলেন, ‘নাছির গ্রুপের কর্মীরা প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নিয়ে ফেসবুকে আজে-বাজে মন্তব্য করেছে। তারা মিছিল নিয়ে এসেছিল। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ

রপর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একপক্ষ অপর পক্ষের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বাজি ফোটানো হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে সরিয়ে দেয়।’ চকবাজার থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দেয়া নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে আমরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর