হাওর বার্তা ডেস্কঃ নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন মুন্নি। আদরের ধন হারিয়ে বাবা-মা তাকে পাগলপ্রায় হয়ে খুঁজেছেন। শূন্য বুকে হাহাকার তাতে বেড়েছে। খোঁজ মেলেনি মুন্নির।
মুন্নি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মৃত মুনছের আলী ও নাজমা বেগমের মেয়ে। জানা যায়, ১৯৮৬ সালে লালপুর উপজেলার মিলকিপাড়া গ্রামে মায়ের সঙ্গে নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান মুন্নি। অনেক খুঁজেও তার সন্ধান পায়নি পরিবার। একসময় সবাই ধরেই নিয়েছিলেন মুন্নিকে তারা আর কখনও ফিরে পাবেন না। কিন্তু মায়ের মন মানেনি সেকথা। বারবার নিজেকেই যেন প্রবোধ দিয়েছেন- মুন্নি আসবে। একদিন ঠিক ফিরে আসবে। মায়ের কথা সত্য হয়েছে। ছোট্ট মুন্নি এখন অন্যের ঘরণী। দুই সন্তানের মা। স্বামী, সন্তান নিয়েই তিনি ফিরে এসেছেন।
ঘটনাক্রমে মুন্নি হারিয়ে যাওয়ার পর নাটোরের গোপালপুর স্কুলের পাশে নির্জনে তাকে বসে থাকতে দেখেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি মুন্নিকে নিয়ে যান স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে। চেয়ারম্যান মৃত মাহাবুদ্দিন আহম্মেদ পরিচয়হীন মুন্নির দায়িত্ব নেন। নাম পাল্টে রাখেন ‘আছিয়া’। এরপর চেয়ারম্যানের বাড়িতেই বড় হতে থাকেন মুন্নি। একই এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা আমিরুলের সঙ্গে তিনি মুন্নির বিয়ে দেন। মুন্নির ঘরে এখন দুই সন্তান- সাজেদুল ইসলাম সাজু ও রাজীবুল ইসলাম।
কিছুদিন পূর্বে নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে মুন্নির খোঁজ পায় তার পরিবার। চোখের পাতার নিচে তিল, হাতে পোড়া দাগ দেখে তার মা এবং স্বজনেরা মুন্নিকে শনাক্ত করেন। মুন্নি ওরফে আছিয়া বলেন, ‘অনেক বাবা-মা তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান খুঁজতে আমাকে দেখতে আসত। কিন্তু আমি যাদের প্রতীক্ষায় থাকতাম তারা আসত না। আমি বাবা-মায়ের নাম বলতে পারতাম না। এমনকি ঠিকানাও বলতে পারতাম না। ৩৩ বছর পর আল্লাহ আমার কান্না দেখেছেন। তিনি আমার ফরিয়াদ শুনেছেন। আমি আমার পরিবারকে পেয়ে হারিয়ে ফেলা জীবন ফিরে পেয়েছি।’
মুন্নির মা আনন্দঅশ্রু সামলে বলেন, ‘কী বলব, ভাষা খুঁজে পাই না। ওর বাবা বেঁচে থাকলে আরও বেশি খুশি হতো। সে মেয়েকে রাত-দিন খুঁজেছে কিন্তু পায় নাই। আজ যখন মেয়েকে পাওয়া গেল সে নাই।’
মুন্নির স্বামী আমিরুল ইসলাম বলেন, মুন্নি পরিবারের সন্ধান না পেয়ে অনেক কষ্টে ছিল। দীর্ঘদিন পর খুঁজে পেয়ে ওর চোখে মুখে আনন্দ দেখে আমারও ভালো লাগছে। ছেলেরাও নানাবাড়ি এসে মজা করছে।’